সিটি স্ক্যান কি? সিটি স্ক্যান কেন করা? এই নিয়ে বিস্তারিত তথ্য

সিটি স্ক্যানের পূর্ণরূপ হলো “কম্পিউটেড টমোগ্রাফি স্ক্যান”। এটি একটি উন্নত চিত্রায়ন পদ্ধতি, যা এক্স-রে এবং কম্পিউটার প্রযুক্তির সমন্বয়ে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ৩ডি ছবি তৈরি করতে পারে। এটি সাধারণ এক্স-রে পরীক্ষার তুলনায় অনেক বেশি বিস্তারিত এবং সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রদান করে। সিটি স্ক্যান একটি দ্রুত এবং কার্যকর পদ্ধতি যা শরীরের বিভিন্ন রোগ ও আঘাত শনাক্ত করতে সাহায্য করে।

সিটি স্ক্যান কেন করা হয় এবং এটি কি কি রোগ নির্ণয় করতে পারে?

ডাক্তাররা বিভিন্ন রোগ বা শারীরিক সমস্যার সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য সিটি স্ক্যান করার পরামর্শ দেন। এটি সাধারণত নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে করা হয়:

  • আঘাত বা দুর্ঘটনা: মাথার আঘাত, মেরুদণ্ডের সমস্যা বা শরীরের অন্যান্য স্থানে চোটের জন্য।
  • ক্যান্সার নির্ণয়: ক্যান্সারের উপস্থিতি এবং তার বিস্তারের অবস্থান চিহ্নিত করতে।
  • অভ্যন্তরীণ অঙ্গের রোগ: হার্ট, ফুসফুস, লিভার, কিডনি এবং অন্ত্রের সমস্যাগুলি নির্ণয় করতে।
  • রক্তনালীর পরীক্ষা: রক্তনালীতে কোনো ব্লকেজ আছে কি না, তা সনাক্ত করতে।
  • সংক্রমণ বা প্রদাহ: শরীরের অভ্যন্তরীণ কোনো স্থানে সংক্রমণ বা প্রদাহ চিহ্নিত করতে।
  • অস্ত্রোপচারের পরিকল্পনা: বড় কোনো অস্ত্রোপচারের আগে নির্দিষ্ট স্থানের ছবি বিশ্লেষণ করতে।

সিটি স্ক্যান মেশিন কিভাবে কাজ করে?

সিটি (CT বা Computed Tomography) স্ক্যান মেশিন এক্স-রে রশ্মি এবং আধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তির সমন্বয়ে কাজ করে। এটি মূলত একটি ডোনাট আকৃতির বড় যন্ত্র, যার ভেতর দিয়ে রোগীর টেবিলটি ধীরে ধীরে সরে যায়। সিটি স্ক্যান মেশিন শরীরের বিভিন্ন অংশের ছবি তোলার জন্য অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে পরিকল্পিত ভাবে তৈরি। সিটি স্ক্যান মেশিন থেকে উচ্চ শক্তির এক্স-রে রশ্মি নির্গত হয়, যা শরীরের বিভিন্ন অংশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই রশ্মি টিস্যু, হাড় এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ কাঠামোর ওপর ভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে। যখন এক্স-রে রশ্মি শরীরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়, তখন এটি বিভিন্ন স্তরে শোষিত হয়। শক্তি শোষণের এই পার্থক্যের ভিত্তিতে একটি চিত্র তৈরি হয়।

এমআরআই পরীক্ষা কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে?

  • এক্স-রে রশ্মির প্রভাব এবং ডেটা সংগ্রহ: এক্স-রে রশ্মি শরীরের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময়, এটি শরীরের টিস্যু এবং হাড়ের ঘনত্ব অনুযায়ী শোষিত হয়। হাড় বেশি ঘন হওয়ায় এটি বেশি এক্স-রে শোষণ করে, যেখানে নরম টিস্যু অপেক্ষাকৃত কম শোষণ করে। এক্স-রে রশ্মি প্রতিফলিত হয় না; বরং এটি শোষিত বা বিকিরিত (scattered) হয়।
  • ডিটেক্টরে ডেটা সংগ্রহ: শরীরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়া এক্স-রে রশ্মিগুলো ডিটেক্টরে ধরা পড়ে। এই ডিটেক্টরগুলো শরীরের প্রতিটি স্তরের আলাদা আলাদা ডেটা সংগ্রহ করে। ডেটাগুলো মেশিনের কম্পিউটারে প্রেরিত হয়, যেখানে বিশ্লেষণ করে ত্রিমাত্রিক চিত্র (3D image) তৈরি করা হয়।
  • মেশিনের ঘূর্ণন: সিটি স্ক্যান মেশিনে একটি বিশেষ অংশ থাকে যা স্ক্যান করার সময় ঘোরে। এই ঘূর্ণনশীল অংশটি এক্স-রে টিউব এবং ডিটেক্টর নিয়ে গঠিত, যা রোগীর শরীরকে বিভিন্ন কোণ থেকে স্ক্যান করে। সাধারণত মেশিনটি ৩০ থেকে ১২০ আরপিএম ঘুরতে পারে, যা নির্ভর করে মডেল এবং স্ক্যানের ধরন অনুযায়ী। এই প্রক্রিয়াটি মেশিনটিকে শরীরের প্রতিটি স্তরের বিস্তারিত ছবি নিতে সাহায্য করে।
  • চিত্র তৈরির প্রক্রিয়া: কম্পিউটার সফটওয়্যার ডিটেক্টরের মাধ্যমে প্রাপ্ত ডেটাগুলোকে ব্যবহার করে শরীরের অভ্যন্তরীণ কাঠামোর সুনির্দিষ্ট এবং বিস্তারিত চিত্র তৈরি করে। শরীরের বিভিন্ন স্তর বা “স্লাইস”-এর আলাদা আলাদা ছবি তোলার মাধ্যমে এই চিত্রগুলো তৈরি হয়।

বিশেষ বৈশিষ্ট্য:

  • সিটি স্ক্যান মেশিন শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ এবং টিস্যুর ছবি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে প্রদর্শন করে।
  • এটি দ্রুত এবং নির্ভুল ফলাফল প্রদান করে, যা রোগ নির্ণয়ের জন্য অত্যন্ত কার্যকর।
  • সফটওয়্যারের সাহায্যে চিত্রগুলো বিশ্লেষণ করা যায় এবং ডাক্তাররা সেগুলো থেকে রোগের অবস্থান এবং প্রকৃতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে পারেন।

সিটি স্ক্যান করলে কি শরীরের কোনো ক্ষতি হয়?

সিটি স্ক্যান সাধারণত নিরাপদ হলেও এতে এক্স-রে রেডিয়েশন ব্যবহার হয়, যা শরীরের জন্য কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তবে এই ঝুঁকি খুবই নগণ্য। সিটি স্ক্যান থেকে যে রেডিয়েশন নির্গত হয় তা ক্ষুদ্র পরিমাণে ক্ষতিকর হতে পারে, বিশেষত যদি ঘন ঘন স্ক্যান করা হয়। তবে চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে এটি করালে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিছু সিটি স্ক্যানের জন্য কনট্রাস্ট ডাই ইনজেকশন দেওয়া হয়, যা কারও কারও ক্ষেত্রে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে সিটি স্ক্যান করার আগে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়।

সিটি স্ক্যান কিভাবে করা হয়?

সিটি স্ক্যান করার পদ্ধতি খুবই সহজ এবং দ্রুত। রোগীকে একটি সরু টেবিলে শোয়ানো হয়। যদি প্রয়োজন হয়, তবে কনট্রাস্ট ডাই ইনজেকশন দেওয়া হয়। এটি রক্তনালী এবং টিস্যুগুলোকে স্পষ্টভাবে দেখতে সাহায্য করে। টেবিলটি ধীরে ধীরে সিটি স্ক্যান মেশিনের ভেতরে চলে যায়। মেশিনটি বিভিন্ন কোণ থেকে এক্স-রে নিয়ে ছবি তোলে। পুরো প্রক্রিয়া সাধারণত ৫-৩০ মিনিট সময় নেয়।

সিটি স্ক্যান করতে কত টাকা লাগে?

সিটি স্ক্যানের খরচ পরীক্ষা করার স্থান, প্রয়োজনীয় অঙ্গ বা টিস্যু এবং ব্যবহৃত প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে। সাধারণত একটি সিটি স্ক্যানের খরচ ২,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। বিশেষায়িত সিটি স্ক্যানের জন্য খরচ আরও বেশিও হতে পারে।

সিটি স্ক্যান একটি অত্যাধুনিক এবং কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি, যা বিভিন্ন রোগ এবং সমস্যার নির্ভুল তথ্য প্রদান করে। যদিও এতে কিছু ঝুঁকি থাকতে পারে, তবে সঠিক নির্দেশনা মেনে এটি করালে শরীরের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়। সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে দ্রুত এবং সঠিক রোগ নির্ণয় সম্ভব, যা চিকিৎসা প্রক্রিয়াকে সহজ এবং কার্যকর করে তোলে।

মানব মস্তিষ্কের এমন কিছু তথ্য যা আপনি আগে কখনো শোনেননি!

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো