যুক্তরাজ্যে এআই প্রযুক্তির উন্নয়ন ও প্রয়োগের ওপর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট আয়োজন করা হয় যেখানে বিভিন্ন বিখ্যাত কোম্পানির প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এই AI ট্যুর ইভেন্টে উল্লেখযোগ্য কোম্পানি ইউনিলিভার ও ক্লিফোর্ড চান্স তাদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও কাজের গতি ত্বরান্বিত করতে এআই এজেন্ট ব্যবহার করছে। ইভেন্টে উপস্থিত ইউনিলিভারের গ্লোবাল হেড অফ ডিজিটাল, মিডিয়া এবং কমার্স – বিউটি অ্যান্ড ওয়েলবিইং বিভাগের সেলিনা সাইকস এবং ক্লিফোর্ড চান্সের গ্লোবাল অপারেশনস অ্যান্ড বিজনেস ট্রান্সফরমেশন পার্টনার জেসিকা লিটলউড শেয়ার করেন, কীভাবে তাদের কাজের ক্ষেত্রগুলোতে জেনারেটিভ এআই বিপ্লব ঘটাচ্ছে।
AI ট্যুর ইভেন্টটি উদ্ভাবনী চিন্তাধারা ও অনুপ্রেরণার মঞ্চে পরিণত হয়। এখানে বিখ্যাত সাঁতারু ও জাতিসংঘের সাগর সংরক্ষণ পৃষ্ঠপোষক লুইস পাঘ তার “অপরাজেয় লক্ষ্যে পৌঁছানো” বিষয়ে একটি প্রেরণামূলক বক্তৃতা দেন। তার বক্তব্য সকলের মাঝে এক ধরনের উদ্দীপনা জাগিয়ে তোলে। এছাড়াও ইভেন্টে AI নিরাপত্তা এবং কপাইলট প্রোডাক্টিভিটি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। ভিক্টোরিয়া ডার্বিশায়ার, অভিজ্ঞ বিবিসি ব্রডকাস্টার, বিভিন্ন পণ্য ডেমো এবং সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ইভেন্টটি পরিচালনা করেন, যা উপস্থিত সকলকে আরও বেশি আগ্রহী করে তোলে।
AI প্রযুক্তির নতুন উদ্ভাবনের সাথে সাথে এর নিরাপত্তার বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্লেয়ার বার্কলে তার সমাপনী বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, Microsoft এবং তাদের গ্রাহকদের জন্য AI প্রযুক্তির নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি আরও বলেন, AI এর ব্যবহার শুধুমাত্র কাজের গতি বৃদ্ধি করবে না, বরং কর্মীদের কাজের প্রতি আগ্রহ ও তাদের মানসিক সুখ বৃদ্ধি করতে সহায়ক হবে। উপস্থিত শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে তিনি আহ্বান জানান যেন তারা এই ইভেন্ট থেকে শেখা বিষয়গুলো তাদের নিজ নিজ কাজের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেন এবং এর মাধ্যমে আরও উন্নত কাজের পরিবেশ তৈরি করেন।
আরও পড়ুনঃ এআই প্রতিযোগিতায় পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার প্রযুক্তি জায়ান্টদের
AI ট্যুরে উপস্থিত ভোডাফোনের সিইও মার্ঘেরিটা দেলে ভালে এবং ক্লেয়ার বার্কলে একটি বিশেষ আলোচনায় অংশ নেন। এই আলোচনায় তারা উল্লেখ করেন, ভোডাফোন কীভাবে Microsoft 365 Copilot ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩০০ থেকে ৬৮,০০০-এ বৃদ্ধি করেছে এবং এই বৃদ্ধি কোম্পানির বিভিন্ন বিভাগকে কীভাবে উপকৃত করেছে। দেলে ভালে বলেন, ভোডাফোনের গ্রাহক সেবা বিভাগ এআই থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছে, কারণ এআই প্রযুক্তি তাদের গ্রাহকদের সাথে দ্রুত যোগাযোগ ও সমাধান দিতে সহায়তা করছে। এই এআই প্রযুক্তি কোম্পানির কর্মীদেরও কাজের গতি এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করছে, যা তাদের দৈনন্দিন কাজগুলোকে আরও সহজ ও দ্রুতগামী করেছে।
Microsoft 365 Copilot-এর বিস্তৃত ব্যবহারের ফলে ভোডাফোনের গ্রাহক সেবার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তাদের গ্রাহকরা আরও সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন। বার্কলে বলেন, এআই প্রযুক্তির ব্যবহার গ্রাহক সেবার সাথে সাথে অন্যান্য ক্ষেত্রেও ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করছে এবং এর মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে উন্নয়নশীল পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, Copilot এর ব্যবহার শুধুমাত্র সময় বাঁচাচ্ছে না, বরং এটি কর্মীদের সাথে গ্রাহকদের সংযোগ স্থাপনকে সহজ করে দিচ্ছে এবং এতে কোম্পানির ইমেজ আরও শক্তিশালী হচ্ছে।
ক্লেয়ার বার্কলে তার বক্তব্যে জোর দিয়ে বলেন, এআই প্রযুক্তির মূল লক্ষ্য শুধু উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা নয়, বরং কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে সুখী রাখা এবং তাদের দক্ষতাকে উন্নত করা। তার মতে, AI প্রযুক্তি কর্মীদের কাজে তৃপ্তি আনতে এবং নতুনভাবে কাজের অভিজ্ঞতা পেতে সহায়ক হতে পারে। এআই কর্মীদের পুনরাবৃত্তিমূলক কাজ থেকে মুক্তি দিতে পারে, ফলে তারা তাদের কাজের সময় আরও সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী কাজে ব্যবহার করতে পারে। তিনি বলেন, “AI আমাদের শুধু উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করবে না, বরং এটি আমাদের কর্মজীবনকে আরও আনন্দময় করতে সাহায্য করবে।” এর ফলে কর্মীরা আরও উদ্দীপিতভাবে কাজ করতে পারবেন এবং এই প্রযুক্তির সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে কোম্পানি একটি টেকসই ও ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হবে।
AI ট্যুরের অন্যতম আকর্ষণীয় অংশ ছিল endurance সাঁতারু ও জাতিসংঘের সাগর সংরক্ষণ পৃষ্ঠপোষক লুইস পাঘ-এর প্রেরণামূলক বক্তব্য। তিনি “অপরাজেয় লক্ষ্যে পৌঁছানো” বিষয়ে আলোচনা করেন এবং উপস্থিত সকলকে তার নিজের সংগ্রাম ও সাফল্যের গল্প শোনান। তার অভিজ্ঞতা সকলকে অনুপ্রাণিত করে এবং সকলের মাঝে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলে।
ইভেন্টের শেষ পর্যায়ে, জনপ্রিয় অভিনেতা ও লেখক জেমস করডেন তার বহুমুখী ক্যারিয়ার নিয়ে হালকা মেজাজে আলোচনা করেন। করডেন বলেন, তার জীবনের ব্যর্থতা ও সাফল্যের গল্পগুলো তাকে শিখিয়েছে কীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়। তার আলাপ পুরো ইভেন্টে এক নতুন মাত্রা যোগ করে এবং সকলকে তার অভিজ্ঞতার আলোকে জীবন ও কর্মের শিক্ষার মূল্য উপলব্ধি করায়।
লন্ডনে অনুষ্ঠিত AI ট্যুরের পরে, ইভেন্টটি প্যারিস, রোম এবং বার্লিনেও অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে স্থানীয় কোম্পানিগুলোর জন্য এআই প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা ও উপযোগিতা তুলে ধরা হয়। প্রতিটি শহরে AI ট্যুরে স্থানীয় প্রযুক্তি নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের সাথে যোগাযোগের সুযোগ তৈরি হয় এবং AI এর মাধ্যমে তারা কীভাবে তাদের কাজের ক্ষেত্রগুলোতে পরিবর্তন আনতে পারে, সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। এই ইভেন্টের মাধ্যমে বিভিন্ন শহরের কোম্পানিগুলো এআই প্রযুক্তির নতুন নতুন ব্যবহারের ধারণা পান এবং তাদের নিজস্ব ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগের পরিকল্পনা করতে শুরু করেন।
AI ট্যুরের মাধ্যমে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা আরও সুদৃঢ় হয় এবং এআই প্রযুক্তির নতুন নতুন উদ্ভাবনী দিকগুলো সবার কাছে স্পষ্ট হয়। এটির মাধ্যমে বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে এআই প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং এর মাধ্যমে উন্নয়নশীল পরিবেশ তৈরির সুযোগের পথ উন্মোচিত হয়।