নাসা এবং ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (আইএসআরও) যৌথভাবে একটি অত্যাধুনিক উপগ্রহ তৈরি করেছেন যার নাম নিসার (NISAR)। নিসার উপগ্রহটি ২০২৫ সালের মার্চ মাসে উৎক্ষেপণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। নিসার (নাসা আইএসআরও সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার) পৃথিবীর ভূমি এবং বরফের পৃষ্ঠতলের পরিবর্তনগুলো পর্যবেক্ষণ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এই উপগ্রহটি প্রতি ১২ দিনে একবার করে পুরো পৃথিবী পর্যবেক্ষণ করবে। এটি উৎক্ষেপিত হবে ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে।
নিসার মিশনটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার ফল, যেখানে নাসার মহাকাশ পর্যবেক্ষণ দক্ষতা এবং আইএসআরও-এর উন্নত রাডার প্রযুক্তি একত্রিত হয়েছে। এই মিশনের মূল লক্ষ্য পৃথিবীর পৃষ্ঠের পরিবর্তন সম্পর্কে আরও গভীর জ্ঞান অর্জন করা। নিসার উন্নত রাডার চিত্রায়ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে পৃথিবীর ইকোসিস্টেম, বরফের স্তর এবং ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার বিষয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রদান করবে।
আরও পড়ুনঃ ২০২৬ সালে নাসা চাঁদে মানুষ পাঠানোর লক্ষ্যে ওরিয়ন ক্যাপসুলের পুনঃ ডিজাইন করছে
এই উপগ্রহে একটি অত্যাধুনিক দ্বৈত-ফ্রিকোয়েন্সি রাডার সিস্টেম থাকবে, যা ভূমি এবং বরফের পৃষ্ঠ পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম। নিসার ভূমির পরিবর্তন, উদ্ভিদের বৃদ্ধি, বরফের স্তরের গতিশীলতা পরিমাপ, ভূমিকম্প এবং ভূমিধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ পর্যবেক্ষণ, এবং দীর্ঘমেয়াদী জলবায়ু পরিবর্তন অধ্যয়ন করবে। এর মাধ্যমে নিসার কেবল পরিবেশ ব্যবস্থাপনা এবং দুর্যোগ প্রতিক্রিয়ার উন্নতিতে নয়, এটি পৃথিবীর বিভিন্ন জটিল প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে আরও ভালোভাবে বোঝার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক হবে।
উপগ্রহটি একাধিক বৈশিষ্ট্যের জন্য প্রশংসিত, যেমন এটি ভূতাত্ত্বিক বিপদ, বরফ স্তরের গলন এবং জলবায়ুর দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তন সম্পর্কে উচ্চ রেজোলিউশনের তথ্য সরবরাহ করবে। প্রতি ১২ দিনে একবার পৃথিবীর ভূমি এবং বরফের পৃষ্ঠ পর্যবেক্ষণ করে, এটি অনেক বড় এলাকায় দ্রুত পরিবর্তনের চিত্র সরবরাহ করবে। এই তথ্য গবেষকদের উদ্ভিদ এবং পরিবেশ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে সহায়তা করবে। উদাহরণস্বরূপ, নিসার কৃষি জমি এবং বনাঞ্চলের অবস্থা বিশ্লেষণ করে খাদ্য নিরাপত্তা উন্নত করার জন্য ব্যবস্থাপনা কৌশল তৈরি করতে সাহায্য করবে।
এছাড়া, নিসার প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস এবং প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। ভূমিধস বা ভূমিকম্পের মতো ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে, এটি মানুষের জীবন এবং সম্পত্তি রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করবে। বরফ স্তরের গলন বা সমুদ্র স্তরের পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সম্ভাব্য হুমকি বিশ্লেষণ করাও এর আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য।
নিসার মিশন শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি চমৎকার উদাহরণ। নাসা এবং আইএসআরও একত্রে কাজ করে এই মিশনকে সফল করতে তাদের অভিজ্ঞতা এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতাকে কাজে লাগিয়েছে। এই সহযোগিতা প্রমাণ করে যে বৈশ্বিক সমস্যাগুলোর সমাধান করার জন্য বিভিন্ন দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা কতটা কার্যকর হতে পারে।
নাসার পক্ষ থেকে উন্নত রাডার প্রযুক্তি এবং মহাকাশ পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা যোগ করা হয়েছে, অন্যদিকে আইএসআরও তাদের উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তিগত নৈপুণ্য দিয়ে এই প্রকল্পে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। নিসারের রাডার সিস্টেমের বিশেষত্ব হলো এটি এল-ব্যান্ড এবং এস-ব্যান্ড ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে, যা এর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতাকে আরও উন্নত করে। এল-ব্যান্ড ফ্রিকোয়েন্সি উদ্ভিদের পরিবর্তন এবং ভূতাত্ত্বিক বিপদ পর্যবেক্ষণে কার্যকর, আর এস-ব্যান্ড বরফ এবং সমুদ্রের পৃষ্ঠের গতিশীলতা পর্যবেক্ষণে বিশেষভাবে উপযোগী।
এই মিশনের একটি বড় অর্জন হলো পরিবেশ সংরক্ষণ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অবদান রাখা। নিসার থেকে প্রাপ্ত তথ্য কৃষি, বন সংরক্ষণ, এবং শহুরে পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, নির্ভুল ডেটার মাধ্যমে শহর পরিকল্পনাকারীরা ভূমিধস বা বন্যার মতো দুর্যোগ থেকে সুরক্ষিত এলাকা চিহ্নিত করতে পারবেন। এছাড়া, এটি জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং পৃথিবীর জটিল প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগুলো সম্পর্কে বোঝাপড়া বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
১১ বিলিয়ন বছরের মহাকাশ ইতিহাসের তত্ত্ব প্রকাশ করেছে ডিইএসআই (DESI)