ডিজিআইএসটির রোবোটিক্স ও মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একটি গবেষণা দল সম্প্রতি একটি নতুন ধরনের ‘থ্রিডি স্মার্ট এনার্জি ডিভাইস’ উদ্ভাবন করেছে, যা একইসাথে উষ্ণায়ন ও শীতলকরণের কাজ করতে পারে। এই ডিভাইসটি ভবন ও ইলেকট্রনিক্সের ক্ষেত্রে একটি শক্তি-দক্ষ সমাধান হিসেবে বিশেষভাবে কার্যকর হতে পারে। প্রফেসর বংহুন কিমের নেতৃত্বে এই ডিভাইসটি তৈরি করা হয়েছে, এবং এটি ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়ালস’-এর কভারে প্রকাশিত হয়েছে, যা এর উৎকর্ষ ও প্রাযুক্তিকতার স্বীকৃতি।
এই উদ্ভাবনী ডিভাইসটি তৈরি করতে, প্রফেসর কিমের দল কাজ করেছেন কেএআইএসটি-এর মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর বংজে লি এবং কোরিয়া ইউনিভার্সিটির ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর হিওন লির সাথে। উষ্ণায়ন ও শীতলকরণ গ্লোবাল জ্বালানি ব্যবহারের প্রায় ৫০ শতাংশের জন্য দায়ী, যা গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং বায়ু দূষণের মতো পরিবেশগত সমস্যার সাথে যুক্ত। এই সমস্যার সমাধানে সৌর শোষণ ও বিকিরণ শীতলকরণের ডিভাইসগুলি বর্তমানে ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব পাচ্ছে। যদিও অনেক ধরনের ডিভাইস তৈরি করা হয়েছে, বেশিরভাগ ডিভাইস শুধুমাত্র উষ্ণায়ন বা শীতলকরণের কাজ করে এবং বৃহৎ মাপের সিস্টেমগুলির মধ্যে তাদের কার্যকারিতা সীমিত।
ডুয়াল-ফাংশন সমাধানের বিকাশ এই সীমাবদ্ধতাগুলি মোকাবিলা করতে, প্রফেসর কিমের দল এই ‘থ্রিডি স্মার্ট এনার্জি ডিভাইসটি’ তৈরি করেছেন যা একটি ডিভাইসে উষ্ণায়ন এবং শীতলকরণের উভয় ফাংশন সংযোজন করেছে। ডিভাইসটি একটি বিশেষ পদ্ধতিতে কাজ করে। যখন এর থ্রিডি গঠনটি খোলা হয়, তখন এটি বিকিরণ শীতলকরণ তৈরি করে। আবার যখন গঠনটি বন্ধ থাকে, তখন এটি সৌর তাপ শোষণ করে এবং উষ্ণায়ন তৈরি করে।
আরও পড়ুনঃ ইঞ্জিনিয়ারদের চ্যালেঞ্জ ক্ষুদ্র আকৃতির ড্রোন তৈরিতে
এই ডিভাইসটি বিভিন্ন উপাদানে যেমন ত্বক, কাচ, স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম, তামা এবং পলিইমাইডে পরীক্ষা করা হয়েছে এবং দেখা গেছে যে এর থ্রিডি গঠনের কোণ সমন্বয় করে উষ্ণায়ন ও শীতলকরণের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এর ফলে তাপমাত্রা-নিয়ন্ত্রিত ভবন এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ক্ষেত্রে শক্তি ব্যবহারের পরিমাণ কমানোর জন্য এটি একটি কার্যকরী ও প্রতিশ্রুতিশীল সমাধান হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
শক্তি দক্ষতার দিক থেকে থ্রিডি স্মার্ট এনার্জি ডিভাইসের উপকারিতা থ্রিডি স্মার্ট এনার্জি ডিভাইসটি অন্যান্য প্রচলিত ডিভাইসের তুলনায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা প্রদান করে। প্রথমত, এটি একইসাথে উষ্ণায়ন ও শীতলকরণের কাজ করতে সক্ষম, যা প্রচলিত ডিভাইসগুলির সীমাবদ্ধতা দূর করে। অধিকাংশ ডিভাইস হয় শুধুমাত্র উষ্ণায়নের কাজ করে বা শুধুমাত্র শীতলকরণের কাজ করে, কিন্তু এই ডিভাইসটির উভয় ফাংশন থাকায় এটি বহুমুখীভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। দ্বিতীয়ত, এটি ব্যবহার করা সহজ ও কার্যকরী, কারণ এর কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব শুধু এর গঠনটি খোলার বা বন্ধ করার মাধ্যমে। এই ধরনের উদ্ভাবনী ব্যবস্থা অন্যান্য ডিভাইসের তুলনায় বেশি কার্যকর এবং এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে, যার ফলে এটি শক্তি সাশ্রয়ী হয়। তৃতীয়ত, ডিভাইসটি বিভিন্ন উপাদানে ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন কাচ, তামা, অ্যালুমিনিয়াম এবং পলিইমাইড। এর মানে এটি বিভিন্ন ধরনের পৃষ্ঠে ব্যবহারযোগ্য, যা বহুমুখিতা ও ব্যবহারিকতা বৃদ্ধি করে।
শীতলকরণের জন্য বিকিরণ প্রক্রিয়া এবং সৌর তাপ শোষণের কাজগুলি বাস্তবিকভাবে পরিবেশের ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি ভবন, ইলেকট্রনিক ডিভাইস, এবং শিল্পক্ষেত্রে শক্তি ব্যবহারের পরিমাণ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ভবিষ্যতে যদি এই ডিভাইসটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন ও ব্যবহার করা যায়, তাহলে বৈশ্বিকভাবে শক্তি ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য এটি একটি গেম-চেঞ্জার হতে পারে।
গবেষণার গুরুত্ব এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা প্রফেসর বংহুন কিমের নেতৃত্বে এই গবেষণা দলটি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এই কার্যকরী ডিভাইসটি তৈরি করেছেন যা ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী শক্তি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এই ডিভাইসটি শুধু যে শক্তি ব্যবহারের পরিমাণ কমাবে তা নয়, এটি একই সাথে পরিবেশের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং, বায়ু দূষণ এবং জলবায়ুর পরিবর্তনের মতো পরিবেশগত সমস্যার সমাধানে এটি অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে।
গবেষণা দলের মতে, এই ডিভাইসটি ভবিষ্যতে বিভিন্ন শিল্পে এবং ভবনে ব্যবহৃত হতে পারে, যা বৈশ্বিক শক্তি ব্যবহারের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করবে। গবেষণা দলের প্রধান প্রফেসর বংহুন কিম জানিয়েছেন, “আমাদের গবেষণা এমন একটি ডিভাইস তৈরি করতে সহায়তা করেছে যা ভবিষ্যতে শক্তি সংরক্ষণ এবং পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”
গবেষণা প্রবন্ধে উল্লেখিত হয়েছে যে, এই প্রকল্পটি ‘গ্লোবাল বায়োকনভার্জেন্স ইন্টারফেসিং লিডিং রিসার্চ সেন্টার (ইআরসি)’ এবং ‘ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন অব কোরিয়ার’ ‘ন্যানো এবং ম্যাটেরিয়াল টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট প্রোজেক্ট’ দ্বারা সমর্থিত হয়েছে। এই গবেষণার সাফল্য প্রমাণ করে যে, কোরিয়ার গবেষকরা ভবিষ্যতের শক্তি সাশ্রয়ী ডিভাইস উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
তথ্য সূত্রঃ সাইটেকডেইলি