আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে “অগ্নিকন্যা” হিসেবে পরিচিত বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ বেগম মতিয়া চৌধুরী আজ বুধবার রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছু দিন ধরে অসুস্থ থাকা মতিয়া চৌধুরীকে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ার পর সকালে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়, যেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর সাড়ে ১২টায় তার মৃত্যু হয়।
মতিয়া চৌধুরীর রাজনৈতিক জীবন ও সংগ্রাম
মতিয়া চৌধুরী জন্ম ১৯৪২ সালের ৩০ জুন, পিরোজপুর জেলার নাজিরপুরে। তার বাবা ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন এবং ১৯৬৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬০-এর দশকে পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন শুরু হয়, তাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন মতিয়া চৌধুরী। আইয়ুব শাসনের সময় চারবার তাকে কারাবরণ করতে হয়। সেই সময়ের গণআন্দোলনে তার অগ্নিঝরা বক্তৃতার জন্য তিনি “অগ্নিকন্যা” হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা আন্দোলনে তিনি জোরালো ভূমিকা রাখেন। এছাড়া, মুক্তিযুদ্ধের সময় ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনী গঠনে তিনি একজন সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন।
আরও পড়ুনঃ রতন টাটার প্রতি বিল গেটসের শ্রদ্ধা
আওয়ামী লীগে যোগদান এবং মন্ত্রিত্ব
স্বাধীনতার পর ১৯৭৯ সালে মতিয়া চৌধুরী আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং ১৯৮৬ সালে দলের কৃষিবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এরপর থেকে তিনি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি সামরিক সরকারের আমলেও বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হয়েছেন এবং কারাবরণ করেছেন।
মতিয়া চৌধুরী ১৯৯৬, ২০০৯ এবং ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বে দেশের কৃষি খাতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়, যা বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ২০১৩ সালে তাকে সংসদ উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এছাড়া তিনি ২০২১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি থেকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ পান।
ব্যক্তিগত জীবন ও সাদামাটা জীবনযাপন
মতিয়া চৌধুরীর ব্যক্তিগত জীবনও ছিল তেমনই সরল। তিনি তার সহকর্মীদের কাছে সবসময় সাধারণ বেশভূষা এবং সাদামাটা জীবনযাপনের জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি সাংবাদিক বজলুর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ১৯৬৪ সালে।
তার রাজনৈতিক সহকর্মীরা এবং সমর্থকরা সবসময়ই তার অগ্নিঝরা বক্তৃতা এবং রাজপথে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য তাকে সম্মান জানিয়ে আসছেন। মতিয়া চৌধুরীর লেখা “দেয়াল দিয়ে ঘেরা” নামক বইটি তার জেল জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা, যেখানে তিনি তার রাজনৈতিক জীবনের সংগ্রাম তুলে ধরেছেন।
মৃত্যুর সংবাদ
দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর আজ দুপুরে তার মৃত্যু সংবাদ দেশে ও রাজনীতির অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রাজনীতিতে মতিয়া চৌধুরী এক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং তার মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি করেছে। তার রাজনৈতিক ও সামাজিক অবদান নতুন প্রজন্মের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।
ময়মনসিংহে ভিমরুলের কামড়ে একই পরিবারের বাবা, মেয়ে ও ছেলে তিনজনের মৃত্যু