সাম্প্রতিককালে জাপানের সামরিক যোগাযোগ উপগ্রহ লঞ্চ করেছে, যা তাদের মহাকাশ কর্মসূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে ধরা হচ্ছে। এই উপগ্রহটি হল কিরামেকি ৩, যা একটি সামরিক যোগাযোগ উপগ্রহ এবং এটি জাপানের নতুন এইচ৩ রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ৪ঠা নভেম্বর স্থানীয় সময় বিকাল ৩:৪৮ টায় এটি লঞ্চ করা হয়, যা ছিল এইচ৩ রকেটের চতুর্থ উৎক্ষেপণ। কিরামেকি ৩ লঞ্চের এই ঘটনা জাপান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (JAXA) কর্তৃক প্রচারিত লঞ্চ ওয়েবকাস্টে দেখানো হয়। উৎক্ষেপণের প্রায় ২৯ মিনিট পরে উপগ্রহটি সফলভাবে উৎক্ষেপিত হয়, যা মিশন কন্ট্রোলের মধ্যে উল্লাসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এইচ৩ রকেটটি হল জাপানের নতুন মিডিয়াম-লিফট রকেট যা আগের এইচ-২এ রকেটের উত্তরসূরি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এইচ-২এ রকেটটি প্রায় দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে মহাকাশে যাত্রা করেছে এবং এটি বর্তমানে অবসর নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এইচ-২এ এর শুধুমাত্র একটি মিশন বাকি রয়েছে, যা এই বছরের শেষের আগে লঞ্চ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এইচ-২এ এর সফল অভিযানের কারণে এই রকেটটি জাপানের মহাকাশ অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুনঃ ইলন মাস্ক-এর পর এবার জেফ বেজোসের অ্যামাজন স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের প্রতিযোগীতায়
এইচ৩ রকেটের প্রথম উৎক্ষেপণ হয়েছিল ২০২৩ সালের মার্চ মাসে, যদিও এটি প্রথম পরিকল্পনার থেকে প্রায় তিন বছর পরে বাস্তবায়িত হয়। প্রথম লঞ্চ ব্যর্থ হয়েছিল এবং এর ফলে লস হয়েছিল পে লোড, যা ছিল এডভান্সড ল্যান্ড অবজারভিং স্যাটেলাইট-৩ (এলোস-৩, যা ডাইচি-৩ নামেও পরিচিত)। তবে প্রথম লঞ্চের ব্যর্থতার পরের দুটি মিশন সফল হয়েছিল। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এইচ৩ রকেট একটি ৫,৯০০ পাউন্ড (প্রায় ২,৬০০ কিলোগ্রাম) ওজনের মাস সিমুলেটর এবং দুটি ছোট আর্থ-অবজারভেশন স্যাটেলাইট সফলভাবে মহাকাশে পৌঁছিয়েছিল। এরপর ৩০শে জুন, এইচ৩ রকেট এলোস-৪ বা ডাইচি-৪ নামের একটি আর্থ-অবজারভেশন স্যাটেলাইট কম পৃথিবী কক্ষপথে সফলভাবে পৌঁছায়।
এবারের লঞ্চে, কিরামেকি ৩ উপগ্রহটিকে অনেক দূরে, ভূ-সমষ্টিক কক্ষপথে পাঠানো হয়েছে। এই কক্ষপথটি পৃথিবী থেকে প্রায় ২২,২৩৬ মাইল (৩৫,৭৮৬ কিলোমিটার) উপরে অবস্থিত। এই উচ্চতায় উপগ্রহগুলি প্রতিদিন একবার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে, যার ফলে তারা পৃথিবীর নির্দিষ্ট একটি স্থানের উপরে স্থির থাকে, অর্থাৎ সেই নির্দিষ্ট স্থানের উপরে ‘হোভার’ করতে থাকে। এটি সামরিক যোগাযোগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি সুনির্দিষ্ট স্থানে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ রক্ষা করতে সহায়ক।
কিরামেকি ৩ উপগ্রহটি জাপানি সামরিক বাহিনী দ্বারা পরিচালিত হবে এবং এটি ব্যবহার করা হবে সামরিক যোগাযোগের জন্য। উপগ্রহটি এক্স ব্যান্ডে যোগাযোগ করবে, যা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রামের মাইক্রোওয়েভ অঞ্চলের একটি অংশ। এটি সামরিক বাহিনীর জন্য নির্ভরযোগ্য এবং দ্রুত যোগাযোগের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদানে সহায়ক হবে। এই ধরনের যোগাযোগ উপগ্রহ সামরিক বাহিনীর কর্মকাণ্ডে নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে, কারণ তারা নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ সুবিধা প্রদান করে।
এইচ৩ রকেটটি জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (JAXA) এবং মিতসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজের সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। এটি একটি অত্যাধুনিক মিডিয়াম-লিফট রকেট যা বিভিন্ন ধরনের পে লোড মহাকাশে পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। রকেটটির প্রথম উৎক্ষেপণ ব্যর্থ হলেও পরবর্তীতে এটি তার সক্ষমতা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে এবং এটি জাপানের মহাকাশ অভিযানে একটি নতুন ধাপ হিসেবে কাজ করছে।
আরও পড়ুনঃ মাস্ক বনাম আম্বানির প্রতিযোগিতা : ভারতের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট বাজারে
এইচ৩ রকেটের উন্নয়ন এবং উৎক্ষেপণ জাপানের মহাকাশ কর্মসূচিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। মহাকাশ গবেষণায় জাপানের নতুন সাফল্য এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। জাপান বর্তমানে মহাকাশ গবেষণায় একটি শক্তিশালী অবস্থান অর্জন করেছে এবং তাদের মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত উন্নয়নের মাধ্যমে সামরিক এবং বেসামরিক উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
সামরিক যোগাযোগ উপগ্রহের সফল উৎক্ষেপণ জাপানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করেছে। মহাকাশ গবেষণায় জাপানের এই ধরনের সাফল্য তাদের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের প্রতিফলন এবং মহাকাশ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তাদের অগ্রগতি প্রমাণ করে।
এইচ৩ রকেটের উৎক্ষেপণ সফল হওয়ার মাধ্যমে জাপান একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে যেখানে তারা মহাকাশে তাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে চাইছে। জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা JAXA এবং মিতসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ একত্রে কাজ করে নতুন প্রযুক্তি এবং উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা উন্নয়ন করেছে, যা জাপানের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে আরও উন্নতি সাধন করবে।
জাপান এই ধরনের সফল উৎক্ষেপণগুলো দ্বারা মহাকাশ গবেষণায় একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করছে এবং তাদের সামরিক যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত করছে। কিরামেকি ৩ উপগ্রহের উৎক্ষেপণের মাধ্যমে জাপান তাদের সামরিক বাহিনীর যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে, যা তাদের সামরিক সক্ষমতা এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।