ছোট ছোট রোবটের দল একত্রিত হয়ে কঠিন বস্তুতে পরিণত হতে পারে

ছোট ছোট রোবটের একটি দল যেগুলো তরলের মতো প্রবাহিত হতে পারে এবং অনেক ভারী ওজন বহন করতে সক্ষম। এমনি এক রোবট উদ্ভাবন করেছেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সান্তা বারবারা এবং টিইউ ড্রেসডেনের একদল গবেষক। দেখতে ছোট খেলনার মতো মনে হলেও, এই রোবট দল সম্মিলিতভাবে কাজ করে কঠিন বস্তুতে রূপান্তরিত হতে পারে এবং ১৫০ পাউন্ড পর্যন্ত ওজন সহ্য করতে পারে।

এই রোবটগুলোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এগুলো যেকোনো বাধা পেরিয়ে যেতে পারে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী আকার পরিবর্তন করতে পারে। গবেষকরা এগুলোকে “প্রোগ্রামেবল ম্যাটার” হিসেবে অভিহিত করেছেন। এটি এমন এক প্রযুক্তি যা বিভিন্ন রকমের আকৃতি ধারণ করতে পারে এবং শক্তিশালী কাঠামো তৈরি করতে পারে। প্রতিটি রোবটের আকার একটি হকি পাকের চেয়েও ছোট এবং এগুলো আমাদের দেহের কোষ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করা হয়েছে। মানবদেহে যেমন বিভিন্ন কোষ একত্রিত হয়ে পেশি, হাড় বা ত্বক তৈরি করে, তেমনি এই রোবটরাও একত্রিত হয়ে শক্তিশালী কাঠামো গঠন করতে পারে।

এই প্রযুক্তি বিজ্ঞানের কল্পকাহিনীতে অনেক আগে থেকেই আলোচিত হয়ে আসছে। এমন রোবটিক পদার্থের ধারণা অনেক বিজ্ঞানীর গবেষণার বিষয় ছিল, যেখানে রোবটগুলো তরলের মতো প্রবাহিত হতে পারবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী শক্ত কাঠামো তৈরি করতে পারবে। এই রোবটি দৈনন্দিন জীবনের অনেক ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে পারবে বলে ধারণা করছেন গবেষকরা।

নতুন গবেষণায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এই রোবট দল চৌম্বকীয় শক্তি, শারীরিক গঠন এবং আলোক সংকেত ব্যবহার করে বিভিন্ন আকৃতি নিতে পারে। এটি একটি কার্যকরী রেঞ্চের মতো বস্তু তৈরি করতে পারে, যা বিভিন্ন বস্তুকে চেপে ধরতে, ঘুরিয়ে দিতে বা স্থানান্তর করতে সক্ষম।

এই উদ্ভাবনের মূল অনুপ্রেরণা আসে প্রকৃতি থেকে। বিশেষ করে মানব ভ্রূণের কোষ যেভাবে বিভিন্ন ধরনের টিস্যুতে পরিণত হয়, তা গবেষকদের অনুপ্রাণিত করেছে। ভ্রূণের কোষগুলো একত্রিত হয়ে কখনো হাড়, কখনো পেশি, কখনোবা ত্বক তৈরি করে। এই প্রক্রিয়াগুলো পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা রোবটগুলোকে এমনভাবে ডিজাইন করেছেন যাতে সেগুলোও একইভাবে কাজ করতে পারে।

রোবটগুলোর তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রথমত, এগুলো একে অপরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলাফেরা করতে পারে, যা আমাদের কোষের পারস্পরিক ক্রিয়ার মতো। দ্বিতীয়ত, প্রতিটি রোবট একে অপরের অবস্থান সম্পর্কে অবগত থাকে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী গঠন পরিবর্তন করতে পারে। তৃতীয়ত, এগুলো নির্দিষ্ট মাত্রার বন্ধন শক্তি প্রয়োগ করে একত্রিত হয়, যাতে কাঠামো মজবুত থাকে।

প্রতিটি রোবটের নীচের অংশে আটটি মোটরযুক্ত গিয়ার রয়েছে, যা এর চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। এর আকৃতি সম্পূর্ণ গোল নয়, বরং কিছু অংশ খাঁজকাটা, যাতে এটি অন্য রোবটের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারে এবং প্রয়োজন হলে আলাদা হয়ে যেতে পারে। এই নকশা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে রোবটগুলো একে অপরকে চেপে ধরতে পারে আবার প্রয়োজন অনুযায়ী সহজেই বিচ্ছিন্ন হতে পারে।

এই রোবটটি ভবিষ্যতে বহুমুখী ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করতে পারে। এটি ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিসিন, নির্মাণ এবং উদ্ধার কার্যক্রমসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, এটি এমন কাঠামো তৈরি করতে পারে যা বিপদগ্রস্ত এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে এবং উদ্ধার কাজ পরিচালনা করতে পারবে।

যদিও এখনো এটি একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প, তবে গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে ভবিষ্যতে এর ব্যবহারিক প্রয়োগ আরও বিস্তৃত হবে। এই ধরনের রোবট দল যদি আরও উন্নত করা যায়, তবে এটি দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারবে। বিশেষ করে এমন জটিল কাজ যেখানে মানুষের পক্ষে পৌঁছানো কঠিন, সেখানে এই রোবটগুলোর ব্যবহার হতে পারে অত্যন্ত কার্যকর।

প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে এই ধরনের উদ্ভাবন আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। যদিও এখনো অনেক উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে, তবে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী যে অদূর ভবিষ্যতে এই রোবটগুলো বাস্তবে কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হতে পারবে।

এমআইটি ইঞ্জিনিয়ারদের তৈরি রোবট মৌমাছি যা ফুলের পরাগায়ণ নিয়ন্ত্রণ করে ফসলের উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি করতে পারে

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো