কম্পিউটার ভাইরাস কি?
কম্পিউটার ভাইরাস হলো একটি প্রোগ্রাম বা কোডের অংশ, যা নিজে নিজেই ছড়াতে এবং সিস্টেমের ক্ষতি করতে সক্ষম। এটি সংক্রমিত ফাইল বা প্রোগ্রামের মাধ্যমে ছড়ায় এবং কম্পিউটারের কার্যক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সাধারণত, কম্পিউটার ভাইরাস ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই তাদের সিস্টেমে প্রবেশ করে এবং নানাবিধ ক্ষতি করে, যেমন ফাইল মুছে ফেলা, ডেটা চুরি, অথবা সিস্টেমের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া।
কম্পিউটার ভাইরাসের নামকরণ করেন কে কত সালে?
কম্পিউটার ভাইরাসের নামকরণ এবং এর ধারণা প্রথমবার আসে ১৯৮০-এর দশকে। তবে, এর মূলে যে ব্যক্তিটি রয়েছেন, তার নাম ফ্রেড কোহেন। তিনি একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী ছিলেন এবং ১৯৮৩ সালে প্রথমবার “ভাইরাস” শব্দটি ব্যবহার করেন তার গবেষণায়। কোহেন তার গবেষণায় দেখান যে, একটি প্রোগ্রাম অন্য প্রোগ্রামের মধ্যে প্রবেশ করে তা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং এটি নিজেই ছড়াতে পারে, যেমন একটি বায়োলজিক্যাল ভাইরাস।
কোহেনের গবেষণার আগে, কিছু ছোটখাটো ক্ষতিকর প্রোগ্রাম ছিল, কিন্তু সেগুলোকে “ভাইরাস” বলা হয়নি। তাই ফ্রেড কোহেনকে কম্পিউটার ভাইরাস ধারণার পিতা বলা হয়। ১৯৮৪ সালে, তিনি “কম্পিউটার ভাইরাস” সম্পর্কে আরও গবেষণা করেন এবং দেখান কীভাবে ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং সিস্টেমের ক্ষতি করতে পারে।
প্রথম কম্পিউটার ভাইরাসের নাম
কম্পিউটার ভাইরাসের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ একটি নাম হলো “ক্রীপার ভাইরাস”। এটি ছিল প্রথম কম্পিউটার ভাইরাস এবং এটি ১৯৭১ সালে সৃষ্টি হয়েছিল। ক্রীপার ভাইরাসটি মূলত ছিল একটি পরীক্ষা প্রোগ্রাম, যা ARPANET (আজকের ইন্টারনেটের পূর্বসূরি) দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এটি প্রথমবারের মতো দেখায় যে, একটি প্রোগ্রাম কম্পিউটার থেকে কম্পিউটারে ছড়াতে পারে। তবে, ক্রীপার ভাইরাস ক্ষতিকর ছিল না, এটি কেবলমাত্র মেসেজ দেখাতো “I’M THE CREEPER: CATCH ME IF YOU CAN!”।
ক্রীপার ভাইরাসের পর, “রিপার ভাইরাস” নামে আরেকটি প্রোগ্রাম তৈরি হয়েছিল, যা ক্রীপার ভাইরাসকে মুছে ফেলার কাজ করেছিল। যদিও ক্রীপার ভাইরাসটি ক্ষতিকর ছিল না, এটি দেখিয়েছে যে কম্পিউটারের নিরাপত্তার জন্য ভবিষ্যতে ভাইরাস বড় সমস্যা হতে পারে।
কম্পিউটার ভাইরাস ছড়ানোর প্রক্রিয়া
কম্পিউটার ভাইরাস বিভিন্ন উপায়ে ছড়াতে পারে। সাধারণত, এটি সংক্রমিত ইমেইল সংযুক্তি, অনিরাপদ ডাউনলোড, ফ্ল্যাশ ড্রাইভ বা ইনফেক্টেড সফটওয়্যার ইনস্টলেশনের মাধ্যমে ছড়ায়। একবার ভাইরাসটি একটি সিস্টেমে প্রবেশ করলে, এটি অন্য প্রোগ্রামের মধ্যে নিজেকে ঢুকিয়ে নিতে পারে এবং ধীরে ধীরে অন্যান্য ডিভাইসেও ছড়িয়ে পড়ে। কিছু ভাইরাস এমনকি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দ্রুত ছড়াতে পারে।
কম্পিউটার ভাইরাস কত প্রকার ও কি কি?
কম্পিউটার ভাইরাস বিভিন্ন প্রকার হতে পারে এবং প্রতিটি ভাইরাসের কার্যকারিতা এবং আক্রমণের পদ্ধতি ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত, কম্পিউটার ভাইরাসগুলোকে তাদের আক্রমণের ধরন এবং কীভাবে তারা ছড়ায়, তার ভিত্তিতে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা যায়। নিচে প্রধান কিছু প্রকারের ভাইরাস সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
১. ফাইল ইনফেক্টর ভাইরাস (File Infector Virus)
এই ধরনের ভাইরাস ফাইলের ভেতরে ঢুকে সেগুলোকে সংক্রমিত করে। সাধারণত, এক্সিকিউটেবল ফাইল (যেমন .exe বা .com ফাইল) এ সংক্রমিত হয়। সংক্রমিত ফাইল চালানোর সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসটি সক্রিয় হয়ে যায় এবং অন্য ফাইলগুলোকেও সংক্রমিত করতে শুরু করে।
২. বুট সেক্টর ভাইরাস (Boot Sector Virus)
বুট সেক্টর ভাইরাস কম্পিউটারের বুট সেক্টরে আক্রমণ করে, যা সিস্টেম চালুর সময় প্রথম চালিত হয়। এই ভাইরাসটি সিস্টেম চালু হওয়ার সময়ই সক্রিয় হয়ে যায় এবং সিস্টেমের কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটায়। এটি সাধারণত ফ্লপি ড্রাইভ বা অন্যান্য রিমুভেবল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়াতে পারে।
৩. ম্যাক্রো ভাইরাস (Macro Virus)
ম্যাক্রো ভাইরাসগুলো ম্যাক্রো প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়, যা সাধারণত মাইক্রোসফট ওয়ার্ড বা এক্সেল ডকুমেন্টের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। এই ভাইরাসগুলো ডকুমেন্ট বা স্প্রেডশিটের মাধ্যমে ছড়ায় এবং সংক্রমিত ডকুমেন্ট খোলার সঙ্গে সঙ্গে সক্রিয় হয়।
৪. রেসিডেন্ট ভাইরাস (Resident Virus)
রেসিডেন্ট ভাইরাস হলো এমন ভাইরাস, যা নিজেই কম্পিউটারের মেমোরিতে থেকে যায় এবং সিস্টেম চালানোর সময় যেকোনো সময় সক্রিয় হতে পারে। এটি অন্যান্য প্রোগ্রামের কার্যকলাপের সঙ্গে মিশে গিয়ে ছড়াতে থাকে এবং কম্পিউটারের কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটায়।
৫. পলিমর্ফিক ভাইরাস (Polymorphic Virus)
পলিমর্ফিক ভাইরাস হলো এমন ভাইরাস, যা নিজেকে পরিবর্তন করতে সক্ষম। এটি নিজের কোড পরিবর্তন করে প্রতিবার নতুনভাবে সংক্রমিত হয়, যাতে অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার দ্বারা সনাক্ত করা কঠিন হয়। ফলে এই ধরনের ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া বেশ চ্যালেঞ্জিং।
৬. ওভাররাইটিং ভাইরাস (Overwriting Virus)
ওভাররাইটিং ভাইরাস সংক্রমিত ফাইলের ভেতরের ডেটাকে ওভাররাইট করে ফেলে, অর্থাৎ মুছে দেয়। ফলে ফাইলটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং প্রায়শই পুনরুদ্ধার করা যায় না। এই ধরনের ভাইরাস মূলত ডেটা ধ্বংসের জন্য ব্যবহার করা হয়।
৭. মাল্টি-পার্টাইট ভাইরাস (Multipartite Virus)
মাল্টি-পার্টাইট ভাইরাস দুটি বা তার বেশি আক্রমণ পদ্ধতি ব্যবহার করে। এটি বুট সেক্টর এবং ফাইল ইনফেক্টর ভাইরাসের সম্মিলন হতে পারে। এই ভাইরাসটি কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে এবং আক্রমণ করে।
৮. ওয়েব স্ক্রিপ্ট ভাইরাস (Web Scripting Virus)
ওয়েব স্ক্রিপ্ট ভাইরাস সাধারণত ওয়েবসাইটের স্ক্রিপ্টের মাধ্যমে ছড়ায়। এটি ওয়েব পেজে এম্বেড করা হয় এবং ব্যবহারকারীর ব্রাউজারে ক্ষতিকর কোড ইনজেক্ট করে, যা ব্যবহারকারীর কম্পিউটারে ভাইরাস ঢুকিয়ে দেয়।
৯. র্যানসমওয়্যার (Ransomware)
র্যানসমওয়্যার হলো একটি ভাইরাস, যা ব্যবহারকারীর ফাইল বা সিস্টেমকে লক করে ফেলে এবং মুক্তিপণ দাবি করে। এই ধরনের ভাইরাস বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় এবং ক্ষতিকর। এটি সাধারণত ইমেইল সংযুক্তি বা অনিরাপদ ডাউনলোডের মাধ্যমে ছড়ায়।
১০. ট্রোজান হর্স (Trojan Horse)
যদিও ট্রোজান হর্স সরাসরি ভাইরাস নয়, তবে এটি একটি ক্ষতিকর প্রোগ্রাম যা বৈধ সফটওয়্যার হিসেবে ছদ্মবেশ ধারণ করে। একবার এটি ইনস্টল হলে, এটি কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ক্ষতি করতে পারে বা ডেটা চুরি করতে পারে।
১১. স্পাইওয়্যার (Spyware)
স্পাইওয়্যার এমন একটি প্রোগ্রাম, যা ব্যবহারকারীর কার্যকলাপকে গোপনে পর্যবেক্ষণ করে এবং তথ্য চুরি করে। এটি ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই ইনস্টল হয় এবং কম্পিউটারে জটিলতা সৃষ্টি করে।
১২. ওয়ার্ম (Worm)
ওয়ার্ম হলো এক ধরনের স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছড়াতে সক্ষম প্রোগ্রাম, যা কম্পিউটারের মধ্যে নিজে থেকেই কপি তৈরি করে এবং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ছড়ায়। এটি মূলত সিস্টেমের রিসোর্স ব্যবহার করে সিস্টেম ধীর করে দেয় বা ওভারলোড সৃষ্টি করে।
১৩. অ্যাডওয়্যার (Adware)
অ্যাডওয়্যার এমন একটি প্রোগ্রাম, যা ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই বিজ্ঞাপন দেখায়। যদিও এটি সরাসরি ক্ষতিকর নয়, তবে এটি কম্পিউটারের কার্যক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে এবং ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।
১৪. রুটকিট (Rootkit)
রুটকিট হলো এমন একটি প্রোগ্রাম বা সেটিংস, যা ব্যবহারকারীর সিস্টেমে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করে এবং সিস্টেমে গভীরভাবে প্রবেশ করে অন্যান্য ক্ষতিকর প্রোগ্রাম চালাতে সহায়তা করে।
কম্পিউটার ভাইরাস কি কি ক্ষতি করে?
কম্পিউটার ভাইরাস বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি করতে পারে, যা সাধারণত কম্পিউটারের কার্যক্ষমতা, ডেটা নিরাপত্তা এবং ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্যের উপর প্রভাব ফেলে। নিচে কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট কিছু সাধারণ ক্ষতির উদাহরণ দেওয়া হলো:
১. ফাইল ক্ষতি ও মুছে ফেলা
কম্পিউটার ভাইরাস সংক্রমিত ফাইলগুলোকে নষ্ট করতে পারে বা পুরোপুরি মুছে ফেলতে পারে। এটি গুরুত্বপূর্ণ ডেটা হারানোর কারণ হতে পারে এবং ফাইলগুলো পুনরুদ্ধার করা অনেক সময় অসম্ভব হতে পারে।
২. সিস্টেমের কর্মক্ষমতা ধীর করে দেওয়া
ভাইরাস কম্পিউটারের সিস্টেম রিসোর্স (যেমন প্রসেসর এবং মেমোরি) অতিরিক্ত ব্যবহার করে সিস্টেমের কার্যক্ষমতা ধীর করে দেয়। এর ফলে কম্পিউটারটি অস্বাভাবিকভাবে ধীরে কাজ করতে শুরু করে এবং অনেক সময় হ্যাং হয়ে যেতে পারে।
৩. ডেটা চুরি
কিছু ভাইরাস ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত এবং সংবেদনশীল তথ্য চুরি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, স্পাইওয়্যার বা ট্রোজান হর্স ভাইরাসগুলো পাসওয়ার্ড, ব্যাংকিং তথ্য, ক্রেডিট কার্ড নম্বর, এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে পারে।
৪. অপব্যবহার ও দূরবর্তী নিয়ন্ত্রণ
কিছু ভাইরাস হ্যাকারদের দূর থেকে কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম করে। এর মাধ্যমে তারা কম্পিউটারে বিভিন্ন ক্ষতিকর কার্যকলাপ চালাতে পারে, যেমন ফাইল মুছে ফেলা, ডেটা চুরি, অথবা কম্পিউটারকে একটি বটনেটে পরিণত করা, যেখানে এটি হ্যাকারদের আক্রমণ কার্যক্রমে ব্যবহৃত হতে পারে।
৫. ফাইল এনক্রিপশন ও মুক্তিপণ দাবি (Ransomware)
র্যানসমওয়্যার ভাইরাস সংক্রমিত কম্পিউটারের ফাইলগুলোকে এনক্রিপ্ট করে ফেলে, অর্থাৎ ব্যবহারকারীর জন্য ফাইলগুলোকে অব্যবহারযোগ্য করে দেয়। তারপর, ব্যবহারকারীকে ফাইলগুলো পুনরুদ্ধারের জন্য মুক্তিপণ দিতে বলা হয়।
৬. সিস্টেম ক্র্যাশ বা অকার্যকর করা
কিছু ভাইরাস সিস্টেম ফাইলগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যার ফলে সিস্টেম ক্র্যাশ করতে পারে বা একেবারে অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। এই ধরনের ভাইরাসের কারণে ব্যবহারকারীকে সম্পূর্ণ অপারেটিং সিস্টেম পুনরায় ইনস্টল করতে হতে পারে।
৭. অপ্রয়োজনীয় বিজ্ঞাপন (Adware)
অ্যাডওয়্যার ভাইরাসগুলো ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে, যা কম্পিউটারের কর্মক্ষমতাকে প্রভাবিত করে এবং ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের অভিজ্ঞতাকে খারাপ করে তোলে।
৮. নেটওয়ার্ক ছড়ানো
ওয়ার্ম এবং ট্রোজান ভাইরাসগুলো নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দ্রুত ছড়াতে পারে, যা একটি বড় নেটওয়ার্ক সিস্টেমকে সংক্রমিত করতে পারে। এটি পুরো নেটওয়ার্কের কার্যক্রম বিঘ্নিত করতে পারে এবং ডেটা ট্রান্সফার ধীর করে দেয়।
৯. প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যারের অস্বাভাবিক কার্যকলাপ
ভাইরাস সংক্রমিত প্রোগ্রামগুলো অস্বাভাবিক আচরণ করতে পারে, যেমন হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া, অপ্রত্যাশিতভাবে নতুন উইন্ডো খোলা, বা সঠিকভাবে কাজ না করা।
১০. অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার নিষ্ক্রিয় করা
কিছু ভাইরাস অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে, যার ফলে কম্পিউটারটি আরও সহজেই অন্যান্য ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে। এটি সিস্টেম সুরক্ষার জন্য একটি বড় হুমকি তৈরি করে।
১১. হার্ডওয়্যার ক্ষতি
যদিও বেশিরভাগ ভাইরাস সফটওয়্যার এবং ডেটার ক্ষতি করে, কিছু ভাইরাস হার্ডওয়্যারেও প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ভাইরাস সিস্টেমের ফ্যান বা প্রসেসরের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা হার্ডওয়্যারের ক্ষতি করতে পারে।
১২. ইমেইল স্প্যামিং
কিছু ভাইরাস ব্যবহারকারীর ইমেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে অসংখ্য স্প্যাম ইমেইল পাঠাতে পারে। এটি শুধু ব্যবহারকারীর ইমেইল সার্ভারকে ধীর করে দেয় না, বরং ব্যবহারকারীর পরিচিতজনদেরকেও বিরক্তিকর ইমেইল পেতে বাধ্য করে।
১৩. অনিরাপদ সংযোগ এবং পোর্ট খোলা
কিছু ভাইরাস কম্পিউটারের সিস্টেম পোর্টগুলো খুলে দেয়, যা হ্যাকারদের জন্য একটি নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করে। এর ফলে হ্যাকাররা সহজেই সিস্টেমে প্রবেশ করতে পারে এবং আরও ক্ষতি করতে পারে।
কম্পিউটার ভাইরাসের বর্তমান পরিস্থিতি
বর্তমানে, কম্পিউটার ভাইরাসের ঝুঁকি অনেক বেশি। যেহেতু ইন্টারনেট ব্যবহার এবং ডিজিটাল ডিভাইসের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই ভাইরাস ছড়ানোর সুযোগও বেড়েছে। এখন ভাইরাসগুলো শুধু ফাইল ক্ষতিগ্রস্ত করেই থেমে থাকে না, বরং ডেটা চুরি করে, সাইবার হামলা চালায়, এবং ব্যবহারকারীদের তথ্য অপব্যবহার করে। র্যানসমওয়্যার এবং স্পাইওয়্যার এর মতো ভাইরাসের উদাহরণগুলো ইন্টারনেট যুগের বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায়
কম্পিউটার ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন:
আপডেটেড অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করা।
অপরিচিত ইমেইল বা লিংক এড়িয়ে চলা।
বিশ্বস্ত সোর্স থেকে শুধুমাত্র সফটওয়্যার ডাউনলোড করা।
ব্যাকআপ রাখা।
অজানা ইউএসবি বা পোর্টেবল ডিভাইস ব্যবহার না করা।
উপসংহার
কম্পিউটার ভাইরাস ডিজিটাল জগতের একটি বড় হুমকি হিসেবে রয়ে গেছে। এর জন্ম এবং বিকাশের ইতিহাস আমাদেরকে দেখায়, কীভাবে প্রযুক্তির সঙ্গে ভাইরাসও পরিবর্তিত হয়েছে এবং কীভাবে এটি থেকে বাঁচার জন্য আমাদের সচেতন থাকতে হবে। যত দিন যাচ্ছে, ততই নতুন নতুন ভাইরাস আসছে, তাই আমাদেরও নিজেদের সুরক্ষা ব্যবস্থা আপডেট রাখতে হবে।