নিউরালিংক, ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠিত ব্রেন–কম্পিউটার ইন্টারফেস কোম্পানি, সম্প্রতি তাদের ব্লাইন্ডসাইট ইমপ্ল্যান্ট এর মাধ্যমে প্রযুক্তি জগতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই ইমপ্ল্যান্টের লক্ষ্য হচ্ছে দৃষ্টিহীন ব্যক্তিদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা। এমনকি যাদের চোখের নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা নেই, তারাও এই প্রযুক্তির মাধ্যমে দেখতে সক্ষম হতে পারে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে FDA (Food and Drug Administration) থেকে “ব্রেকথ্রু ডিভাইস” হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর এই প্রযুক্তি আলোচনার শীর্ষে উঠে এসেছে।
ব্লাইন্ডসাইট ইমপ্ল্যান্ট
সম্পর্কিত প্রবন্ধ:
- ১। গুগল বাজারে নিয়ে এসেছে তাদের নতুন AI ফোন গুগল পিক্সেল ৯ (Pixel 9)
- ২। ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে পিতৃপরিচয় কিভাবে নিশ্চিত করা যায়?
- ৩। বাজারে এসেছে অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ১০, নতুন চমক থাকছে এই সিরিজে
- ৪।স্যামসাং নিয়ে এসেছে তাদের নতুন AI স্মার্ট মনিটর M8 (M80D) 4K UHD
“Blindsight” ইমপ্ল্যান্ট মূলত মস্তিষ্কের ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সের সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করে। এটি মস্তিষ্ককে এমন সংকেত পাঠায় যা একজন ব্যবহারকারীকে ডিজিটাল ইন্টারফেসের মাধ্যমে বিভিন্ন চিত্র দেখতে সক্ষম করে। মূল লক্ষ্য হল, এমন ব্যক্তিদের দৃষ্টিশক্তি পুনরুদ্ধার করা যাদের দৃষ্টি হারিয়ে গেছে বা চোখের নার্ভ পুরোপুরি কাজ করছে না।
নিউরালিংকের এই ইমপ্ল্যান্ট মূলত ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সের সাথে সংযোগ স্থাপন করে, যা মস্তিষ্কে চিত্রের সংকেত প্রেরণ করে। এলন মাস্কের মতে, প্রাথমিকভাবে এই ভিজ্যুয়াল আউটপুটটি অ্যাটারি গ্রাফিক্সের মতো কম রেজোলিউশনের হবে, তবে সময়ের সাথে এটি উন্নত হয়ে প্রাকৃতিক দৃষ্টিশক্তির চেয়ে উন্নত হতে পারে। এমনকি ভবিষ্যতে এটি ইনফ্রারেড বা আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি পর্যন্ত দেখতে সাহায্য করতে পারে।
এই প্রযুক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এটি দৃষ্টিহীন ব্যক্তিদের জন্য একটি নতুন জীবনধারা উপহার দিতে পারে। যাদের দৃষ্টি পুরোপুরি হারিয়ে গেছে বা জন্মগতভাবে অন্ধ, তারাও এই প্রযুক্তির মাধ্যমে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেতে পারেন। এলন মাস্ক এই প্রযুক্তিকে ভবিষ্যতের জন্য একটি রূপান্তরকারী প্রযুক্তি হিসেবে অভিহিত করেছেন, যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে।
এই ইমপ্ল্যান্টের মাধ্যমে কৃত্রিম দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় চিকিৎসা ক্ষেত্রে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। এমনকি ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অন্ধ ব্যক্তিরা সাধারণ মানুষের চেয়ে উন্নতভাবে দেখতে সক্ষম হতে পারে, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক বড় ধরনের অগ্রগতি ।
নিউরালিংক ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই ব্রেন–কম্পিউটার ইন্টারফেস নিয়ে কাজ করছে। তাদের আগের “দ্য লিঙ্ক” ইমপ্ল্যান্ট ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে একজন কোয়াড্রিপ্লেজিক (পুরো শরীর পক্ষাঘাতগ্রস্ত) রোগীর ওপর সফল ইমপ্ল্যান্ট করা হয়। এই ইমপ্ল্যান্টের মাধ্যমে তিনি শুধুমাত্র নিজের মস্তিষ্কের সাহায্যে ভিডিও গেম খেলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছেন।
এছাড়া নিউরালিংক তাদের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে নানান ধরনের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে মানুষের মস্তিষ্ক এবং প্রযুক্তির মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে মানুষের মস্তিষ্ক এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মধ্যে সংযোগ তৈরি করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
নিউরালিংকের এই উদ্যোগ শুধুমাত্র দৃষ্টিহীন ব্যক্তিদের জন্যই নয়, এটি ভবিষ্যতে অন্যান্য ধরনের শারীরিক প্রতিবন্ধকতাও দূর করতে সক্ষম হতে পারে। এলন মাস্কের লক্ষ্য হচ্ছে, ভবিষ্যতে মানুষ শুধুমাত্র মস্তিষ্কের মাধ্যমে যেকোনো প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। এমনকি নিউরালিংকের এই ব্রেন–কম্পিউটার ইন্টারফেসের মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতাও বাড়ানো সম্ভব হবে।
বর্তমানের “Blindsight” ইমপ্ল্যান্ট শুধু দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলেও ভবিষ্যতে এটি অন্যান্য অনেক ধরনের শারীরিক সমস্যারও সমাধান দিতে পারে। নিউরালিংক ইতিমধ্যে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা–নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে স্মৃতিশক্তি বাড়ানো, মানসিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণ, এবং অন্যান্য স্নায়ুবিজ্ঞানের জটিল সমস্যা সমাধান করা।
যদিও “Blindsight” ইমপ্ল্যান্টের সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল, কিন্তু এর সফলতা এখনও পুরোপুরি নির্ভর করছে এর কার্যকারিতার ওপর। প্রাথমিকভাবে এই ইমপ্ল্যান্টে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যেমন প্রথমদিকে নিম্ন রেজোলিউশনের ছবি দেখা এবং এর স্থায়িত্বের সমস্যা। কিন্তু নিউরালিংক ইতোমধ্যে এই প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এটি আরও কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এছাড়া, এই প্রযুক্তির খরচ এবং সকলের জন্য সহজলভ্যতা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। নিউরালিংকের মূল উদ্দেশ্য হল, এই প্রযুক্তি সকলের জন্য সহজলভ্য করা, কিন্তু এর উন্নতমানের প্রযুক্তি এবং গবেষণার খরচের কারণে এটি সাধারণ মানুষের জন্য কতটা সহজলভ্য হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
নিউরালিংকের “Blindsight” ইমপ্ল্যান্ট প্রযুক্তি জগতে এক যুগান্তকারী উদ্ভাবন। এটি দৃষ্টিহীনদের জন্য দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনার এক নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। যদিও এই প্রযুক্তির কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবে ভবিষ্যতে এটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে। নিউরালিংক ইতোমধ্যে ব্রেন–কম্পিউটার ইন্টারফেসের বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করছে, যা ভবিষ্যতে আরও অনেক সমস্যার সমাধান দিতে সক্ষম হবে এই প্রতিষ্ঠানটি।