যে কোনো কোম্পানির উদ্ভাবনী প্রক্রিয়াকে বৃদ্ধি করার ৫টি উপায়

ব্যবসায়িক জগতে উদ্ভাবন শুধুমাত্র প্রযুক্তি জায়ান্ট বা AI স্টার্টআপগুলোর জন্য নয়, বরং এটি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদ্ভাবন ছাড়া যেকোনো প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে। তবে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের প্রক্রিয়া ও সংস্কৃতি পুনর্বিবেচনা করতে দ্বিধা করে, যা উদ্ভাবনকে বাধাগ্রস্ত করে। উদ্ভাবনকে এগিয়ে নিতে একটি নমনীয় এবং ক্ষমতায়িত পরিবেশ প্রয়োজন, যা কর্মচারীদের নতুন ধারণা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার স্বাধীনতা দেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, অনেক প্রতিষ্ঠান এই ধারণায় অস্বস্তি বোধ করে। এজন্য ৫৫% প্রতিষ্ঠান মনে করে যে তারা উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। তবে, যদি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সংগঠন জুড়ে উদ্ভাবনী মানসিকতা সৃষ্টি করতে পারে, তবে তারা বিশাল প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পেতে পারে। এখানে উদ্ভাবন প্রচারের ৫টি কার্যকরী উপায় তুলে ধরা হলো।

১. কৌতূহলকে উৎসাহিত করা

প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা প্রায়ই তাদের দৈনন্দিন কাজ এবং প্রচলিত প্রক্রিয়ার মধ্যে আটকে যায়। উদ্ভাবনের জন্য এই “যথারীতি ব্যবসা” ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করা প্রয়োজন। কর্মচারীদের প্রশ্ন করতে এবং তাদের মতামত শেয়ার করতে উৎসাহিত করা উচিত। এটি প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান প্রক্রিয়াগুলোর উন্নতি ঘটাতে পারে, যেমন গ্রাহকদের অনবোর্ডিং প্রক্রিয়া বা টিমের মধ্যে আরও কার্যকরী সহযোগিতা।

আরও পড়ুনঃ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করবে? এর বিস্তারিত তথ্য

কর্মচারীরা যখন জিজ্ঞাসা করার এবং নতুন কিছু শেখার সুযোগ পান, তখন তাদের চিন্তার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন নতুন সমাধান খুঁজে পেতে পারে। উদ্ভাবনী মানসিকতা তৈরি করতে কর্মীদের কৌতূহলকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

২. সহযোগিতার উপর জোর দেওয়া

উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠানগুলোতে একটি সংস্কৃতি গড়ে ওঠে যেখানে নতুন ধারণাগুলোকে সম্মান করা হয় এবং সেগুলো স্বাধীনভাবে ভাগাভাগি হয়। টিম ও কর্মীরা একসঙ্গে কাজ করলে নতুন সমাধান বের করার সুযোগ তৈরি হয়। একাধিক বিভাগের মধ্যে সহযোগিতামূলক কাজ উদ্ভাবনের অন্যতম প্রধান চাবিকাঠি।

লিঙ্কডইনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা রেইড হফম্যান উল্লেখ করেছেন, “আপনার চিন্তা বা কৌশল যতই উজ্জ্বল হোক না কেন, যদি আপনি এককভাবে খেলা চালিয়ে যান, আপনি সবসময় একটি দলের কাছে হেরে যাবেন।” তাই, প্রতিষ্ঠানগুলোতে দলগত কাজের পরিবেশ তৈরি করা এবং কর্মীদের সহযোগিতায় নতুন সমাধান বের করতে উদ্বুদ্ধ করা অত্যন্ত জরুরি।

৩. কর্মীদের দায়িত্ব প্রদান করা

কর্মীদের যদি পরীক্ষামূলক কাজ করার, সিদ্ধান্ত নেওয়ার এবং তাদের কাজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখার সুযোগ দেওয়া হয়, তবে উদ্ভাবন বৃদ্ধি পায়। তাদের প্রকল্পের মালিকানা দিন এবং বিশ্বাস রাখুন যে তারা সমাধান খুঁজে পাবে, শুধুমাত্র নির্দেশ অনুসরণ করার পরিবর্তে।

উদাহরণস্বরূপ, একটি এজেন্সি তাদের সমস্ত কর্মচারীকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) হেডসেট প্রদান করেছিল, যাতে তারা তাদের কাজের প্রবাহে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারে। এতে কর্মীরা দ্রুত একটি ক্লায়েন্টের ব্র্যান্ড অ্যাক্টিভেশন ইভেন্টের স্থান ৩ডি তে পরিকল্পনা করতে সক্ষম হয়েছিল, যা সময়মতো একটি প্রকল্পের সময়সীমা পূরণে সহায়ক হয়েছিল। এই ধরনের উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা কেবল কর্মীদেরই নয়, পুরো প্রতিষ্ঠানকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে পারে।

৪. শিক্ষায় বিনিয়োগ করা

উদ্ভাবন একটি মানসিকতা, এবং ভিন্নভাবে চিন্তা করতে হলে কর্মীদের নতুন তথ্য ও প্রবণতার সঙ্গে পরিচিত হতে হবে। ৮৮% প্রতিষ্ঠান জানায় যে, কর্মচারীদের দক্ষতার অভাব তাদের উদ্ভাবন প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানের উচিত কর্মচারীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের শিখন ব্যবস্থা তৈরি করা, যেমন- শিল্প সম্মেলনে পাঠানো, অনলাইন কোর্সের জন্য অর্থ প্রদান করা বা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে কর্মশালা আয়োজন করা।

প্রতিষ্ঠানের ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্র অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের কোর্স, সার্টিফিকেশন বা কর্মশালার আয়োজন করা যেতে পারে। তবে মূল বিষয় হলো কর্মীদের সবসময় নতুন কিছু শেখার ও অনুপ্রাণিত থাকার সুযোগ দেওয়া, যাতে তারা উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার সঙ্গে কাজ করতে পারে।

৫. উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনাকে পুরস্কৃত করা

সৃজনশীল চিন্তাভাবনা এবং সমস্যার সমাধানকে স্বীকৃতি ও পুরস্কার প্রদান করা উচিত। কর্মচারীরা যদি দেখতে পান যে তাদের অবদানের মূল্যায়ন করা হচ্ছে, তবে তারা আরও বেশি উদ্যোগী হয়ে সৃজনশীল সমাধান খুঁজে বের করবে। উদাহরণস্বরূপ, জাপোস তাদের কর্মীদের অন্যদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য উত্সাহিত করে এবং নেতৃত্ব প্রতি মাসে শীর্ষ কর্মীকে অস্থায়ী সুবিধা দেয়, যেমন একটি নির্দিষ্ট পার্কিং স্পট। এমনকি, উদ্ভাবনী পুরস্কারের ব্যবস্থা কর্মীদের অনুপ্রাণিত রাখতে সাহায্য করতে পারে।

বাজারে সফল হতে হলে প্রথমে কর্মক্ষেত্রে সফল হতে হবে। এটি উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। একটি প্রতিষ্ঠানে উদ্ভাবনকে পুরোপুরি সমন্বিত করতে পারলেই সে প্রতিষ্ঠান উদ্ভাবনী হিসেবে পরিচিত হবে। আমরা এক নতুন উদ্ভাবনের যুগের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, এবং যে প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদেরকে উন্নত ও পুনর্গঠিত করতে পারবে, তারা এই প্রতিযোগিতায় সবার আগে থাকবে।

তথ্য সূত্রঃ ফাস্টকোম্পানী

Comment

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো