ওয়ার্ল্ড ল্যাবস, একটি স্টার্টআপ যা এআই প্রজুক্তির উন্নয়নে বিশেষজ্ঞ, সম্প্রতি তাদের প্রথম প্রকল্প উন্মোচন করেছে। প্রতিষ্ঠানটি ফেই-ফেই-লি এর নেতৃত্বে পরিচালিত, এবং তাদের লক্ষ্য হলো একটি এআই সিস্টেম তৈরি করা যা একটি একক ছবিকে ইন্টারঅ্যাকটিভ থ্রিডি দৃশ্যে রূপান্তর করতে সক্ষম। এই সিস্টেমটি ভিডিও গেমের মতো থ্রিডি দৃশ্য তৈরি করতে পারে যা ব্যবহারকারীরা নিজেদের মতো করে অনুসন্ধান এবং পরিবর্তন করতে পারবেন।
বাজারে বর্তমানে বিভিন্ন এআই সিস্টেম আছে যা ছবিকে থ্রিডি মডেল বা পরিবেশে রূপান্তরিত করতে পারে। তবে ওয়ার্ল্ড ল্যাবস-এর সিস্টেম অন্যান্য সিস্টেম থেকে আলাদা কারণ এটি শুধুমাত্র থ্রিডি মডেল তৈরি করে না, বরং এটি ইন্টারঅ্যাকটিভ এবং ব্যবহারকারীদের জন্য পরিবর্তনযোগ্য। একটি ব্লগ পোস্টে ওয়ার্ল্ড ল্যাবস উল্লেখ করেছে, “আমাদের প্রযুক্তি আপনাকে যেকোনো ছবির ভিতরে প্রবেশ করে সেটি থ্রিডি আকারে অন্বেষণ করতে দেয়। ইনপুট ছবির বাইরেও, সবকিছুই আমাদের সিস্টেম দ্বারা জেনারেটেড।”
আরও পড়ুনঃ ২০২৫ সলে লঞ্চ হতে যাচ্ছে নতুন এএআই ব্রাউজার দিয়া (Dia)
এই এআই-সৃষ্ট দৃশ্যগুলো ব্যবহারকারীরা তাদের কী-বোর্ড এবং মাউসের মাধ্যমে ব্রাউজারে লাইভ এক্সপ্লোর করতে পারবেন। দৃশ্যগুলো একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য ক্যামেরা এবং সিমুলেটেড ডেপথ অব ফিল্ড (DoF) সহ রেন্ডার করা হয়। ডেপথ অব ফিল্ডের প্রভাব বাড়ানোর মাধ্যমে ব্যাকগ্রাউন্ড আরও ব্লারি হয়ে ওঠে। এটি ব্যবহারকারীদের জন্য আরও ইন্টারঅ্যাকটিভ এবং প্রাণবন্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে। ওয়ার্ল্ড ল্যাবস-এর সিস্টেম একটি উদীয়মান এআই ক্যাটাগরির অংশ, যা “ওয়ার্ল্ড মডেল” নামে পরিচিত। এই ধরনের মডেল গেম এবং থ্রিডি পরিবেশ সিমুলেট করতে সক্ষম। কিন্তু অন্যান্য মডেলে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। যেমন, ডিকার্ট নামের একটি স্টার্টআপের মাইনক্রাফ্ট-সিমুলেটিং ওয়ার্ল্ড মডেল, ওয়াসিস, কম রেজোলিউশনের এবং প্রায়ই লেআউট ভুলে যায়।
তুলনামূলকভাবে, ওয়ার্ল্ড ল্যাবস-এর পদ্ধতি নিশ্চিত করে যে একবার তৈরি হওয়া দৃশ্য একই থাকে এবং এটি মৌলিক পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম মেনে চলে। এটি দৃশ্যগুলোকে আরও দৃঢ় এবং গভীরতা প্রদান করে। উপরন্তু, সিস্টেমটি দৃশ্যগুলিতে ইন্টারঅ্যাকটিভ ইফেক্ট এবং অ্যানিমেশন প্রয়োগ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ব্যবহারকারীরা অবজেক্টগুলোর রঙ পরিবর্তন বা ব্যাকড্রপে ডায়নামিক আলো যোগ করতে পারবেন। এমনকি, তারা কাস্টমাইজড রেন্ডারিং ইফেক্ট যোগ করে দৃশ্যগুলোকে আরও উন্নত করতে পারেন।
ওয়ার্ল্ড ল্যাবস উল্লেখ করেছে যে বেশিরভাগ জেনারেটিভ এআই সরঞ্জাম ২ডি কনটেন্ট তৈরি করে, যেমন ছবি বা ভিডিও। কিন্তু থ্রিডি কনটেন্ট জেনারেট করা ব্যবহারকারীদের জন্য আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ এবং ধারাবাহিকতা প্রদান করে। থ্রিডি কনটেন্টের মাধ্যমে সিনেমা, গেম, সিমুলেটর এবং আমাদের শারীরিক বিশ্বের অন্যান্য ডিজিটাল ম্যানিফেস্টেশনে বিপ্লব ঘটাতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সিনেমা নির্মাণে ব্যয় ও সময় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। উদাহরণস্বরূপ, ভার্চুয়াল সেট ডিজাইন করতে যে প্রচুর সময় লাগে, তা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সম্ভব হবে। একইভাবে, গেম ডেভেলপাররা সহজেই নতুন নতুন পরিবেশ তৈরি করতে পারবেন, যা খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
ওয়ার্ল্ড ল্যাবস-এর সিস্টেম এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে এর মাধ্যমে সম্পূর্ণ দৃশ্য অনুসন্ধান করা সম্ভব নয়; ব্যবহারকারীর গতিবিধি একটি নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ। এছাড়া মাঝে মাঝে রেন্ডারিংয়ের ত্রুটি দেখা যায়, যেমন অবজেক্টগুলোর অস্বাভাবিক মিশ্রণ। তবে স্টার্টআপটি জানিয়েছে, এটি শুধুমাত্র একটি “প্রাথমিক প্রিভিউ”। ওয়ার্ল্ড ল্যাবস জানিয়েছে যে তারা তাদের জেনারেটেড ওয়ার্ল্ডগুলোর আকার এবং মানোন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে এবং ব্যবহারকারীদের জন্য নতুন ইন্টারঅ্যাকশন পদ্ধতির উপর পরীক্ষা চালাচ্ছে।
ওয়ার্ল্ড ল্যাবস ২০২৪ সালের শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এখন পর্যন্ত $২৩ কোটি ডলারের ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সংগ্রহ করেছে। এর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আন্দ্রেসেন হোরোভিটজ (a16z), অ্যাশটন কুচার, ইন্টেল ক্যাপিটাল, এএমডি ভেঞ্চারস, এবং এরিক শ্মিট অন্তর্ভুক্ত। কোম্পানিটি বর্তমানে $১ বিলিয়নেরও বেশি মূল্যে মূল্যায়িত এবং তাদের প্রথম প্রোডাক্ট ২০২৫ সালে বাজারে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। তারা আরও জানিয়েছে যে এই প্রযুক্তি পেশাদার শিল্পী, ডিজাইনার, ডেভেলপার, চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং প্রকৌশলীদের জন্য উপকারী হতে পারে। কোম্পানিটি ভিডিও গেম ডেভেলপার এবং মুভি স্টুডিও থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিল্প খাতকে লক্ষ্য করে তাদের প্রযুক্তি পৌঁছে দিতে চায়।
ওয়ার্ল্ড ল্যাবস-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা জাস্টিন জনসন একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আমরা ইতিমধ্যে ভার্চুয়াল, ইন্টারঅ্যাকটিভ বিশ্ব তৈরি করতে পারি, তবে এর জন্য প্রচুর অর্থ এবং সময় প্রয়োজন। ওয়ার্ল্ড মডেল আমাদের শুধু একটি ছবি বা ক্লিপ নয়, বরং একটি সম্পূর্ণ সিমুলেটেড, প্রাণবন্ত, এবং ইন্টারঅ্যাকটিভ থ্রিডি বিশ্ব তৈরি করতে দেবে।” এই ধরনের উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ভবিষ্যতে আমাদের ডিজিটাল কল্পনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপরাধমূলক কার্যক্রম এর পরিমাণ বাড়ছে