বাংলাদেশের বাজারে এখন রয়্যাল এনফিল্ড ৩৫০ সিসির বাইক

রয়্যাল এনফিল্ড মোটরসাইকেল তার ঐতিহ্যবাহী নির্মাণ ও শক্তিশালী ইঞ্জিনের জন্য বিশ্বজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়। এখন, এই আইকনিক বাইকটি বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চলেছে, যা দেশের বাইকপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য সুখবর। রয়্যাল এনফিল্ডের ৩৫০ সিসির মডেলগুলো শিগগিরই বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া যাবে, যা দেশের মোটরসাইকেল বাজারে নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা করবে।

বাংলাদেশে এতদিন ১৬৫ সিসির বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি ছিল না। তবে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ সরকার নীতিমালা শিথিল করে, যার ফলে এখন ৩৭৫ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে শর্ত ছিল, এসব বাইক দেশে উৎপাদিত হতে হবে। এই শর্তকে কাজে লাগিয়ে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ইফাদ মোটরস রয়্যাল এনফিল্ডকে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ইফাদ মোটরস একটি অত্যাধুনিক উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করেছে, যেখানে বিশ্বমানের মোটরসাইকেল উৎপাদন করা সম্ভব হবে।

রয়্যাল এনফিল্ডের উৎপত্তি যুক্তরাজ্যে হলেও এটি ভারতের বাইকারদের কাছে বিশেষভাবে জনপ্রিয়। ১৯০১ সালে যুক্তরাজ্যে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯৫৫ সালে ভারতের মাদ্রাজ মোটরসের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে চেন্নাইতে একটি সংযোজন কারখানা স্থাপন করে। সেই সময় থেকেই রয়্যাল এনফিল্ড ভারতের বাজারে বিশাল জনপ্রিয়তা অর্জন করতে শুরু করে এবং এখন এটি একটি আইকনিক ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ ম্যাকলারেন ডব্লিউ১ (W1): ভবিষ্যতের শেপ-শিফটিং সুপারকার

রয়্যাল এনফিল্ডের জনপ্রিয়তার অন্যতম প্রধান কারণ হলো এর শক্তিশালী ইঞ্জিন, ক্লাসিক ডিজাইন এবং দীর্ঘমেয়াদী নির্ভরযোগ্যতা। এই বাইকটির প্রচলিত মডেলগুলোর মধ্যে রয়্যাল এনফিল্ড বুলেট, ক্লাসিক, মিটিওর এবং হান্টার মডেলগুলো ৩৫০ সিসি পর্যন্ত ইঞ্জিন ক্ষমতায় সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। বলিউডের তারকাদের পাশাপাশি ভারতের অনেক প্রখ্যাত খেলোয়াড়ও রয়্যাল এনফিল্ডের ভক্ত। দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য এই বাইকগুলো অত্যন্ত উপযোগী এবং এর টেকসই কাঠামো ও শক্তিশালী ইঞ্জিন বাইকারদের প্রিয় করে তুলেছে।

রয়্যাল এনফিল্ড
ছবিঃ সংগৃহীত

রয়্যাল এনফিল্ডের ইতিহাস দীর্ঘ এবং চমকপ্রদ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর জন্য মোটরসাইকেল সরবরাহ করে এই কোম্পানি ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করে। সে সময় কোম্পানিটি বড় আকারের, শক্তিশালী মোটরসাইকেল তৈরি করে, যা যুদ্ধক্ষেত্রে কার্যকর ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও রয়্যাল এনফিল্ড সামরিক বাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম ছিল। তখনকার সময়ের সবচেয়ে বিখ্যাত মডেলগুলোর মধ্যে একটি ছিল ‘ডব্লিউডি/আরই’, যা প্যারাস্যুটের মাধ্যমে প্লেন থেকে নিক্ষেপ করা যেত।

১৯৪৯ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য ৩৫০ সিসির বুলেট ভারতে প্রথম আমদানি করা হয়। সেনাবাহিনীর সীমান্ত টহলদারির কাজে এই বাইকগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এর পর থেকে বুলেট এবং অন্যান্য মডেলগুলো ভারতের বাজারে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বর্তমানে বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে রয়্যাল এনফিল্ডের বিভিন্ন মডেল বিক্রি হচ্ছে।

রয়্যাল এনফিল্ডের মডেলগুলোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর শক্ত কাঠামো, উন্নত ইঞ্জিন এবং চমৎকার ব্রেকিং সিস্টেম। উদাহরণস্বরূপ, বুলেট ৩৫০-এর বর্তমান সংস্করণে ডুয়েল চ্যানেল এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে, যা খারাপ রাস্তায়ও বাইক নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। মিটিওর ৩৫০-এর আধুনিক ডিজাইন এবং এর শক্তিশালী হেডলাইট ও কনসোল প্যানেল বাইকপ্রেমীদের জন্য এটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি মডেল।

রয়্যাল এনফিল্ডের নামকরণ এবং এর জনপ্রিয়তার ইতিহাস খুবই প্রাচীন। ১৮৯৬ সালে এনফিল্ড শহরের একটি অর্ডারের ভিত্তিতে এই বাইকের যাত্রা শুরু হয়েছিল, যা পরবর্তীতে মোটরবাইক শিল্পে একটি অগ্রগণ্য নাম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। যুদ্ধের সময় থেকেই এর টেকসইতা এবং যান্ত্রিক দক্ষতা প্রমাণিত হয়েছে।

বাংলাদেশে রয়্যাল এনফিল্ডের আগমন দেশীয় মোটরসাইকেল প্রেমীদের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ৩৫০ সিসি পর্যন্ত বাইক চালানোর অনুমতি থাকায় রয়্যাল এনফিল্ডের বুলেট, ক্লাসিক, মিটিওর এবং হান্টার মডেলগুলো খুব শিগগিরই দেশের বাজারে প্রবেশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রতিটি মডেলেই রয়েছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, যা দেশের বাইকারদের বিভিন্ন চাহিদা পূরণে সক্ষম।

Comment

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো