মানব সভ্যতা চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহে অভিযানের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে যাচ্ছে। এই নতুন মিশনে বড় ধরনের একটি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে নাসা। চাঁদে বা মহাকাশে দীর্ঘ মেয়াদে অবস্থান করার সময় তৈরি হওয়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে এই সমস্যা। আর এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে নাসা সম্প্রতি একটি নতুন প্রতিযোগিতা ঘোষণা করেছে যেখানে ৩ মিলিয়ন ডলার পুরস্কারের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
চাঁদে মানবজাতির প্রথম অভিযানটি ঘটে অ্যাপোলো মিশনের মাধ্যমে। সেই সময় থেকেই চাঁদে কিছু বর্জ্য রেখে আসা হয়েছে, যার মধ্যে আছে মানুষের মলমূত্রের ব্যাগ। অ্যাপোলো মিশনে যাওয়া নভোচারীরা তাদের প্রস্রাব ট্যাংকে সংগ্রহ করতেন, আর যারা মলত্যাগ করতেন, তাদের পায়ুপথে ব্যাগ পরিয়ে রাখা হতো। সেই ব্যাগগুলো মহাকাশযানের ওজন কমানোর জন্য চাঁদের মাটিতে ফেলে রাখা হয়েছিল। তবে কেবল মলমূত্র নয়, অন্যান্য বর্জ্য যেমন বিজ্ঞান যন্ত্রপাতি, খাদ্য প্যাকেজিং, পরিত্যক্ত পোশাকের মতো অনেক জিনিসই তৈরি হয়। চাঁদে পুনরায় মানুষের উপস্থিতি বাড়লে এই বর্জ্যগুলো আরও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।
আরও পড়ুনঃ নাসা তাদের অন্যতম প্রধান মিশন ‘EUROPA CLIPPER’ কে মহাকাশে প্রেরণ করেছে
নাসা দীর্ঘ মেয়াদে চাঁদে থাকার পরিকল্পনা করছে, যেমন আর্টেমিস মিশন। এই মিশনের লক্ষ্য হচ্ছে চাঁদে স্থায়ীভাবে মানুষের বসবাস ব্যবস্থা তৈরি করা। চাঁদে দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করলে খাবারের প্যাকেট, ব্যবহার করা বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, পোশাক ইত্যাদি বর্জ্য অনেক পরিমাণে তৈরি হবে। কিন্তু চাঁদ থেকে পৃথিবীতে ফিরে আসার সময় এসব বর্জ্য সঙ্গে করে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তাই এই বর্জ্যগুলো কীভাবে পুনঃব্যবহারযোগ্য করা যায়, তার জন্য নতুন প্রযুক্তি দরকার।
নাসার লুনা রিসাইকেল চ্যালেঞ্জ এর মূল লক্ষ্য হলো, এসব বর্জ্যকে পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করে নতুন পণ্য তৈরি করার উপায় খুঁজে বের করা। এভাবে শুধু চাঁদে অবস্থানকালীন সময়ের জন্য বর্জ্য সমস্যার সমাধান হবে না, বরং পৃথিবীরও বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হতে পারে।
নাসার প্রাইজেস, চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড ক্রাউডসোর্সিং প্রোগ্রামের প্রোগ্রাম এক্সিকিউটিভ অ্যামি কামিনস্কি বলেন, “বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমরা নতুন সমাধান খুঁজছি, যা শুধুমাত্র মহাকাশে নয়, পৃথিবীতেও কাজে লাগবে।“
নাসা এই প্রতিযোগিতাটি দুটি অংশে ভাগ করেছে। প্রথমটি হলো ‘প্রোটোটাইপ বিল্ড ট্র্যাক’, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা চাঁদের মাটিতে বর্জ্য পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করার জন্য হার্ডওয়্যার ডিজাইন ও ডেভেলপ করবেন। দ্বিতীয়টি হলো ‘ডিজিটাল টুইন ট্র্যাক’, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা সম্পূর্ণ সিস্টেমের ভার্চুয়াল রেপ্লিকা তৈরি করবেন, যা চাঁদের মাটিতে বর্জ্য পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করতে ব্যবহার করা যাবে। প্রতিযোগীরা এক বা উভয় ট্র্যাকে অংশ নিতে পারবেন, এবং মোট পুরস্কারের অর্থ ভাগ করে দেওয়া হবে।
নাসা শুধুমাত্র চাঁদ বা মহাকাশে নয়, পৃথিবীতেও টেকসই সমাধান চাচ্ছে। লুনা রিসাইকেল চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবনের আশা করা হচ্ছে, যা পরবর্তীতে পৃথিবীতে বিভিন্ন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কাজে লাগবে। চাঁদে থাকা বর্জ্যগুলো থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা পৃথিবীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
এই প্রতিযোগিতার চ্যালেঞ্জ ম্যানেজার কিম ক্রোম বলেন, “আমরা অত্যন্ত আগ্রহের সাথে দেখতে চাই কী ধরণের সমাধান বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগীরা প্রস্তাব করে।“
নাসার এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে মানবজাতির টেকসই মহাকাশ অভিযানের পথ প্রশস্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মহাকাশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে মানুষ পৃথিবীতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করার লিংক।