২০২৫ সাল হবে এমন একটি বছর যখন আমাদের ইমেইল ব্যবহার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন পড়বে। কারণ বর্তমানে ইমেইল সিস্টেম আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় একটি ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জিইমেইল নিরাপত্তা এবং এর ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করার সময়, বর্তমান প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং সাইবার ঝুঁকির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে আসে। প্রথমেই জানা দরকার কেন ইমেইল প্রযুক্তি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। ইমেইল একটি প্রাথমিক যোগাযোগ প্রযুক্তি যা অনেক বছর আগে তৈরি হয়েছিল। এর মূল স্থাপত্যে খুব কম পরিবর্তন এসেছে। এটি এমন একটি প্রযুক্তি যেখানে যে কেউ একটি ইমেইল ঠিকানা জানলে সহজেই অন্য কারো ইনবক্সে প্রবেশ করতে পারে। এসব ঠিকানা প্রায়শই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে ফাঁস হয় বা অনলাইনে সহজলভ্য হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুনঃ (Cybersecurity) সাইভার নিরাপত্তার গুরুত্ব পূর্ণ কিছু টিপস এন্ড ট্রিক্স: যা আপনার অবশ্যই জানা প্রয়োজন
স্প্যাম এবং ফিশিং ইমেইলের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। বর্তমানে, একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ইমেইল ট্রাফিকের প্রায় ৪৬.৮ শতাংশই স্প্যাম। এর মধ্যে অনেক ইমেইল সাইবার অপরাধীদের তৈরি, যারা আরও উন্নত এআই ব্যবহার করে আরও বিশ্বাসযোগ্য ফিশিং বার্তা তৈরি করছে। এমন বার্তাগুলো দেখতে এতটাই প্রকৃত মনে হয় যে অনেকেই প্রতারণার শিকার হন।
গুগল, বিশ্বের বৃহত্তম ইমেইল প্রদানকারী, ইতিমধ্যেই এআই ভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইমেইলের নিরাপত্তা উন্নত করার চেষ্টা করছে। গুগলের নতুন লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (এলএলএম) স্প্যাম, ফিশিং এবং ম্যালওয়্যারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। এটি গুগলের প্রতিরক্ষাকে আরও কার্যকর করেছে এবং প্রতিদিন প্রায় ২০ শতাংশ বেশি স্প্যাম আটকাচ্ছে। তবে এআই যখন আমাদের সাহায্য করছে, তখন একই প্রযুক্তি সাইবার অপরাধীদের হাতেও পড়ছে। তারা উন্নতমানের প্রতারণামূলক ইমেইল তৈরি করছে, যা সনাক্ত করা কঠিন।
ইমেইলের নিরাপত্তা বাড়াতে কিছু নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাপল তাদের “হাইড মাই ইমেইল” ফিচার চালু করেছে, যা ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত ইমেইল ঠিকানা গোপন রাখতে সহায়তা করে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা একাধিক ভিন্ন ভিন্ন ইমেইল ঠিকানা তৈরি করতে পারেন, যা তাদের মূল ইমেইল ঠিকানায় ফরওয়ার্ড হয়। এভাবে তাদের আসল ঠিকানাটি গোপন থাকে এবং তারা নিরাপদ থাকেন। গুগলও এরকম একটি ফিচার আনতে যাচ্ছে, যার নাম “শিল্ডেড ইমেইল“। এটি ব্যবহারকারীদের জন্য এককালীন বা সীমিত সময়ের জন্য ইমেইল অ্যালিয়াস তৈরি করার সুযোগ দেবে।
এই সমস্ত নতুন ফিচার থাকা সত্ত্বেও, ইমেইলের নিরাপত্তা সমস্যা পুরোপুরি সমাধান নাও হতে পারে। তাই এইসব প্রযুক্তির পাশাপাশি আরো কিছু বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। নিচে কিছু নিরাপত্তা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
১। ডিভাইস ভিত্তিক এআই ব্যবহার
ইমেইলের নিরাপত্তা বাড়াতে ডিভাইস ভিত্তিক এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীর ডিভাইসেই সন্দেহজনক ইমেইল সনাক্ত করা সম্ভব হবে। যেমন, এমন ইমেইল যেখানে প্রেরকের প্রকৃত ইমেইল ঠিকানা এবং প্রদর্শিত ঠিকানা মেলে না, সেগুলো সহজেই ব্লক করা যাবে।
এবার জিমেইল গোপন রেখেই কাজ করতে পারবেন, গুগল এর নতুন ফিচার “শিল্ডেড ইমেইল”
২। বিশ্বস্ত প্রেরকের জন্য অনুমোদন ব্যবস্থা
ইমেইল সিস্টেমে এমন একটি ব্যবস্থা চালু করা দরকার, যেখানে ব্যবহারকারী শুধুমাত্র তাদের পরিচিত বা অনুমোদিত প্রেরকদের কাছ থেকে ইমেইল গ্রহণ করতে পারবেন। এটি মেসেজিং অ্যাপের মতো একটি নিরাপত্তা স্তর যোগ করবে।
৩। সামনের সারির নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করা
ইমেইল সুরক্ষার জন্য কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় ফিল্টারিংয়ের উপর নির্ভর না করে, ব্যবহারকারীদের ডিভাইসে নিরাপত্তা প্রযুক্তি স্থাপন করা উচিত। যেমন, ব্রাউজার নিরাপত্তার জন্য ডিভাইসে সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলো যুক্ত করা হয়, তেমনই ইমেইলের ক্ষেত্রেও এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
৪। নতুন ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার শুরু করা
যদি আপনার পুরনো ইমেইল ঠিকানা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, তবে এটি স্প্যাম এবং সাইবার আক্রমণের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এ কারণে ২০২৫ সালে আপনার নতুন একটি প্রাথমিক ইমেইল ঠিকানা তৈরি করা উচিত। পুরনো ঠিকানা থেকে নতুন ঠিকানায় ধীরে ধীরে স্থানান্তর করুন এবং স্প্যাম ফিল্টার ও ফোল্ডার ব্যবহার করে পুরনো ইমেইল গুলো পরিচালনা করুন।
৫। ইমেইল ঠিকানা গোপন রাখতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার
ইমেইল ঠিকানা গোপন রাখার জন্য “হাইড মাই ইমেইল” বা “শিল্ডেড ইমেইল” প্রযুক্তি ব্যবহার করা জরুরি। তবে মনে রাখতে হবে, যদি আপনার প্রাথমিক ইমেইল ঠিকানাটি ইতিমধ্যেই ফাঁস হয়ে থাকে, তবে এই প্রযুক্তিগুলো তেমন কার্যকরী হবে না। সেক্ষেত্রে একটি নতুন ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার করা ভালো।
২০২৫ সাল আমাদের জন্য ইমেইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর হতে যাচ্ছে। সাইবার অপরাধের বিপরীতে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে এখনই সময় এসেছে। ইমেইল নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা একটি নিরাপদ ডিজিটাল জগৎ গড়ে তুলতে পারি।
আরও পড়ুনঃ (Cybersecurity) সাইবার সিকিউরিটি কি? এবং এর A টু Z