২০২৬ সালে নাসা চাঁদে মানুষ পাঠানোর লক্ষ্যে ওরিয়ন ক্যাপসুলের পুনঃ ডিজাইন করছে

২০২২ সালে আর্টেমিস-১ মিশনের ২৫ দিনের সফল যাত্রা শেষে ওরিয়ন ক্যাপসুল প্রশান্ত মহাসাগরে অবতরণ করে। অবতরণের পর দেখা যায় যে ক্যাপসুলের তাপ ঢালে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। এই ঘটনাটি নাসাকে ভবিষ্যতের ক্রু মিশনের জন্য আরও উন্নত তাপ ঢাল তৈরি করতে বাধ্য করে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে, বাজা ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে, ইউএসএস পোর্টল্যান্ড জাহাজের ডেকে অপেক্ষমাণ নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা আকাশে তাকিয়ে ছিলেন। হঠাৎ দূর থেকে একটি উজ্জ্বল আলো দেখা যায়। দ্রুত গতিতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের দিকে এগিয়ে আসছিল নাসার ওরিয়ন ক্যাপসুল। এটি আর্টেমিস-১ মিশনের সমাপ্তি ছিল, যা চাঁদের চারপাশে এবং তার বাইরেও ভ্রমণ করেছিল। ওরিয়নের পুনঃপ্রবেশ ছিল অত্যন্ত নির্ভুল এবং খাড়া। ক্যাপসুলটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার সময় অবিশ্বাস্য গতিতে নেমে আসে এবং তারপর তিনটি বড় লাল-সাদা প্যারাসুট ব্যবহার করে গতি কমিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে নিরাপদে অবতরণ করে। ক্যাপসুলটি ২৭০,০০০ মাইল (৪৩৫,০০০ কিলোমিটার) ভ্রমণ করার পর সম্পূর্ণ সুরক্ষিত অবস্থায় ইউএসএস পোর্টল্যান্ড থেকে উত্তোলিত হয়। তবে, এর তাপ ঢালে বড় ফাটল দেখা যায়।

আরও পড়ুনঃ নাসা কেন মানুষকে এখন আর চাঁদে পাঠাচ্ছেনা ? কি এর রহস্য ?

তাপ ঢালটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ, যা ৫,০০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (২,৭৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপমাত্রা সহ্য করে। এত উচ্চ তাপমাত্রায় কিছুটা ক্ষতি হওয়া স্বাভাবিক। তবে, নাসার লক্ষ্য হলো এমন একটি তাপ ঢাল তৈরি করা যা ভবিষ্যতের ক্রুদের নিরাপদ রাখতে সক্ষম। আর্টেমিস-১ ছিল একটি মানববিহীন মিশন, কিন্তু ২০২৬ সালে নাসা চাঁদে মানুষ পাঠানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে নাসা। তাই, এই ধরনের ক্ষতি ভবিষ্যতের মিশনে ঝুঁকির কারণ হতে পারে।

ওরিয়নের তাপ ঢালটি একটি বিশেষ উপাদান দিয়ে তৈরি, যা নোভোলাক নামে পরিচিত। এটি একধরনের রেজিন যা ফাইবারগ্লাস থ্রেডের হানিকম্ব কাঠামোর মধ্যে শোষিত হয়। তাপ ও বায়ুর প্রবাহের কারণে রেজিন গলে যায় এবং চার নামে পরিচিত একটি কালো স্তর তৈরি করে। এই চার স্তরটি দ্বিতীয় তাপ প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে। তবে, ২০২২ সালের পুনঃপ্রবেশে, তাপ ঢালের বাইরের স্তরগুলি গলে গিয়ে ফাটল তৈরি করে। নাসার বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, পুনঃপ্রবেশের সময় বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে ঢালটি গলে গ্যাস তৈরি করেছিল। এই গ্যাস পরবর্তীতে তাপের কারণে প্রসারিত হয়ে ফাটল সৃষ্টি করে। এই সমস্যা দূর করতে নাসা নতুন তাপ ঢাল ডিজাইন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

নাসা আর্টেমিস-২ মিশনের জন্য নতুন তাপ ঢাল ডিজাইন এবং উন্নয়নের কাজ শুরু করেছে। নতুন তাপ ঢাল তৈরির সময় নাসা যেসব বিষয় বিবেচনা করছে তার মধ্যে অন্যতম হলো তাপ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি, ঢালের কাঠামোগত স্থায়িত্ব এবং দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারের জন্য উপযুক্ততা। নাসা নতুন উপকরণ এবং প্রক্রিয়া পরীক্ষা করছে যা তাপ ঢালের কার্যকারিতা বাড়াবে। উদাহরণস্বরূপ, নাসা উন্নত রেজিন ব্যবহার করে তাপ ঢালের বাইরের স্তর তৈরি করার পরিকল্পনা করছে যা তাপ এবং চাপ আরও ভালোভাবে সহ্য করতে পারবে।

বিজ্ঞানীরা রহস্যময় ডার্ক কমেট এর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আবিষ্কার করেছেন

অতিরিক্তভাবে, তাপ ঢালের কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য উন্নত সিমুলেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এই প্রযুক্তি তাপ ঢালের উপর সম্ভাব্য প্রভাব পরীক্ষা করতে সহায়তা করছে এবং এর দুর্বলতা চিহ্নিত করছে। এর ফলে নাসা উন্নত ডিজাইন তৈরি করতে পারবে যা ভবিষ্যতের মিশনের জন্য আরও নিরাপদ হবে।

নাসার লক্ষ্য ২০২৬ সালে আর্টেমিস-২ মিশনে প্রথম মানব ক্রুকে চাঁদের চারপাশে পাঠানো। এর জন্য, তাপ ঢাল ছাড়াও ক্যাপসুলের অন্যান্য নিরাপত্তা উপাদানগুলিও উন্নত করা হচ্ছে। যেমন, প্যারাসুট সিস্টেমের কার্যকারিতা পরীক্ষা এবং নিশ্চিত করা হচ্ছে যাতে এটি প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নির্ভরযোগ্য থাকে। নাসা আর্টেমিস-৩ মিশনের জন্য আরও দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই মিশনে, চাঁদে মানব স্থাপনা তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। তাই, তাপ ঢাল এবং অন্যান্য নিরাপত্তা প্রযুক্তির উন্নয়ন এই মিশনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নাসার ওরিয়ন ক্যাপসুল এবং এর তাপ ঢালের উন্নয়ন ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। তাপ ঢালের চ্যালেঞ্জ এবং উন্নয়নের প্রচেষ্টা নাসাকে আরও নিরাপদ এবং কার্যকর মহাকাশ মিশন পরিচালনায় সক্ষম করে তুলবে। এর ফলে, মানবজাতি চাঁদ এবং তার বাইরের অঞ্চলে আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে।

আরও পড়ুনঃ আদি কৃষ্ণগহ্বরগুলো মহাকাশে শূন্য গহ্বরবিশিষ্ট গ্রহাণু তৈরি করতে পারে

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো