শিল্প ক্ষেত্রে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) এবং হাইড্রোজেন (H2) গ্যাস আলাদা করার জন্য উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে প্রচলিত ঝিল্লি বা ঝিল্লিগুলো কার্যকর হলেও, গ্যাস আলাদা করার প্রয়োজনীয় নমনীয়তা ও দক্ষতার অভাবে এটি বড় আকারে ব্যবহার করা কঠিন। এই সমস্যার সমাধান নিয়ে এসেছে একটি নতুন ধরনের ঝিল্লি প্রযুক্তি, যা তার অবস্থা পরিবর্তন করতে সক্ষম এবং কার্যকারিতার দিক থেকে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধন করতে পারে। এটি মূলত আণবিক পদার্থের সাহায্যে তৈরি এবং একে তাপমাত্রার মাধ্যমে বিভিন্ন অবস্থায় যেমন তরল, গ্লাস এবং স্ফটিকীয় অবস্থায় পরিবর্তন করা যায়।
কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর ইন্টিগ্রেটেড সেল-ম্যাটেরিয়াল সায়েন্সেস (WPI-iCeMS) এবং ন্যাশনাল তাইওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের গবেষকরা এই নতুন ধরনের ঝিল্লি তৈরি করেছেন। ঝিল্লিটি ধাতব-জৈব পলিহেড্রা (MOP) এবং পলিথিলিন গ্লাইকোল (PEG) চেইন নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শুহেই ফুরুকাওয়া জানান, প্রচলিত কঠিন ঝিল্লিগুলি কার্যকর হলেও নমনীয়তার অভাবে শিল্পক্ষেত্রে সেগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এই ঝিল্লিটি তার অবস্থা পরিবর্তনের মাধ্যমে গ্যাসের প্রবেশযোগ্যতা এবং বেছে নেওয়ার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, যা এটি অন্য প্রযুক্তি থেকে আলাদা করে তোলে।
আরও পড়ুনঃ পদার্থ বিজ্ঞানে বিস্ময়কর আবিষ্কার : একইসঙ্গে কঠিন এবং সুপারফ্লুইড আচরণ
এই নতুন ঝিল্লি তাপমাত্রার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তরল, কাচের মতো বা স্ফটিকের মতো অবস্থায় পরিবর্তিত হতে পারে, যা বিভিন্ন গ্যাসের জন্য নির্দিষ্টভাবে প্রবেশযোগ্যতা এবং বেছে নেওয়ার ক্ষমতা প্রদান করতে সক্ষম। এতে করে, এটি বিভিন্ন পরিবেশগত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে গ্যাস বিচ্ছিন্ন করার প্রক্রিয়া সহজ করে তোলে।
এই ঝিল্লিের তরল অবস্থাটি বিশেষভাবে CO2 ক্যাপচারের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। এই অবস্থায়, এটি হাইড্রোজেন মিশ্রণ থেকে CO2 আলাদা করতে এবং তা ধরতে সক্ষম, যা কার্বন ডাই অক্সাইড ক্যাপচারে শক্তি ব্যয় কমিয়ে দেয়। এর ফলে, এই ঝিল্লিটি শিল্পক্ষেত্রে CO2 নির্গমন কমাতে এবং হাইড্রোজেন পরিশোধনের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব শক্তি উৎপাদনে সহায়ক হতে পারে।
ধাতব-জৈব পলিহেড্রা এবং পলিথিলিন গ্লাইকোলের সমন্বয়ে তৈরি এই ঝিল্লিের বিশেষত্ব হল এটি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে গ্যাসের বিচ্ছিন্নকরণের জন্য ব্যবহার করা যায়। এর মাধ্যমে গ্যাসের আলাদা করার প্রক্রিয়া সহজতর ও কার্যকর হয়। গবেষকরা আশা করছেন, এই ঝিল্লিের সাহায্যে শিল্পক্ষেত্রে কেবলমাত্র কার্বন ডাই অক্সাইডই নয়, আরও বিভিন্ন ধরনের গ্যাসের বিচ্ছিন্নকরণ সম্ভব হবে। এই ঝিল্লিের গুণাবলী বিভিন্ন গ্যাসের জন্য বেছে নেওয়া যায়, ফলে এটি পরিবেশবান্ধব শক্তি উৎপাদনে বড় অবদান রাখতে সক্ষম।
ন্যাশনাল তাইওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডুন-ইয়েন ক্যাং জানান, পরবর্তী চ্যালেঞ্জ হল এই ঝিল্লিের উৎপাদন বড় পরিসরে করা এবং এর কার্যকারিতা নিশ্চিত করা। গবেষকরা এখনও MOP এবং পলিমারগুলোর মধ্যে সংমিশ্রণের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছেন যাতে আরও বেশি গ্যাসকে কার্যকরভাবে আলাদা করা যায়। বড় আকারে উৎপাদনের জন্য প্রযুক্তিটি আরও উন্নত করার প্রয়োজন রয়েছে এবং গবেষকরা এটিকে টেকসই শক্তি উৎপাদনে একটি প্রধান সমাধান হিসেবে দেখতে চাইছেন।
শিল্পক্ষেত্রে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন কমাতে এবং পরিবেশ রক্ষায় এই ঝিল্লিের সম্ভাব্য ভূমিকা অত্যন্ত বড়। কার্বন নির্গমন নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রযুক্তিটির উন্নয়ন করতে হবে এবং তা বড় পরিসরে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। গবেষকদের আশা, এই নতুন ধরনের ঝিল্লি ভবিষ্যতে টেকসই শক্তি উৎপাদনে বড় ভূমিকা রাখবে।
তথ্য সূত্রঃ সাইটেকডেইলি