সূর্য কী পদার্থ দিয়ে গঠিত? এবং এর অভ্যন্তরে কী প্রক্রিয়া চলে?

সূর্য আমাদের জীবনে কতটা মূল্যবান সেটা বলার ভাষা রাখেনা। এই  সূর্য ছাড়া পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না।  সূর্য আমাদের জীবনের চিরন্তন প্রেরণা। প্রতিদিন সূর্যের আলো আমাদের জীবনে নতুন করে আশা এনে দেয়। সূর্য না থাকলে পৃথিবী থাকবে অন্ধকারে, আমাদের সবুজ গাছপালা মরে যাবে, আর প্রাণের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সূর্যের তাপ ছাড়া আমাদের গ্রহের তাপমাত্রা এত কমে যাবে যে জীবন ধারণ করা অসম্ভব হয়ে যাবে। সূর্যের উজ্জ্বলতায় আমরা সূর্যের উষ্ণতা ও শক্তির মাধ্যমে আমাদের দিন কাটাই, আমাদের মনোবল জাগিয়ে রাখি। তাই সূর্য আমাদের জীবনের এক অপরিহার্য অংশ, যার অভাব আমাদের সবকিছু বদলে দিতে পারে। সূর্য ছাড়া জীবন কেমন হবে, তা কল্পনাও করা কঠিন। এই সূর্য নিয়ে আজ বিস্তারিত আলোচনা করা হবে:

সূর্য কী পদার্থ দিয়ে গঠিত?

সূর্য হাইড্রোজেন (প্রায় ৭৪%) এবং হিলিয়াম (প্রায় ২৪%) দিয়ে গঠিত। বাকি ২% অন্যান্য ভারী উপাদান যেমন কার্বন, অক্সিজেন, নিওন, এবং লোহা ইত্যাদি রয়েছে। সূর্যের ভর এবং আকার এত বিশাল যে এর কেন্দ্রে প্রচণ্ড চাপ এবং তাপমাত্রা সৃষ্টি হয়, যার ফলে তাপ-নিউক্লিয়ার প্রক্রিয়া (nuclear fusion) সংঘটিত হয়। সূর্যের গঠণ নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

কেন্দ্র (Core): সূর্যের কেন্দ্র বা কোর হল এর শক্তির মূল উৎস। এখানে তাপমাত্রা প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং চাপ অত্যন্ত বেশি। এই পরিবেশে হাইড্রোজেন পরমাণু একত্রিত হয়ে হিলিয়াম পরমাণুতে রূপান্তরিত হয়। এই প্রক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণে শক্তি উৎপন্ন হয়।

বিকিরণ স্তর (Radiative Zone): সূর্যের কোর থেকে উৎপন্ন শক্তি বিকিরণ স্তর দিয়ে বাইরে যেতে থাকে। এই স্তরে, শক্তি ফোটন আকারে বিকিরণ হয় এবং এটি কোর থেকে বাইরে আসতে লক্ষ লক্ষ বছর সময় নিতে পারে।

সংবহন স্তর (Convective Zone): বিকিরণ স্তরের উপরের স্তর হলো সংবহন স্তর। এখানে গরম গ্যাস উপরের দিকে উঠে এবং ঠান্ডা গ্যাস নিচের দিকে নামে, ফলে শক্তি সংবহন প্রক্রিয়ায় বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। এই স্তরে ফোটন বাইরে যাওয়ার সময় এক ধরনের সংবহন স্রোতের সৃষ্টি হয়।

ফটোস্ফিয়ার (Photosphere): এটি সূর্যের দৃশ্যমান পৃষ্ঠ, যেখানে সূর্যের আলো প্রথমবারের মতো মহাকাশে বের হয়। ফটোস্ফিয়ারের তাপমাত্রা প্রায় ৫,৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ক্রোমোস্ফিয়ার (Chromosphere): ফটোস্ফিয়ারের উপরের স্তর হলো ক্রোমোস্ফিয়ার। এটি সূর্যের একটি পাতলা স্তর যেখানে তাপমাত্রা প্রায় ২০,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সূর্যগ্রহণের সময় এই স্তরটি রেডিয়াল আকারে দেখতে পাওয়া যায়।

করোনা (Corona): সূর্যের সবচেয়ে বাইরের স্তর হলো করোনা। এটি খুব গরম এবং সূর্যের উপরে একটি হালো বা মুকুটের মতো দেখতে লাগে। করোনা থেকে প্রচুর শক্তিশালী সোলার উইন্ড নির্গত হয়।

 

সূর্যের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া

সূর্য কী পদার্থ দিয়ে গঠিত
Image Credit: Pixabay

সূর্যের কেন্দ্রে প্রধানত তাপ-নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রক্রিয়া চলে। এই প্রক্রিয়ায় হাইড্রোজেন পরমাণুগুলি একত্রিত হয়ে হিলিয়াম পরমাণুতে পরিণত হয় এবং প্রচুর পরিমাণে শক্তি উৎপন্ন হয়। নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রক্রিয়াটি দুইটি হাইড্রোজেন পরমাণুর নিউক্লিয়াস একত্রিত হয়ে একটি হিলিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয়াস তৈরি করে। এই প্রক্রিয়ায় প্রচুর শক্তি মুক্তি পায়, যা ফোটন আকারে নির্গত হয়। নিউক্লিয়ার ফিউশন থেকে উৎপন্ন শক্তি প্রথমে ফোটনের আকারে বিকিরণ স্তর দিয়ে সংবহন স্তরে আসে। এখানে সংবহন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা সূর্যের পৃষ্ঠে পৌঁছায় এবং তারপর আলোক এবং তাপ হিসাবে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে।

এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সূর্য থেকে যে শক্তি নির্গত হয়, তা আমাদের পৃথিবীতে আলো এবং তাপ আকারে পৌঁছে। এই প্রক্রিয়াটি সূর্যকে দীর্ঘ সময় ধরে স্থিতিশীল রাখে এবং এটি যতদিন হাইড্রোজেন ব্যবহার করতে পারবে, ততদিন সূর্য এইভাবে আলো ও তাপ প্রদান করতে থাকবে। সূর্যের জীবনচক্রে, নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রক্রিয়া চলতে থাকবে যতদিন না সূর্যের কেন্দ্রের হাইড্রোজেন ফুরিয়ে যায়। এর পরে সূর্য রেড জায়ান্টে রূপান্তরিত হবে এবং শেষ পর্যন্ত একটি সাদা বামনে পরিণত হবে। এইভাবে, সূর্য আমাদের সৌরজগতের মূল শক্তির উৎস এবং এর অভ্যন্তরে নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রক্রিয়া এটি কার্যকরী রাখছে।

 

নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রক্রিয়া কীভাবে কাজ করে?

সূর্যের কেন্দ্রে তাপমাত্রা প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং প্রচণ্ড চাপ থাকে। এই উচ্চ তাপমাত্রা এবং চাপের কারণে হাইড্রোজেন পরমাণুগুলোর নিউক্লিয়াস (প্রোটন) একে অপরের কাছে আসতে পারে, যদিও সাধারণ অবস্থায় প্রোটনগুলো একে অপরকে বিকর্ষণ করে। প্রোটন চক্র (Proton Chain Reaction): সূর্যের কেন্দ্রে হাইড্রোজেন পরমাণুগুলো একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং তাদের নিউক্লিয়াসগুলো মিশে যায়। এটি একটি তিন ধাপের প্রক্রিয়া:

  • প্রথম ধাপে: দুটি প্রোটন মিলে একটি ডিউটেরিয়াম নিউক্লিয়াস তৈরি করে। এই প্রক্রিয়ায় একটি পজিট্রন এবং একটি নিউট্রিনো মুক্তি পায়।
  • দ্বিতীয় ধাপে: ডিউটেরিয়াম নিউক্লিয়াসের সাথে একটি প্রোটন মিলে হিলিয়াম-৩ নিউক্লিয়াস তৈরি করে। এতে গামা রশ্মি (gamma rays) উৎপন্ন হয়।
  • তৃতীয় ধাপে: দুটি হিলিয়াম-৩ নিউক্লিয়াস একত্রিত হয়ে হিলিয়াম-৪ নিউক্লিয়াস তৈরি করে এবং দুইটি প্রোটন মুক্তি পায়।

শক্তির উৎপত্তি: নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রক্রিয়ায় হাইড্রোজেন পরমাণু হিলিয়ামে রূপান্তরিত হওয়ার সময় কিছু ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। আইনস্টাইনের বিখ্যাত সমীকরণ E=mc2E = mc^2E=mc2 অনুসারে, যেখানে mmm হলো ভরের ক্ষতি এবং ccc হলো আলোর গতি, সেই অনুযায়ী শক্তি উৎপন্ন হয়। এই শক্তি তাপ এবং আলোর আকারে বের হয়।

শক্তির পরিবহন: সূর্যের কেন্দ্রে উৎপন্ন এই বিপুল শক্তি প্রথমে বিকিরণ স্তরে (Radiative Zone) পৌঁছে, যেখানে ফোটন আকারে শক্তি বহির্গত হয়। এই ফোটনগুলো বারবার বিভিন্ন কণার সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, যার ফলে তাদের সূর্যের পৃষ্ঠে পৌঁছাতে লক্ষ লক্ষ বছর সময় লাগে। এরপর সংবহন স্তরে (Convective Zone) শক্তি পৌঁছায়, যেখানে গরম গ্যাসের প্রবাহের মাধ্যমে তাপ সূর্যের পৃষ্ঠে আসে এবং তারপর মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে।

আলো এবং তাপের নির্গমন: সূর্যের পৃষ্ঠে (Photosphere) এই শক্তি আলোর এবং তাপের আকারে নির্গত হয়। সূর্যের আলো মূলত দৃশ্যমান আলো, এবং সেই সঙ্গে অতিবেগুনি (ultraviolet) এবং ইনফ্রারেড (infrared) রশ্মিও থাকে। সূর্য থেকে নির্গত তাপ মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে এবং পৃথিবীতে পৌঁছে জীবনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে।

 

কেন সূর্য এত স্থিতিশীলভাবে তাপ ও আলো উৎপন্ন করে?

সূর্যের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য রক্ষা করে নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রক্রিয়া। কেন্দ্রের উচ্চ চাপ এবং তাপমাত্রা হাইড্রোজেনের ফিউশনকে সম্ভব করে তোলে, আর এই ফিউশন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন শক্তি বাইরের দিকে চাপ তৈরি করে, যা সূর্যের অভ্যন্তরীণ অভিকর্ষ শক্তির সাথে ভারসাম্য রক্ষা করে। এর ফলে সূর্য দীর্ঘ সময় ধরে স্থিতিশীল থাকে এবং ধারাবাহিকভাবে তাপ ও আলো প্রদান করতে সক্ষম হয়। এইভাবে, সূর্য তার কেন্দ্রে নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ তাপ ও আলো উৎপন্ন করে, যা পৃথিবীতে জীবনের জন্য অপরিহার্য।

 

সূর্য কতদিন ধরে এইভাবে আলো ও তাপ দিয়ে যাবে, এবং এর পরে কী ঘটবে?

সূর্য প্রায় ১০ বিলিয়ন বছর ধরে আলো ও তাপ উৎপন্ন করতে সক্ষম। বর্তমানে এটি প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর বয়সী, অর্থাৎ আরও প্রায় ৫ বিলিয়ন বছর এভাবে স্থিতিশীল থাকবে। এর পরে, সূর্যের কেন্দ্রের হাইড্রোজেন শেষ হয়ে যাবে, এবং এটি একটি রেড জায়ান্টে পরিণত হবে। রেড জায়ান্ট পর্যায়ে পৌঁছে সূর্য তার বহিরাবরণ প্রসারিত করবে এবং সম্ভবত পৃথিবী পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। এরপর, এটি হিলিয়াম ফিউশন শুরু করবে এবং শেষে তার বহিরাবরণ ছড়িয়ে দিয়ে একটি সাদা বামনে (White Dwarf) পরিণত হবে। সাদা বামন হিসাবে সূর্য তার জীবনের শেষ পর্যায়ে প্রবেশ করবে, যখন এটি ধীরে ধীরে ঠান্ডা এবং অন্ধকার হয়ে যাবে।

 

সূর্যের আলো, তাপ, এবং সোলার ফ্লেয়ার (solar flare) আমাদের পৃথিবী এবং জীবনের উপর কী প্রভাব ফেলে?

সূর্যের আলো ও তাপ পৃথিবীতে জীবনকে টিকিয়ে রাখে, উদ্ভিদের জন্য ফটোসিন্থেসিস সম্ভব করে এবং আবহাওয়া গঠনে ভূমিকা রাখে। সোলার ফ্লেয়ারগুলি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে বৈদ্যুতিক ঝড় তৈরি করে, যা স্যাটেলাইট, যোগাযোগ ব্যবস্থা, এবং বিদ্যুৎ গ্রিডের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। সোলার ফ্লেয়ার হলো সূর্যের পৃষ্ঠে হঠাৎ বিস্ফোরণ, যা তীব্র শক্তি নির্গত করে। এটি পৃথিবীর ম্যাগনেটোস্ফিয়ারে তড়িৎচৌম্বকীয় ঝড় সৃষ্টি করতে পারে। সোলার ফ্লেয়ারগুলি স্যাটেলাইট, রেডিও যোগাযোগ, এবং জিপিএস সিস্টেমে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। শক্তিশালী সোলার ফ্লেয়ার বিদ্যুৎ গ্রিডের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, যা ব্যাপকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত করতে পারে। সূর্যের আলো এবং তাপ জীবনের জন্য অপরিহার্য, তবে সোলার ফ্লেয়ারগুলি প্রযুক্তিগত অবকাঠামো এবং মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। মহাকাশচারীদের জন্য সোলার ফ্লেয়ারগুলি বিশেষভাবে বিপজ্জনক, কারণ মহাকাশে এর বিকিরণ থেকে সুরক্ষা পাওয়া কঠিন। এই প্রভাবগুলো একসঙ্গে পৃথিবীর পরিবেশ, প্রযুক্তি এবং জীবনের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

 

সূর্য থেকে পৃথিবী কত দূরে এবং এই দূরত্ব পরিবর্তিত হয় কিনা?

সূর্য থেকে পৃথিবী গড়ে প্রায় ৯৩ মিলিয়ন মাইল (প্রায় ১৫০ মিলিয়ন কিলোমিটার) দূরে অবস্থিত। এই দূরত্বকে ১ অ্যাস্ট্রোনোমিকাল ইউনিট (AU) বলা হয়। তবে, পৃথিবীর কক্ষপথ পুরোপুরি বৃত্তাকার নয়, এটি কিছুটা উপবৃত্তাকার (elliptical)। ফলে সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব বছরে বিভিন্ন সময়ে সামান্য পরিবর্তিত হয়।

পৃথিবী যখন সূর্যের সবচেয়ে কাছে আসে, তখন তাকে পেরিহেলিয়ন (Perihelion) বলে, যা জানুয়ারির প্রথম দিকে ঘটে এবং তখন দূরত্ব প্রায় ৯১.৪ মিলিয়ন মাইল (১৪৭ মিলিয়ন কিলোমিটার) হয়। অন্যদিকে, যখন পৃথিবী সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরে থাকে, তখন তাকে অ্যাফেলিয়ন (Aphelion) বলে, যা জুলাই মাসে ঘটে, এবং তখন দূরত্ব প্রায় ৯৪.৫ মিলিয়ন মাইল (১৫২ মিলিয়ন কিলোমিটার) হয়।এই সামান্য পরিবর্তন পৃথিবীর তাপমাত্রার ওপর তেমন উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে না।

 

সূর্য নিজ অক্ষের চারপাশে কেমন করে ঘোরে এবং এর সময়কাল কী?

সূর্য নিজ অক্ষের চারপাশে ঘোরে একটি ঘূর্ণন আন্দোলনের মাধ্যমে। সূর্যের ঘূর্ণন প্রক্রিয়া এক ধরনের জটিল গতির অভ্যন্তরীণ ভারসাম্যের অংশ, এবং এটি সূর্যের অক্ষীয় ঘূর্ণন হিসাবে পরিচিত।

অক্ষীয় ঘূর্ণন: সূর্যের অক্ষীয় ঘূর্ণন এক অক্ষের চারপাশে ঘূর্ণন, যা সূর্যের উত্তর মেরু এবং দক্ষিণ মেরুর মধ্য দিয়ে যায়। এই ঘূর্ণন সূর্যের বিভিন্ন অংশের জন্য আলাদা হতে পারে, কারণ সূর্যের ভিতরকার বিভিন্ন স্তরের ঘূর্ণন ভিন্ন হতে পারে।

সময়কাল: সূর্যের ঘূর্ণন সময়কাল বা একটি পূর্ণ রোটেশন সম্পন্ন করতে সময় লাগে প্রায় ২৫ থেকে ৩৫ দিন। সূর্যের প্রবাহে বিভিন্ন অংশে এই সময়কাল পরিবর্তিত হয়। সূর্যের মেরু অঞ্চলে ঘূর্ণনের সময়কাল প্রায় ৩৫ দিন, কিন্তু সার্ভিক্যাল অঞ্চল বা সূর্যের কেন্দ্রীয় অঞ্চল বরাবর সময়কাল প্রায় ২৫ দিন।

পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘূর্ণন:  সূর্য পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘূর্ণন করে, যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রদর্শিত সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের অভ্যন্তরীণ ভিত্তি।

ঘূর্ণন ভারসাম্য: সূর্যের অক্ষীয় ঘূর্ণন তার অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপ এবং চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। সূর্যের চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের উলম্ব ঘূর্ণন প্রবাহ এর চক্রবৃদ্ধি এবং সূর্যের দাগ এবং সোলার ফ্লেয়ারগুলির সাথে সম্পর্কিত।

ঘূর্ণনের প্রভাব: সূর্যের ঘূর্ণন তার চৌম্বকীয় ক্ষেত্র, সূর্য spots, এবং অন্যান্য সূর্যের বৈশিষ্ট্যগুলির ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। এই ঘূর্ণন তার শক্তি এবং আলোর নির্গমনের মাত্রা সমন্বিত করে এবং সূর্যের মহাকাশের অবস্থান নির্ধারণে ভূমিকা রাখে।

সার্বিকভাবে, সূর্যের অক্ষীয় ঘূর্ণন এর অভ্যন্তরীণ গতিবিধি এবং মহাকাশের অন্যান্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

 

উপসংহার

সূর্য আমাদের সৌরজগতের প্রাণকেন্দ্র, যা প্রধানত হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম দিয়ে গঠিত। এর কেন্দ্রে নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ তাপ ও আলো উৎপন্ন হয়, যা পৃথিবী সহ অন্যান্য গ্রহগুলির জীবনের জন্য অপরিহার্য। সূর্যের আলো এবং তাপ পৃথিবীতে আবহাওয়া, জলবায়ু এবং জীবনধারার মৌলিক উপাদান হিসেবে কাজ করে। সূর্যের গঠন ও কার্যকলাপের মাধ্যমে আমরা এর বিভিন্ন স্তরের সম্পর্কে জানতে পারি, যেমন কোর, বিকিরণ স্তর, সংবহন স্তর, ফটোস্ফিয়ার, ক্রোমোস্ফিয়ার এবং করোনা। সূর্যের ঘূর্ণন এর অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম এবং চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত, যা সূর্যের দাগ, সোলার ফ্লেয়ার এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্যকে প্রভাবিত করে। সূর্য প্রতি বছর তার কক্ষপথে পরিবর্তিত দূরত্বের কারণে কিছুটা পরিবর্তিত অবস্থায় থাকে, কিন্তু এটি স্থিতিশীলভাবে ১০ বিলিয়ন বছরেরও বেশি সময় ধরে আলো ও তাপ প্রদান করবে। এর পরবর্তী পর্যায়ে সূর্য রেড জায়ান্টে পরিণত হবে এবং শেষে একটি সাদা বামনে পরিণত হবে। সবশেষে, সূর্যের ভূমিকা শুধুমাত্র পৃথিবীর জীবনের জন্য নয়, বরং পুরো সৌরজগতের জন্য অপরিহার্য। সূর্যের শক্তি আমাদের আবহাওয়া, জলবায়ু, প্রযুক্তি এবং জীবনের মৌলিক মৌলিকতা বজায় রাখতে সহায়ক।

 

আপনার জন্য আরো নিবন্ধ : স্টারলিংক ইন্টারনেট কি? স্টারলিংক ইন্টারনেট বাংলাদেশে কখন আসবে?

Comment

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো