অপটিক্যাল কম্পিউটিং এর জগতে প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানীরা একটি নতুন মেমোরি সেল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন, যা দ্রুত, কার্যকরী এবং স্থিতিশীল। এই গবেষণাটি অপটিক্যাল ইন-মেমোরি কম্পিউটিং প্রযুক্তিকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে, যেখানে আলোর ব্যবহার করে তথ্য সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। গবেষণাটি সম্প্রতি “Nature Photonics” নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এতে অংশগ্রহণ করেছেন পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাথান ইয়ংব্লাড, ইউসি সান্তা বারবারার পাওলো পিন্টাস, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালগারি এবং টোকিও ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির সহযোগী গবেষক ইউয়া শোজি।
অপটিক্যাল মেমোরি নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল মেমোরি সেলের উচ্চগতির সঙ্গে কার্যকারিতা বজায় রাখা। সাধারণত, গবেষকরা হয় দ্রুতগতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন, কিন্তু তখন শক্তির ব্যবহারে ভারসাম্য রাখতে পারেননি। ফলে, একটিকে উন্নত করতে গেলে অন্যটিকে ত্যাগ করতে হয়েছে। কিন্তু এই নতুন গবেষণায় গবেষকরা একটি নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন, যা একসঙ্গে অনেকগুলি বৈশিষ্ট্য যেমন- নন-ভোলাটাইল, মাল্টিবিট স্টোরেজ, উচ্চগতির সুইচিং, কম শক্তি ব্যবহার এবং দীর্ঘস্থায়ী সহনশীলতা—এক প্ল্যাটফর্মে সমন্বিত করেছে।
আরও পড়ুনঃ মানব মস্তিষ্কের কোষ ভার্চুয়াল প্রজাপতিকে পরিচালনা করছে
নাথান ইয়ংব্লাড ব্যাখ্যা করেছেন, “যে উপকরণগুলি আমরা এই মেমোরি সেল তৈরি করতে ব্যবহার করেছি, তা গত কয়েক দশক ধরে উপলব্ধ ছিল। তবে, সাধারণত এগুলো স্থির অপটিক্যাল অ্যাপ্লিকেশনগুলিতে ব্যবহৃত হয়েছে, যেমন- অন-চিপ আইসোলেটর। কিন্তু আমরা এগুলোকে ব্যবহার করেছি একটি উচ্চ কার্যকরী অপটিক্যাল মেমোরি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে।”
এই নতুন মেমোরি সেলের প্রযুক্তি আজকের প্রচলিত CMOS সার্কিট্রিতে সরাসরি প্রোগ্রাম করা যেতে পারে, যা বর্তমানে ব্যবহৃত কম্পিউটার প্রযুক্তির সঙ্গে একীভূত করা সম্ভব। এতে করে, অপটিক্যাল কম্পিউটিংকে ভবিষ্যতে দ্রুতগতি সম্পন্ন ও কার্যকরী করার একটি বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই প্রযুক্তিটি অন্যান্য নন-ভোলাটাইল পদ্ধতির তুলনায় তিন গুণ বেশি সহনশীলতা প্রদর্শন করেছে। যেখানে অন্যান্য পদ্ধতিতে কয়েক কোটি সুইচিং সাইকেল সম্ভব ছিল, সেখানে এই প্রযুক্তি ২.৪ বিলিয়ন সুইচিং সাইকেল সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে, যা ন্যানোসেকেন্ডের মধ্যে সম্পন্ন হয়।
গবেষণায় একটি রেজোন্যান্স-ভিত্তিক অপটিক্যাল আর্কিটেকচার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা ম্যাগনেটো-অপটিক উপকরণ ব্যবহার করে নন-রেসিপ্রোকাল ফেজ শিফট প্রয়োগ করে অপটিক্যাল ইন-মেমোরি কম্পিউটিং বাস্তবায়ন করেছে। সাধারণত, অপটিক্যাল প্রক্রিয়াকরণে একটি দ্রুত পরিবর্তনশীল অপটিক্যাল ইনপুট ভেক্টরকে একটি স্থির অপটিক্যাল ম্যাট্রিক্সের সঙ্গে গুণ করা হয়। কিন্তু ঐতিহ্যগত পদ্ধতি এবং উপকরণ ব্যবহার করে এই ওজনগুলো অন-চিপে এনকোড করা কঠিন ছিল।
এই সমস্যার সমাধানে, গবেষকরা সিরিয়াম-সাবস্টিটিউটেড ইট্রিয়াম আয়রন গার্নেট (Ce:YIG) এবং সিলিকন মাইক্রো-রিং রেজোনেটর ব্যবহার করেছেন। এই মেমোরি সেলগুলোর মাধ্যমে আলো দ্বিমুখীভাবে প্রবাহিত হতে পারে, যেমনটি দুইজন দৌড়বিদ বিপরীত দিকে ছুটছে। এর মাধ্যমে আলোর গতিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়, যাতে একটি নির্দিষ্ট দিকের আলো দ্রুত প্রবাহিত হয় এবং অন্য দিকের আলো ধীরগতিতে প্রবাহিত হয়। এই নিয়ন্ত্রণটি ফোটনের গতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে করা হয়, যা প্রচলিত নন-ম্যাগনেটিক উপকরণে সম্ভব হয় না।
গবেষকরা এখন একটি একক মেমোরি সেল থেকে একটি বৃহৎ স্কেল মেমোরি অ্যারেতে রূপান্তর করার চেষ্টা করছেন, যা আরো বেশি ডেটা সমর্থন করতে পারবে। তাদের মতে, এই নন-রেসিপ্রোকাল ম্যাগনেটো-অপটিক মেমোরি সেল একটি কার্যকরী নন-ভোলাটাইল স্টোরেজ সল্যুশন প্রদান করে, যা সীমাহীন রিড/রাইট সক্ষমতা এবং সাব-ন্যানোসেকেন্ড প্রোগ্রামিং স্পিডের সুবিধা দেয়।
শোজি উল্লেখ করেছেন যে ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি আরো উন্নত করা যেতে পারে, অন্য প্রভাব ব্যবহার করে সুইচিংয়ের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। এছাড়া, (Ce:YIG) উপকরণ ছাড়াও অন্য উপকরণ এবং আরও নির্ভুল ডিপোজিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই অপটিক্যাল কম্পিউটিং প্রযুক্তির সম্ভাবনা আরো বাড়ানো যেতে পারে।
শব্দের ব্যাখ্যা:
[(Ce:YIG) – এটি দ্বারা বোঝানো হয়েছে Cerium-substituted Yttrium Iron Garnet, যা এক ধরনের ম্যাগনেটো-অপটিক উপাদান। এটি একটি বিশেষ ধরনের গার্নেট (Yttrium Iron Garnet বা YIG) যেখানে সেরিয়াম (Cerium) উপাদান যুক্ত করা হয়েছে। Ce উপাদানটি আলোর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে যখন একটি চুম্বকীয় ক্ষেত্র প্রয়োগ করা হয়। এই উপাদানটি আলোকে বিভিন্ন দিক দিয়ে প্রবাহিত করতে সাহায্য করে, যেমন কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের ক্ষেত্রে মেমোরি সেলগুলোর মধ্যে আলো কীভাবে প্রবাহিত হবে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। Ce উপাদানটি অপটিক্যাল মেমোরি সেল এবং অন্যান্য অপটিক্যাল ডিভাইসের জন্য খুব কার্যকরী, কারণ এটি আলোর গতিকে বিভিন্ন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয় এবং তাপমাত্রার প্রভাবের প্রতি কম সংবেদনশীল।]