ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ডানা, উপকূলীয় অঞ্চলে তীব্র সতর্কতা জারি

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি ক্রমাগত শক্তি সঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড় ডানা -তে রূপান্তরিত হয়েছে। এই ঘূর্ণিঝড়টি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রস্থলে বাতাসের গতি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এর ফলে ভারতের ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় অঞ্চলসহ বাংলাদেশের কিছু অংশেও এর প্রভাব দেখা দিতে পারে।

সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়টি মূলত ওড়িশার পুরী এবং পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপের মধ্যবর্তী উপকূলে আঘাত করার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত করার আশঙ্কা কিছুটা কমেছে। ঘূর্ণিঝড়টি আগামী ২৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবরের মধ্যে শক্তিশালী আকার ধারণ করতে পারে, যার ফলে ওড়িশার পুরী এবং আশেপাশের অঞ্চলে তীব্র বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো বাতাসের পূর্বাভাস রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ ময়মনসিংহে ভিমরুলের কামড়ে একই পরিবারের বাবা, মেয়ে ও ছেলে তিনজনের মৃত্যু

ঘূর্ণিঝড় ডানার ফলে ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়েছে। ওড়িশার গঞ্জাম, পুরী, জগৎসিংহপুর এবং ভদ্রক জেলাগুলোতে স্কুল এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই অঞ্চলগুলোতে প্রবল বৃষ্টি এবং ঝড়ো হাওয়ার কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ওড়িশার প্রশাসন ইতিমধ্যে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ‘ডেঞ্জার সিগনাল-১’ জারি করেছে। এর ফলে মৎস্যজীবীদের সাগরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং জরুরি ভিত্তিতে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ভারতের আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুসারে, ঘূর্ণিঝড় ডানা প্রথমে ওড়িশার উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত করবে এবং এরপর তা পশ্চিমবঙ্গের দিকে অগ্রসর হবে। ঝড়টি ২৫ অক্টোবর সকালে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্র আকার ধারণ করবে, যার কারণে পুরী এবং আশপাশের এলাকাগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। পুরীর উপকূলীয় এলাকা বিশেষভাবে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, যেখানে প্রতি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতির ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে এই অঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টিপাতেরও পূর্বাভাস রয়েছে।

বাংলাদেশেও ঘূর্ণিঝড় ডানার প্রভাব পড়তে পারে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, খুলনা, বরিশাল এবং চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টি এবং বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ঢাকাতেও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে সরাসরি আঘাত হানার সম্ভাবনা কম বলে জানা গেছে।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সমুদ্র উত্তাল থাকবে, এবং এর প্রভাব উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত দেখা যেতে পারে। এজন্য বাংলাদেশ আবহাওয়া অফিস চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা এবং পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোতে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে। মাছ ধরার নৌকা এবং ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে যাতে তারা স্বল্প সময়ের নোটিশে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় ডানা নামকরণের কারণ

ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ নিয়ে সাধারণত মানুষের মধ্যে আগ্রহ থাকে। এই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করেছে কাতার, এবং ডানা নামের অর্থ হলো মুক্ত বা স্বাধীনতা। নামকরণ প্রক্রিয়ার একটি মূল উদ্দেশ্য হলো জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। প্রতি বছর নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘূর্ণিঝড়ের নাম আগে থেকে ঠিক করা হয়, এবং কোনো ঝড় শক্তিশালী হয়ে উঠলে সেটিকে সেই নাম অনুযায়ী ডাকা হয়। আটলান্টিক মহাসাগরে যখন বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার অতিক্রম করে, তখনই নিম্নচাপটি ঝড়ে রূপান্তরিত হয় এবং তার নামকরণ করা হয়। নামকরণের উদ্দেশ্য হলো ঝড়ের গতিপথ এবং তার প্রভাব সম্পর্কে আগাম সতর্কতা জারি করা।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (WMO) অধীনে বিভিন্ন অঞ্চলের আবহাওয়া সংস্থা তাদের নিজ নিজ অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ করে। ভারত মহাসাগরের অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ করে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ আরও কয়েকটি দেশ।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস প্রদান ও এর নামকরণের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করা হয়, যাতে সাধারণ মানুষ আগেভাগে প্রস্তুতি নিতে পারে এবং সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পারে।

Comment

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো