টোকিওর বিজ্ঞানীরা নতুন একটি প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন যা বাতাসের সাধারণ দূষণকারী (যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড) পরিবর্তন করে জ্বালানিতে পরিণত করতে সক্ষম। এই প্রযুক্তি গ্রিন ফুয়েল উৎপাদনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি টেকসই সমাধান হিসেবে বিবেচিত হবে। পৃথিবীর জলবায়ুর অবস্থা যেভাবে খারাপ হচ্ছে এবং কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ যেভাবে বেড়ে চলেছে, এই ধরনের উদ্ভাবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
টোকিও মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা একটি নতুন প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেছেন যা কার্বন ডাই-অক্সাইডকে ব্যবহারযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর করতে পারে। এই প্রক্রিয়ার মূল উপাদান হলো একটি ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল সেল, যেখানে দুটি ইলেকট্রোড এবং একটি ইলেক্ট্রোলাইট ব্যবহার করা হয়। তবে এটি একটি সাধারণ ব্যাটারি নয়; বরং এটি “বাইকার্বোনেট ইলেক্ট্রোলাইজার” নামে পরিচিত। এই যন্ত্রটি কার্যকরভাবে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে রূপান্তর করে একটি ফর্মেট জ্বালানিতে, যা পরিবেশ বান্ধব এবং অন্যান্য জ্বালানির বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ কুরআন ও বিজ্ঞান : সৃষ্টির রহস্যের মিলন
ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল সেলটি বাইকার্বোনেট আয়নকে ফর্মেট আয়নে রূপান্তরিত করে। বিজ্ঞানীরা একটি পলিমার ইলেক্ট্রোলাইটের সাহায্যে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে বাইকার্বোনেট আয়নে পরিবর্তন করে, যা তারপরে ফর্মেট উৎপাদন করে। ফর্মেট হলো একটি রাসায়নিক যা জ্বালানি কোষে ব্যবহার করা হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য। এটি হাইড্রোজেনের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে এবং পরিবেশের জন্যও কম ক্ষতিকর। ফর্মেটকে সহজেই অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা যায়, যেমন রাস্তার বরফ গলানোর কাজে এবং বিভিন্ন জ্বালানি কোষে বিদ্যুৎ উৎপাদনে।
এই ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল সেলটি কার্বন ডাই-অক্সাইডকে বাইকার্বোনেট আয়নে পরিণত করার সময় ৮৫% কার্যকারিতা দেখিয়েছে, যা একটি বড় সাফল্য। সেলটি ৩০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে কার্যকরীভাবে কাজ করেছে এবং ফর্মেট উৎপাদন করতে পেরেছে। এটি একটি বড় ধরনের উদ্ভাবন, কারণ সাধারণত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস থেকে জ্বালানি উৎপাদন অত্যন্ত অকার্যকর এবং ব্যয়বহুল।
টিমটি আশাবাদী যে তাদের এই প্রযুক্তি গ্রিন ট্রান্সফরমেশনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য নতুন প্রযুক্তি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কার্বন ডাই-অক্সাইড ক্যাপচার প্রযুক্তি হলো পরিবেশগত সমস্যাগুলো মোকাবিলা করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। এই প্রযুক্তি বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে ক্যাপচার করে এবং তারপর তা জ্বালানিতে রূপান্তরিত করে, যা একদিকে কার্বন নিঃসরণ কমাতে সাহায্য করে, অন্যদিকে পরিবেশ বান্ধব জ্বালানি উৎপাদন করে।
যদিও এই প্রযুক্তি খুবই সম্ভাবনাময়, তবে এটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে এটি কীভাবে কাজ করবে এবং কতটা সফল হবে, তা এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। কার্বন ডাই-অক্সাইড ক্যাপচারের মাধ্যমে জ্বালানি উৎপাদন করতে পারা বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। তবে এর জন্য প্রয়োজন আরও উন্নত প্রযুক্তি এবং দীর্ঘমেয়াদী গবেষণা।
এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে শুধুমাত্র কার্বন ডাই-অক্সাইড ক্যাপচার প্রযুক্তি যথেষ্ট নয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড ক্যাপচার প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাপমাত্রা কমানো সম্ভব হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যান্য সমস্যা যেমন সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি, মেরু অঞ্চলের বরফ গলন, এবং বায়ুমণ্ডলীয় পরিবর্তনের প্রভাব রোধ করা যাবে না। তাই শুধুমাত্র কার্বন নিঃসরণ কমানোই নয়, বরং ব্যাপকভাবে পরিবেশগত সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করা দরকার।