আদি কৃষ্ণগহ্বরগুলো মহাকাশে শূন্য গহ্বরবিশিষ্ট গ্রহাণু তৈরি করতে পারে

আদি কৃষ্ণগহ্বর (Primordial Black Holes) হলো এমন এক ধরনের কৃষ্ণগহ্বর, যা মহাবিশ্বের সূচনালগ্নে গঠিত হয়েছিল। এরা সাধারণ কৃষ্ণগহ্বরের তুলনায় অনেক ছোট হলেও অত্যন্ত ঘন। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, এই আদি কৃষ্ণগহ্বরগুলো মহাকাশে শূন্য গহ্বরবিশিষ্ট গ্রহাণু (Hollow Planetoids) তৈরি করতে পারে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন পদার্থে ক্ষুদ্র টানেল সৃষ্টি করতে পারে।

আদি কৃষ্ণগহ্বর কীভাবে তৈরি হয়েছিল?

আমরা জানি, কৃষ্ণগহ্বর সাধারণত তখন গঠিত হয়, যখন কোনো বৃহৎ নক্ষত্র তার জ্বালানি ফুরিয়ে নিজের মাধ্যাকর্ষণের কারণে ভেঙে পড়ে। তবে আদি কৃষ্ণগহ্বর গঠিত হয়েছিল মহাবিশ্বের শুরুতে, বিগ ব্যাং-এর সময় মহাজাগতিক সংকোচন থেকে।

আরও পড়ুনঃ পৃথিবীতে জীবনের শুরু কীভাবে হলো? বিজ্ঞানীরা এবার নতুন এক তথ্য খোঁজে পেলো

আদি কৃষ্ণগহ্বর এবং ডার্ক ম্যাটারের সম্পর্ক

আদি কৃষ্ণগহ্বর ডার্ক ম্যাটারের একটি সম্ভাব্য উৎস হতে পারে বলে মনে করা হয়। ডার্ক ম্যাটার হলো এক ধরনের রহস্যময় পদার্থ, যা মহাবিশ্বের ৮৫% ভর নিয়ে গঠিত। যদিও এখনও পর্যন্ত আদি কৃষ্ণগহ্বর সনাক্ত করা যায়নি, তবে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে এদের শনাক্ত করা সম্ভব হলে ডার্ক ম্যাটারের অনেক অমীমাংসিত প্রশ্নের সমাধান হতে পারে।

গবেষণার নতুন পদ্ধতি

সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে, আদি কৃষ্ণগহ্বরের উপস্থিতির প্রমাণ খুঁজে পেতে আমাদের পৃথিবীর প্রাচীন বস্তু এবং মহাকাশের গ্রহাণু পর্যবেক্ষণ করা উচিত। এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন ইউনিভার্সিটি অফ বাফেলোর গবেষক ড. ডেজান স্টোজকোভিচ এবং তার সহকর্মীরা।

শূন্য গহ্বরবিশিষ্ট গ্রহাণু

গবেষণা বলছে, যদি কোনো আদি কৃষ্ণগহ্বর কোনো গ্রহ বা গ্রহাণুর মধ্যে প্রবেশ করে, তবে সেটি সেই গ্রহের তরল কেন্দ্র শোষণ করে ফেলতে পারে। এর ফলে ওই গ্রহ বা গ্রহাণুর কেন্দ্রে একটি শূন্য গহ্বর সৃষ্টি হতে পারে। এই ধরনের গ্রহাণু বা গ্রহ শনাক্ত করতে টেলিস্কোপের সাহায্যে তাদের ঘনত্ব পরীক্ষা করা যেতে পারে। যদি কোনো বস্তু আকারের তুলনায় অনেক কম ঘন হয়, তবে সেটি শূন্য গহ্বরবিশিষ্ট হতে পারে। তবে গবেষণা বলছে, এই ধরনের বস্তু পৃথিবীর মতো বড় হতে পারে না; এগুলোর আকার পৃথিবীর দশভাগের এক ভাগের মতো হতে পারে।

ক্ষুদ্র টানেল সৃষ্টি

গবেষণা আরও বলছে, কোনো আদি কৃষ্ণগহ্বর যদি পৃথিবীর কোনো কঠিন বস্তু যেমন পাথর, ধাতু, বা কাচের মধ্য দিয়ে চলে যায়, তবে এটি একটি সরল টানেল রেখে যেতে পারে। এই টানেল ক্ষুদ্রতর, মাত্র ০.১ মাইক্রন পুরু হতে পারে।অতিপ্রাচীন বস্তু যেমন শত বছরের পুরনো ভবন এবং বিলিয়ন বছরের পুরনো শিলার মধ্যে এই ধরনের টানেলের সন্ধান করা যেতে পারে। যদিও এমন টানেল খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম (০.০০০০০১), তবুও এটি একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি।

নেপচুন এবং ইউরেনাসের চুম্বক রহস্য

কেন এই গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ?

ড. স্টোজকোভিচ বলেন, আদি কৃষ্ণগহ্বরের প্রমাণ খুঁজে পেতে আমাদের প্রচলিত পদ্ধতির বাইরে গিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করতে হবে। এই গবেষণার জন্য বেশি খরচের প্রয়োজন নেই, কিন্তু এটি সফল হলে মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।

পৃথিবীতে আদি কৃষ্ণগহ্বর কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে?

আপনার যদি চিন্তা হয় যে কোনো আদি কৃষ্ণগহ্বর আপনার শরীরের ভেতর দিয়ে যেতে পারে, তবে নিশ্চিন্ত থাকুন। গবেষণায় বলা হয়েছে, এটি কোনোভাবেই ক্ষতিকারক নয়। কারণ কৃষ্ণগহ্বর এত দ্রুতগতিতে চলে যে এটি কোনো জৈব পদার্থের ক্ষতি করতে পারে না। এটি কেবল একটি ক্ষুদ্র টানেল রেখে যাবে, যা মানব দেহের মতো নমনীয় পদার্থে টানেলের সৃষ্টি করবে না।

আদি কৃষ্ণগহ্বরের মাধ্যাকর্ষণ এবং স্থায়িত্ব

গবেষণাটি আরও দেখায়, আদি কৃষ্ণগহ্বরের মাধ্যাকর্ষণ এতটাই শক্তিশালী যে এটি তরল পদার্থ শোষণ করতে সক্ষম। এর ফলে যে শূন্য গহ্বর তৈরি হয়, তা অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট আকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। গবেষকরা বলছেন, এই ধরনের শূন্য গহ্বরযুক্ত বস্তু শুধুমাত্র ছোট গ্রহ বা গ্রহাণুর ক্ষেত্রেই টিকে থাকতে পারে। বড় গ্রহে এটি ধ্বসে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

ডার্ক ম্যাটার ও আদি কৃষ্ণগহ্বর অনুসন্ধান

আদি কৃষ্ণগহ্বর গবেষণার ক্ষেত্রে একটি নতুন পথ উন্মোচিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভবিষ্যতে উন্নত টেলিস্কোপ এবং নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই রহস্যময় বস্তুর প্রমাণ খুঁজে বের করা সম্ভব হবে। এছাড়াও, মহাকাশ এবং পৃথিবীর বিভিন্ন পদার্থের বিশ্লেষণ আমাদের এই বিষয়টি সম্পর্কে আরও জানার সুযোগ করে দেবে।

আদি কৃষ্ণগহ্বরের সন্ধান মহাজাগতিক বিজ্ঞানের একটি নতুন অধ্যায়। এই গবেষণা ডার্ক ম্যাটার এবং মহাবিশ্বের সূচনাকালীন ঘটনার অনেক রহস্য উন্মোচনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। পৃথিবীর প্রাচীন বস্তু এবং মহাকাশের গ্রহাণুগুলোতে এই ধরনের অনুসন্ধান নতুন যুগান্তকারী আবিষ্কারের পথ সুগম করতে পারে।

নতুন তাত্ত্বিক পদ্ধতি গ্রহণ এবং প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা হয়তো শীঘ্রই এই রহস্যময় আদি কৃষ্ণগহ্বরগুলোর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারব। বিজ্ঞানীদের এই প্রচেষ্টা আমাদের মহাবিশ্বের গভীরতর রহস্য উন্মোচনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

১১ বিলিয়ন বছরের মহাকাশ ইতিহাসের তত্ত্ব প্রকাশ করেছে ডিইএসআই (DESI)

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো