২০২৪ সালের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে

২০২৪ সালের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে কৃত্রিম স্নায়ুবিজ্ঞান (Artificial Neural Networks) নিয়ে করা গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার জন্য, যা আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) বিপ্লবকে আরও উন্নত ও কার্যকরী করে তুলেছে। পুরস্কারপ্রাপ্ত দুই বিজ্ঞানী, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ জন হপফিল্ড এবং টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানী জিওফ্রে হিন্টন, তাদের অসামান্য অবদানের জন্য এ সম্মান পেয়েছেন। তাদের গবেষণা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাঠামো এবং মেশিন লার্নিংকে নতুন দিশা দেখিয়েছে, যা আজকের দিনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে, যেমন: ভিডিও নির্মাণ, আর্থিক প্রতারণা রোধ এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে বার্তা পাঠানো।

কৃত্রিম স্নায়ুবিজ্ঞান তৈরি করা হয়েছে জীববিজ্ঞানের স্নায়ুবিজ্ঞানকে মডেল করে। ১৯৪৩ সালে ওয়ারেন ম্যাককালক এবং ওয়াল্টার পিটস একটি মডেল উপস্থাপন করেছিলেন, যেখানে একটি স্নায়ু (neuron) তার প্রতিবেশী স্নায়ুগুলোর কাছ থেকে সংকেত গ্রহণ করে এবং সেই সংকেত প্রক্রিয়া করে নতুন সংকেত প্রেরণ করে। তবে, প্রতিটি স্নায়ু বিভিন্ন প্রতিবেশী থেকে আসা সংকেতের ওজন আলাদা করতে সক্ষম। এর মানে, কিছু সংকেত বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

কৃত্রিম স্নায়ুবিজ্ঞানেও একই ধারণা প্রয়োগ করা হয়। বিভিন্ন স্তরের স্নায়ু সংকেত প্রক্রিয়াজাত করে এবং সিদ্ধান্ত নেয়। এই প্রক্রিয়াটি মেশিন লার্নিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এআই এর ভুল তথ্য সংশোধন করবে মাইক্রোসফটের নতুন “কারেকশন” টুল

জন হপফিল্ডের গবেষণা মূলত রিকারেন্ট নেটওয়ার্কের উপর ভিত্তি করে, যা স্নায়ুদের মধ্যে ফিরে আসা সংকেত নিয়ে কাজ করে। তার গবেষণায় তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে স্নায়ু নেটওয়ার্ক সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয় এবং এটি কিভাবে একটি মেমোরি ফাংশন হিসাবে কাজ করতে পারে। এটি স্নায়ুবিজ্ঞান এবং পদার্থবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। হপফিল্ড তার গবেষণায় পদার্থবিজ্ঞানের চুম্বকত্ব তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে এই নেটওয়ার্কের গতিবিদ্যা ব্যাখ্যা করেছেন।

অন্যদিকে, জিওফ্রে হিন্টন বল্টজমান মেশিন তৈরি করে নতুন এক যুগের সূচনা করেন। তার গবেষণায় দেখানো হয়েছে কিভাবে একটি মেশিন শুধুমাত্র সংকেত সংশোধনই নয়, বরং নতুন সংকেত উৎপন্ন করতে সক্ষম। এই ধারণা আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভিত্তি স্থাপন করেছে, বিশেষ করে জেনারেটিভ এআই-এর ক্ষেত্রে।

হিন্টন এবং তার সহকর্মীরা ১৯৮০-এর দশকে ব্যাকপ্রোপাগেশন অ্যালগরিদম প্রয়োগ করে দেখিয়েছেন কিভাবে একটি কৃত্রিম স্নায়ু নেটওয়ার্ককে প্রশিক্ষণ দেয়া যায়। এটি কৃত্রিম স্নায়ু নেটওয়ার্কের বিভিন্ন স্তরের সংযোগের ওজন পরিবর্তন করে। এটি গভীর শিক্ষার ভিত্তি স্থাপন করেছে। এই প্রযুক্তির সাহায্যে বড় নেটওয়ার্কগুলো প্রশিক্ষিত করা সম্ভব হয়েছে, যা আমাদেরকে আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই উন্নত অবস্থায় নিয়ে এসেছে।

নোবেল পুরস্কার হপফিল্ড এবং হিন্টনের অবদানের স্বীকৃতি দিয়ে দেখিয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি শুধু বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের জন্য নয়, পুরো মানবজাতির কল্যাণের জন্যও একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ তৈরি করতে সক্ষম। এই প্রযুক্তির সাহায্যে স্বাস্থ্যসেবা, জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ এবং অন্যান্য জটিল সমস্যাগুলোর সমাধান সহজতর হবে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিপ্লব এখনো চলমান, এবং এই প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আমরা একটি টেকসই এবং উন্নত বিশ্ব গড়ার পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছি।

আরো পড়ুনঃ চ্যাট জিপিটি (CHATGPT) ব্যাবহার করে ইনকাম করার ১০টি উপায়

Comment

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো