মাইক্রোসফটের সর্বশেষ অপারেটিং সিস্টেম, উইন্ডোজ ১১। উইন্ডোজ ১১-এর নানাবিধ ফিচারগুলোকে সহজে এবং দ্রুততরভাবে ব্যবহার করার জন্য শর্টকাট কীগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শর্টকাট কী ব্যবহার করলে কাজ করা অনেক দ্রুত হয় এবং এটি আপনার সময় বাঁচায়। এই প্রবন্ধে আমরা উইন্ডোজ ১১-এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর কিছু শর্টকাট কী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
১। Windows + D: ডেস্কটপ মিনি-মাইজ/রিস্টোর করুন
Windows + D শর্টকাটটি ব্যবহার করে আপনি এক ক্লিকেই সমস্ত ওপেন উইন্ডো মিনি-মাইজ করে ডেস্কটপে যেতে পারবেন। আবার একই কী কম্বিনেশন ব্যবহার করে মিনি-মাইজ করা উইন্ডোগুলো আবার রিস্টোর করতে পারেন। যখন আপনাকে হঠাৎ ডেস্কটপে যেতে হয়, তখন এটি একটি অত্যন্ত কার্যকর শর্টকাট।
২। Windows + E: ফাইল এক্সপ্লোরার খুলুন
Windows + E কী কম্বিনেশনটি ফাইল এক্সপ্লোরার দ্রুত খুলে দেয়। ফাইল এক্সপ্লোরার হল সেই জায়গা যেখানে আপনি আপনার ফাইল ও ফোল্ডারগুলো ব্রাউজ করতে পারেন। কাজের সময় যদি দ্রুত কোনও ফাইল বা ডকুমেন্টে যেতে হয়, তবে এটি অত্যন্ত উপকারী।
কম্পিউটার স্পিড বাড়বে ১০০% এই ১০টি টিপস এন্ড ট্রিকস ফলো করলে
৩। Windows + L: কম্পিউটার লক করুন
Windows + L ব্যবহার করে আপনি আপনার কম্পিউটারটি দ্রুত লক করতে পারবেন। এটি বিশেষভাবে উপকারী যখন আপনি সাময়িকভাবে কম্পিউটার ছেড়ে যাচ্ছেন এবং চান না যে অন্য কেউ আপনার তথ্য অ্যাক্সেস করতে পারে। আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে এটি অত্যন্ত কার্যকর।
৪। Windows + Tab: টাস্ক ভিউ খোলা
Windows + Tab শর্টকাটটি ব্যবহার করে আপনি টাস্ক ভিউতে প্রবেশ করতে পারেন। টাস্ক ভিউ আপনাকে আপনার সমস্ত ওপেন অ্যাপ্লিকেশন ও ভার্চুয়াল ডেস্কটপগুলো একসাথে দেখার সুযোগ দেয়। এটি আপনার কাজের পরিবেশকে সুসংগঠিত রাখতে সহায়ক।
৫। Windows + I: সেটিংস খুলুন
Windows + I শর্টকাটটি সরাসরি উইন্ডোজ সেটিংস অ্যাপটি খুলে দেয়। উইন্ডোজ সেটিংসে গিয়ে আপনি বিভিন্ন সেটিংস পরিবর্তন করতে পারেন, যেমন ডিসপ্লে, নেটওয়ার্ক, প্রাইভেসি ইত্যাদি। শর্টকাটটি ব্যবহার করে সময় বাঁচানো সম্ভব হয়, বিশেষ করে যখন দ্রুত কোনও সেটিংস পরিবর্তন করতে হয়।
৬। Windows + A: অ্যাকশন সেন্টার (কুইক সেটিংস) খোলা
Windows + A ব্যবহার করে অ্যাকশন সেন্টার খুলে যায়। উইন্ডোজ ১১-এ, অ্যাকশন সেন্টারটি কুইক সেটিংস নামে পরিচিত হয়েছে, যেখানে আপনি নোটিফিকেশনগুলো দেখতে পারবেন এবং দ্রুত কিছু সেটিংস পরিবর্তন করতে পারবেন, যেমন ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ ইত্যাদি। এটি একটি অত্যন্ত কাজের শর্টকাট যা আপনাকে দ্রুত কুইক সেটিংস পরিবর্তন করতে সাহায্য করে।
৭। Windows + S: সার্চ মেনু খোলা
Windows + S শর্টকাটটি সার্চ মেনু খোলে। সার্চ মেনু ব্যবহার করে আপনি আপনার কম্পিউটার থেকে ফাইল, অ্যাপ্লিকেশন, এবং এমনকি ওয়েব থেকে তথ্য খুঁজে পেতে পারেন। কাজের সময় যদি দ্রুত কোনও ফাইল বা অ্যাপ খুঁজে বের করতে হয়, তবে এটি খুব উপকারী।
৮। Windows + X: পাওয়ার ইউজার মেনু খোলা
Windows + X ব্যবহার করে পাওয়ার ইউজার মেনু খোলা যায়, যা আপনাকে টাস্ক ম্যানেজার, কন্ট্রোল প্যানেল, ডিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ টুলগুলোতে দ্রুত অ্যাক্সেস করতে সাহায্য করে। যারা একটু বেশি প্রযুক্তি সচেতন ব্যবহারকারী, তাদের জন্য এটি একটি অপরিহার্য শর্টকাট।
৯। Windows + Ctrl + D: নতুন ভার্চুয়াল ডেস্কটপ তৈরি করা
Windows + Ctrl + D ব্যবহার করে একটি নতুন ভার্চুয়াল ডেস্কটপ তৈরি করা যায়। ভার্চুয়াল ডেস্কটপ হলো একটি ডিজিটাল কাজের জায়গা যা আপনাকে একাধিক কাজকে পৃথকভাবে সংগঠিত রাখতে সাহায্য করে। যারা মাল্টি-টাস্কিং পছন্দ করেন, তাদের জন্য এটি খুবই উপকারী।
১০। Alt + Tab: ওপেন অ্যাপগুলোর মধ্যে পরিবর্তন করা
Alt + Tab একটি ক্লাসিক শর্টকাট যা ওপেন অ্যাপ্লিকেশনগুলোর মধ্যে দ্রুত পরিবর্তন করতে সাহায্য করে। এটি ব্যবহার করে আপনি এক অ্যাপ থেকে অন্য অ্যাপে সহজেই যেতে পারেন এবং আপনার কাজের প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ মোবাইল চুরি হলে খুঁজে পাওয়ার উপায়
উইন্ডোজ ১১ এর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শর্টকাট কী
উপরের শর্টকাটগুলোর পাশাপাশি আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্টকাট কী রয়েছে যা আপনার কাজকে আরও সহজ করতে পারে:
- Windows + R: রান ডায়ালগ বক্স খুলুন। এটি ব্যবহার করে আপনি কোনও প্রোগ্রাম, ফোল্ডার, ডকুমেন্ট, বা ইন্টারনেট রিসোর্স খুলতে পারেন।
- Windows + Ctrl + F: নেটওয়ার্কে কোনও কম্পিউটার খুঁজুন। এটি একটি দ্রুত উপায় নেটওয়ার্কের অন্যান্য ডিভাইস খুঁজে বের করার জন্য।
- Windows + P: প্রজেকশন মোড পরিবর্তন করুন। যদি আপনি আপনার ডিসপ্লে অন্য একটি মনিটর বা প্রজেক্টরে এক্সটেন্ড করতে চান, এটি ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রজেকশন মোড পরিবর্তন করতে পারবেন।
- Windows + Shift + S: স্ক্রিনশট নিন। এটি আপনাকে স্ক্রিনের যেকোনো অংশের স্ক্রিনশট নিতে দেয়, যা দ্রুত তথ্য সংগ্রহের জন্য খুব কার্যকর।
- Windows + V: ক্লিপবোর্ড ইতিহাস খোলা। উইন্ডোজ ১১-এ, আপনি ক্লিপবোর্ডের ইতিহাস দেখতে এবং পেস্ট করতে পারেন, যা আপনার কাজে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
- Windows + Ctrl + Shift + B: গ্রাফিক্স কার্ড রিসেট করুন। যদি আপনার পিসির স্ক্রিনে কোনও সমস্যা দেখা দেয়, এটি আপনার গ্রাফিক্স কার্ড রিসেট করতে পারে।
কেন শর্টকাট কী ব্যবহার করবেন?
শর্টকাট কী ব্যবহার করলে আপনার কাজের গতি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। কিবোর্ড শর্টকাটগুলো আপনাকে মাউস ব্যবহার করার চেয়ে দ্রুত কাজ করতে সাহায্য করে, যা প্রোডাক্টিভিটি বাড়ায়। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি মাউস দিয়ে একাধিক উইন্ডো মিনি-মাইজ করতে যান, তাহলে আপনাকে অনেকগুলো ক্লিক করতে হবে। কিন্তু Windows + D কী চাপলে এক মুহূর্তেই আপনি ডেস্কটপে চলে আসবেন। তেমনিভাবে Alt + Tab ব্যবহার করে দ্রুত অ্যাপ পরিবর্তন করলে সময় সাশ্রয় হয়।
উইন্ডোজ ১১ এর নতুনত্ব ও শর্টকাট কী
উইন্ডোজ ১১-এ নতুন কিছু শর্টকাট কী যুক্ত হয়েছে, যা পূর্বের উইন্ডোজ ভার্সনের থেকে একটু আলাদা। উদাহরণস্বরূপ, উইন্ডোজ ১১-এর নতুন অ্যাকশন সেন্টার এবং ভার্চুয়াল ডেস্কটপের সুবিধা পাওয়ার জন্য নতুন শর্টকাট কীগুলো ব্যবহার করা যায়। এটি ব্যবহারকারীদের আরও সহজে এবং সুবিধাজনকভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়। শর্টকাট কীগুলো উইন্ডোজ ব্যবহারকারীদের জন্য শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং তাদের কাজের দক্ষতাও বৃদ্ধি করে। প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য শর্টকাট কীগুলো আয়ত্ত করা অত্যন্ত জরুরি।
স্মার্টফোনের যত্ন নেওয়ার ১০ টি সেরা টিপস এন্ড ট্রিকস: আপনার ফোন নতুন থাকবে সবসময়