চীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি নিয়ে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি নতুন প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে চীনের উন্মুক্ত-উৎস এআই পদ্ধতি শুধু প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি চীনের রাজনৈতিক মূল্যবোধ এবং আদর্শকে বৈশ্বিক অবকাঠামোয় প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যবহৃত হচ্ছে।
আমেরিকান এজ প্রজেক্টের প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে চীন তাদের নিজস্ব উন্মুক্ত-উৎস পরিবেশকে আমেরিকান প্রযুক্তির বিকল্প হিসেবে গড়ে তুলছে এবং এটি একটি “ট্রোজান হর্স” হিসেবে ব্যবহার করছে। এর মাধ্যমে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) মূল্যবোধকে বৈশ্বিক প্রযুক্তিগত কাঠামোতে সংযুক্ত করা হচ্ছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনের তৈরি উন্মুক্ত-উৎস এআই সরঞ্জামগুলি ইতোমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ডে পশ্চিমা মডেলগুলিকে ছাড়িয়ে গেছে এবং তুলনামূলকভাবে অনেক কম খরচে পরিচালিত হচ্ছে। এই কারণেই এগুলি দ্রুত বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এবং ডিজিটাল সিল্ক রোড (ডিএসআর)-এর মাধ্যমে চীন তাদের প্রযুক্তি বিশ্বের ১৫৫টিরও বেশি দেশে রপ্তানি করছে, যা বৈশ্বিক নির্ভরতা বাড়াচ্ছে এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ক্ষুণ্ণ করছে। একই সাথে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে।
আরও পড়ুনঃ চীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকেও টক্কা দিচ্ছে
চীনের এআই মডেলগুলি ইতিহাসের এমন ঘটনাগুলো সেন্সর করছে, যা চীনকে নেতিবাচক আলোতে উপস্থাপন করতে পারে। এছাড়া, এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনকে অস্বীকার বা কম গুরুত্ব দেয় এবং চীনা রাজনৈতিক নেতাদের সমালোচনা ফিল্টার করে। চীনের এই এআই কৌশলের ভিত্তি হলো ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলারের একটি মহাপরিকল্পনা, যা ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক প্রযুক্তি দখলের লক্ষ্য নিয়েছে। উন্মুক্ত-উৎস পদ্ধতি তাদের এআই কৌশলের মূল স্তম্ভ।
পশ্চিমা কোম্পানিগুলি যেখানে তাদের অর্থের উপর নির্ভরশীল, অর্থাৎ পেইড এবং প্রোপ্রাইটারি এআই মডেল তৈরিতে মনোযোগ দিচ্ছে, সেখানে চীন দ্রুত এবং বিনামূল্যে অথবা স্বল্প খরচে এআই সরঞ্জাম সরবরাহ করছে। এর ফলে, চীনের এআই প্রযুক্তি দ্রুত বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাতে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করছে। বেইজিংয়ের লক্ষ্য হলো তাদের সিস্টেম এবং মানসমূহকে বৈশ্বিক আর্থিক, উৎপাদন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। সরকারের সাথে সমন্বিত উদ্যোগে চীন বৈশ্বিক প্রযুক্তির মানচিত্রকে পুনর্গঠন করছে এবং তাদের মূল্যবোধ এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বৈশ্বিক সিস্টেমে প্রোগ্রাম করছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, যেখানে আমেরিকা এবং ইউরোপীয় দেশগুলো এআই নিয়ন্ত্রণকে প্রাধান্য দিচ্ছে, সেখানে চীন তাদের এআই প্রযুক্তি বৈশ্বিক বাজারে দ্রুত ছড়িয়ে দিচ্ছে। চীনের এই কৌশলটি তাদের সফল ৫জি প্রযুক্তি বাস্তবায়নের মতোই। সেখানে হুয়াওয়ে দ্রুত এবং স্বল্প খরচে বাজার দখল করেছিল, যা পশ্চিমা দেশগুলো সময়মতো প্রতিরোধ করতে পারেনি। বর্তমানে, চীনের একটি প্রতিষ্ঠান, আলিবাবা ক্লাউড, একাই ১০০টিরও বেশি উন্মুক্ত-উৎস মডেল প্রকাশ করেছে, যা ২৯টি বিভিন্ন ভাষায় কার্যকর।
এই পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে থাকা এআই প্রযুক্তি রক্ষা করার জন্য নীতিমালা সুপারিশ করা হয়েছে। এতে উল্লেখ রয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রকে উন্মুক্ত এবং প্রোপ্রাইটারি এআই প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বৈশ্বিক নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, একতরফাভাবে এআই সিস্টেম রপ্তানি বা অ্যাক্সেসের উপর বিধিনিষেধ আরোপ থেকে বিরত থাকতে হবে। ডগ কেলি, আমেরিকান এজ প্রজেক্টের সিইও, ফক্স নিউজ ডিজিটালকে বলেছেন, “যদি আমেরিকা উন্মুক্ত এবং প্রোপ্রাইটারি উভয় ক্ষেত্রেই এআই প্রযুক্তির বৈশ্বিক দৌড়ে হেরে যায়, তবে চীনের স্বৈরাচারী সিস্টেমগুলো ভবিষ্যতকে নির্ধারণ করবে। ওয়াশিংটনের নীতিনির্ধারকরা এটি ঘটতে দিতে পারেন না।”
প্রতিবেদনে উপসংহারে বলা হয়েছে, চীনের নেতৃত্বে থাকা এআই উন্নয়নের প্রভাব অত্যন্ত গভীর। “চীনের তৈরি এআই সিস্টেমগুলো যদি বৈশ্বিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং মানবতার জন্য একটি বড় ধাক্কা হবে।” সেন্টার ফর নিউ আমেরিকান সিকিউরিটির মতে, চীনা এআই সিস্টেমের বৈশ্বিক বিস্তার আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোর প্রতি উদাসীনতাকে বৈশ্বিক প্রযুক্তির অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করবে? এর বিস্তারিত তথ্য