মহাকাশে লুকানো বহু বিস্ময় আমাদের দৃষ্টিসীমার বাইরে থাকলেও, জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (JWST) এই সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে। সম্প্রতি এই অত্যাধুনিক টেলিস্কোপটি মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির বৃহত্তম স্টার ক্লাস্টারগুলোর একটি, ওয়েস্টারলুন্ড ১-এর সন্ধান দিয়েছে, যা ইতিপূর্বে ঘন গ্যাস ও ধূলার কারণে আমাদের চোখের আড়ালে ছিল। এই মহাকাশে তারাদের জমায়েত একটি বিশাল আকার ধারণ করেছে, যেখানে শত শত বিশাল নক্ষত্র একত্রিত হয়েছে, যা সূর্যের চেয়েও কয়েক গুণ বেশি উজ্জ্বল ও বৃহৎ।
ওয়েস্টারলুন্ড ১ ক্লাস্টারটি গ্যালাক্সির কেন্দ্রের কাছে অবস্থান করে এবং সূর্যের ভরের চেয়ে ৫০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ গুণ বেশি ভর ধারণ করে। এই ক্লাস্টারের কিছু তারার আকার আমাদের সূর্যের তুলনায় ২,০০০ গুণ বড়। এর ফলে তারা আমাদের সৌরজগতে থাকলে, তাদের আলোকিত শক্তি শনির কক্ষপথ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তো এবং তারা সূর্যের তুলনায় ১০ লক্ষ গুণ বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠতো। যদি পৃথিবী ওয়েস্টারলুন্ড ১-এর তারাগুলোর চারপাশে ঘুরতো, তবে আমাদের রাতের আকাশ শত শত পূর্ণিমার মতো উজ্জ্বল নক্ষত্রে ভরে যেতো।
আরও পড়ুনঃ জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা পৃথিবীতে আঘাতকারী উল্কাপিন্ডের রহস্যময় উত্স উন্মোচন করেছেন
বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন যে এই ক্লাস্টারটি আগামী ৪০ মিলিয়ন বছরের মধ্যে ১,৫০০টিরও বেশি সুপারনোভা বিস্ফোরণের সাক্ষী হবে। যদিও এই ক্লাস্টারটির বয়স মাত্র ৩.৫ থেকে ৫ মিলিয়ন বছর, এটি মহাবিশ্বের হিসেবে খুবই অল্প সময়ের জন্য বিদ্যমান। বর্তমানে আমরা এটি দেখতে পাচ্ছি জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে, কারণ এর ইনফ্রারেড ক্যামেরা (NIRCam) ধুলোর পর্দা অতিক্রম করে নক্ষত্রগুলোকে শনাক্ত করতে পারে।
এটি এমন এক সময়ের স্মৃতি ধারণ করে যখন মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি আরও বেশি তারকা তৈরি করত। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ এই বিশাল নক্ষত্রগুচ্ছের দৃশ্যপটটি প্রকাশ করার মাধ্যমে আমাদের গ্যালাক্সির অতীতের গভীরে নিয়ে গেছে, যেখানে এমন অনেক নক্ষত্রের জন্ম হয় যা ভবিষ্যতে মহাবিশ্বকে আলোকিত করবে।
ওয়েস্টারলুন্ড ১-এর ছবিটি যখন প্রথম প্রকাশ করা হয়, তখন এটিকে ‘মাসের সেরা ছবি’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। টেলিস্কোপটির ছয়কোণা আয়না থেকে আসা আলো এমন একটি ভিজ্যুয়াল সৃষ্টি করেছে যেখানে তারাগুলো তুষারফুলের মতো দেখায়। এর ফলে মহাকাশের অন্য তারাগুলোর থেকে এই নক্ষত্রগুচ্ছের চিত্রটি একেবারেই ব্যতিক্রমী মনে হয়। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের ইনফ্রারেড দৃষ্টিশক্তি আমাদের মহাবিশ্বের এমন সব রহস্যময় স্থানকে উন্মোচন করতে সহায়তা করেছে, যা আমাদের অপটিক্যাল টেলিস্কোপের জন্য দৃষ্টির বাইরে ছিল।
নাসা চাঁদের মিশনে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধানে ৩ মিলিয়ন ডলার পুরস্কারের ঘোষণা করেছে
বিগত শতাব্দীর মহাকাশ আলোকচিত্রগুলো আমাদের চমকপ্রদ স্মৃতি বহন করে নিয়ে এসেছে। একবিংশ শতাব্দীতে মহাকাশ ফটোগ্রাফি অনেক বেশি উন্নত হয়েছে এবং আমরা মহাবিশ্বের অনেক গভীরে যেতে সক্ষম হয়েছি। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের প্রদর্শিত এই নক্ষত্রগুচ্ছগুলো আমাদের মহাকাশের অতীতের যাত্রার গল্প বলে। এই ছবিগুলোর মধ্য দিয়ে আমরা নক্ষত্রগুলোর জন্ম, বিকাশ এবং মৃত্যু নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যেতে পারি।