“বোরিং বিলিয়ন” সময়কালে জীবনের বিবর্তন এবং বৈচিত্র্যের ধীর গতির রহস্য উদঘাটন

জীবনের ইতিহাসে “বোরিং বিলিয়ন” নামে পরিচিত একটি সময়কাল রয়েছে, যা প্রায় ১.৮ বিলিয়ন বছর আগে শুরু হয়ে ৭২০ মিলিয়ন বছর আগে শেষ হয়েছিল। এই সময়ে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যে উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি, আর এটি কেন ঘটেছিল তা বিজ্ঞানীদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে একটি রহস্য হয়ে থেকে যায়। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় এই সময়কাল সম্পর্কে নতুন কিছু তথ্য উঠে এসেছে যা এই বোরং বিলিয়ন সম্পর্কে আমাদের জানতে আরো সাহায্য করবে।

“বোরিং বিলিয়ন” বলতে এমন একটি সময়কালকে বোঝায়, যখন প্রাণী ও উদ্ভিদের বিবর্তন ধীর গতিতে চলছিল। এই সময়ে প্রাণের বৈচিত্র্য স্থিতিশীল ছিল এবং প্রজাতির পরিবর্তনের হার ছিল খুবই কম। ভার্জিনিয়া টেকের একদল বিজ্ঞানী এই সময়কালকে নিয়ে নতুন গবেষণা করেছেন, যা সম্প্রতি জার্নাল সায়েন্স-এ প্রকাশিত হয়েছে। তাদের গবেষণা জীবনের বিবর্তনের একটি বিস্তৃত ইতিহাস উপস্থাপন করেছে।

আরও পড়ুনঃ পৃথিবীতে জীবনের শুরু কীভাবে হলো? বিজ্ঞানীরা এবার নতুন এক তথ্য খোঁজে পেলো

এই গবেষণায় জানা যায়, পৃথিবীর প্রথম ইউক্যারিওটস বা কোষে নিউক্লিয়াস থাকা প্রাণীগুলি ১.৮ বিলিয়ন বছর আগে উদ্ভূত ছিল। তারা ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়ে ১.৪৫ বিলিয়ন থেকে ৭২০ মিলিয়ন বছর আগ পর্যন্ত একটি স্থিতিশীল অবস্থায় ছিল। এই সময়ে তাদের বিবর্তনের হার খুবই ধীর ছিল এবং তারা অনেক দিন টিকে থাকত। এ কারণে এই সময়কালকে “বোরিং বিলিয়ন” নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

তবে “বোরিং বিলিয়ন” এর পর পৃথিবী অভূতপূর্ব পরিবর্তনের সাক্ষী হয়। ৭২০ মিলিয়ন থেকে ৬৩৫ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী অন্তত দুইবার সম্পূর্ণ বরফে আচ্ছাদিত হয়েছিল। এই ঘটনাগুলি “স্নোবল আর্থ” নামে পরিচিত। এই গ্লোবাল আইস এজ বা বরফ যুগগুলি পৃথিবীর জলবায়ু এবং পরিবেশকে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন করে। বরফ গলে যাওয়ার পর, জীবের বিবর্তনের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। এই সময়কালেই প্রাণীর জগতে নতুন উন্মোচন বলে বিবেচিত হয়।

বিজ্ঞানীদের মতে, “স্নোবল আর্থ” এর পর বিবর্তনের গতি বেড়ে যাওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে একটি প্রধান কারণ হতে পারে পরিবেশগত পরিবর্তন, যেমন বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি। অক্সিজেনের উচ্চ স্তর প্রাণীদের দ্রুত বিবর্তনে সহায়ক ছিল। এছাড়া, বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে প্রতিযোগিতা এবং বিবর্তনমূলক অস্ত্র দৌড়ও একটি বড় কারণ হতে পারে। এই প্রতিযোগিতা জীবজগতে নতুন বৈচিত্র্যের জন্ম দেয়।

ভার্জিনিয়া টেক-এর গবেষক শুহাই শিয়াও এবং তার দল এই সময়কাল নিয়ে বিশদ বিশ্লেষণ করেছেন। তারা প্রোটেরোজোইক যুগের জীবের বৈচিত্র্য নিয়ে একটি উচ্চ-রেজোলিউশন ডেটাবেস তৈরি করেছেন। প্রোটেরোজোইক যুগটি ২,৫০০ মিলিয়ন বছর থেকে ৫৩৯ মিলিয়ন বছর আগে পর্যন্ত বিস্তৃত। তাদের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে এই যুগের প্রাণীগুলি বেশিরভাগই ছোট এবং কোমল প্রকৃতির ছিল। এদের মধ্যে অনেকেই খনিজ কঙ্কাল তৈরি করতে সক্ষম ছিল না, যার কারণে তারা খুব কমই ফসিল আকারে সংরক্ষিত হয়েছে।

শুহাই শিয়াওর বলেছেন , “আমরা এই গবেষণার মাধ্যমে জীবনের বিবর্তন এবং পৃথিবীর বিবর্তনের মধ্যে সমান্তরাল সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছি। এই সময়ে ইউক্যারিওটিক প্রজাতির বিবর্তনের গতি এবং বৈচিত্র্যের স্তর পর্যবেক্ষণ করে আমরা নতুন কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করতে পেরেছি। উদাহরণস্বরূপ, কেন ‘বোরিং বিলিয়ন’ এর সময় বিবর্তন এত ধীর ছিল? আর স্নোবল আর্থের পর বিবর্তন কেন এত দ্রুত হল?”

এই গবেষণার ফলাফল ভবিষ্যতের বিজ্ঞানীদের জন্য এক নতুন সূচনা তৈরি করবে। তারা এই তথ্য ব্যবহার করে জীবনের বিবর্তন এবং পৃথিবীর পরিবেশগত পরিবর্তনের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আরও বিশদ গবেষণা করতে পারবেন। যেমন, স্নোবল আর্থের সময়ে পরিবেশগত চাপ জীবজগতে কীভাবে পরিবর্তন এনেছিল, তা আরও ভালোভাবে বোঝা যাবে। সার্বিকভাবে, “বোরিং বিলিয়ন” এর রহস্য উন্মোচনে এই গবেষণা একটি বড় পদক্ষেপ। এটি জীবনের বিবর্তনের দীর্ঘ ইতিহাসকে একটি নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। ভবিষ্যতে এই সময়কাল নিয়ে আরও গবেষণা হয়ত জীবনের উৎপত্তি এবং বৈচিত্র্যের গতি সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা দিতে পারবে।

পৃথিবী ও প্রাণের সৃষ্টির রহস্য : কি কেন ও কিভাবে ?

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো