মঙ্গলের দক্ষিণ মেরুর শীতকালীন বরফাবৃত দৃশ্য : মঙ্গল এক্সপ্রেস মিশনের তোলা ছবি

মঙ্গল গ্রহের একটি অসাধারণ দৃশ্য সম্প্রতি ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ইএসএ)-এর মঙ্গল এক্সপ্রেস অরবিটার ধারণ করেছে। ছবিগুলোতে দেখা যায়, লালচে বর্ণের মঙ্গলগ্রহের দক্ষিণ মেরু অংশটি সাদা বরফে আবৃত। তবে এটি সাধারণ বরফ নয়। এটি মূলত কার্বন ডাই অক্সাইডের বরফ এবং ধূলিকণার স্তর, যা অস্ট্রেল স্কোপুলি অঞ্চলে এই চমকপ্রদ দৃশ্য তৈরি করেছে।

মঙ্গলের শীতকালীন ঋতুতে তাপমাত্রা প্রায় -১৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা -১২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যায়। এত ঠান্ডা আবহাওয়া সত্ত্বেও, মঙ্গলে খুব বেশি বরফ পড়ে না। পৃথিবীর মতো পানি-বরফের পাশাপাশি মঙ্গলে শুষ্ক বরফ বা কার্বন ডাই অক্সাইডের বরফও পাওয়া যায়। তবে পানি-বরফ মঙ্গলের পাতলা বায়ুমণ্ডলের কারণে জমাট বাঁধার আগেই বাষ্পীভূত হয়ে যায়। অন্যদিকে, শুষ্ক বরফ সরাসরি মাটিতে পৌঁছায় এবং সেখানে সঞ্চিত হয়।

আরও পড়ুনঃ মঙ্গল গ্রহে লেনদেন হবে ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে : নিউরোমর্ফিক কম্পিউটিং

মঙ্গলের দক্ষিণ মেরুর এই চমৎকার দৃশ্যটি ধারণ করা হয়েছিল জুন মাসে, যখন মঙ্গলের দক্ষিণ গোলার্ধে প্রায় গ্রীষ্মকাল শুরু হওয়ার সময়। সূর্যের তাপ শীতকালীন বরফের স্তরগুলিকে ধীরে ধীরে গলিয়ে দিচ্ছিল। ছবির বাম অংশে দেখা যায়, অন্ধকারে ধূলিকণা জমে যাওয়ার ফলে বরফের স্তরগুলো সংকুচিত হচ্ছে। সূর্যের আলো শুষ্ক বরফের স্বচ্ছ উপরের স্তর ভেদ করে নিচের বরফকে সরাসরি বাষ্পে রূপান্তরিত করে। এতে সৃষ্ট চাপের ফলে বরফের উপরের স্তর ফেটে যায় এবং গ্যাসের প্রবাহ প্রবলভাবে বেরিয়ে আসে। এই প্রবাহ ধূলিকণাকে সাথে নিয়ে পাখার মতো আকৃতি তৈরি করে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে।

মঙ্গলের অস্ট্রেল স্কোপুলির এই দৃশ্যে বরফ ও ধূলিকণার স্তর একে অপরের সঙ্গে মিশে একটি ঘূর্ণায়মান স্বপ্নময় পরিবেশ তৈরি করেছে। ছবিগুলো মঙ্গল এক্সপ্রেস-এর হাই রেজল্যুশন স্টেরিও ক্যামেরা দ্বারা ধারণ করা হয়েছে, যা মঙ্গলের ভূখণ্ডের ডিজিটাল টেরেন মডেল তৈরি করতে সক্ষম। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে মঙ্গলপৃষ্ঠের ফ্যান আকৃতির ধূলিকণার প্যাটার্ন এবং বিভিন্ন স্তরের সীমারেখা স্পষ্টভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে।

২০০৩ সালে মঙ্গল এক্সপ্রেস মিশন চালু হয়। ইএসএর এই মহাকাশযান গত দুই দশকে মঙ্গল সম্পর্কে বিস্ময়কর সব তথ্য প্রদান করেছে। এটি মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলের রাসায়নিক উপাদানগুলোর সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ মানচিত্র তৈরি করেছে, মঙ্গলের দুটি উপগ্রহ ফোবোস এবং ডেইমোসের বিশদ পর্যবেক্ষণ করেছে এবং মঙ্গলে পানির ইতিহাস অনুসন্ধান করেছে। মঙ্গল এক্সপ্রেস মিশনটি একটি ল্যান্ডার, বিগল ২, বহন করেছিল। তবে এটি মঙ্গলে অবতরণ করার সময় হারিয়ে যায় এবং কোনো বৈজ্ঞানিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি। কিন্তু অরবিটারটি মঙ্গলের বৈশিষ্ট্য বোঝার জন্য অমূল্য ডেটা সরবরাহ করেছে।

মঙ্গলের শীতকালীন বরফের এই ছবিগুলো পৃথিবীর মানুষকে আরেকটি গ্রহের বিচিত্র পরিবেশ সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি, পৃথিবী এবং মঙ্গলের মধ্যে পরিবেশগত কতটা ভিন্নতা রয়েছে। মঙ্গলের এ ধরনের তথ্য ভবিষ্যতের গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিক উন্মোচন করতে সহায়ক হবে। মঙ্গলের এই বরফাবৃত দৃশ্যের পিছনে যে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া কাজ করে তা অত্যন্ত আকর্ষণীয়। শুষ্ক বরফ বা কার্বন ডাই অক্সাইডের জমাট স্তর যখন সূর্যের আলোয় উত্তপ্ত হয়, তখন এর নিচে আটকে থাকা গ্যাস দ্রুত প্রসারিত হয়। এতে বরফের উপরের স্তর ফেটে গিয়ে গ্যাসের প্রবাহের সঙ্গে ধূলিকণা উপরের দিকে উঠে আসে। এ ধরনের ঘটনা মঙ্গলের আবহাওয়া এবং ভৌগোলিক গঠন সম্পর্কে নতুন তথ্য জানার সুযোগ করে দেয়।

মঙ্গলের পরিবেশ এবং এর ভৌগোলিক বৈচিত্র্য ভবিষ্যতে মহাকাশ গবেষণা এবং মঙ্গল অভিযানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করছে। মঙ্গলের এই শীতকালীন দৃশ্য আমাদের মহাকাশ বিজ্ঞানের নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচনে উৎসাহিত করছে। এই প্রবন্ধের তথ্যগুলো ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা এবং মঙ্গল এক্সপ্রেস মিশনের প্রাপ্ত ডেটার উপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করা হয়েছে।

২০২৬ সালে নাসা চাঁদে মানুষ পাঠানোর লক্ষ্যে ওরিয়ন ক্যাপসুলের পুনঃ ডিজাইন করছে

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো