গুগল এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা সম্প্রতি এআই সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করা শুরু করেছে, কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, এই ধরনের সার্চ রেজাল্ট সম্পূর্ণভাবে নির্ভরযোগ্য নয় এবং সহজেই ম্যানিপুলেট করা যায়। এই প্রবন্ধে আমরা এআই সার্চ ইঞ্জিন এর সীমাবদ্ধতা ও তার সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা করবো।
আমাদের প্রতিদিনের অনেক প্রশ্নের উত্তর পেতে আমরা সাধারণত গুগল সার্চের উপর নির্ভর করি। উদাহরণস্বরূপ, “অ্যাসপার্টেম ক্যান্সারের কারণ কি হতে পারে ?” এই প্রশ্নটি বহু বছর ধরে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। এর পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন গবেষণা চলেছে, এবং এর অনুমোদন নিয়েও বিতর্ক দেখা গিয়েছে। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অ্যাসপার্টেমকে মানুষের জন্য সম্ভবত কার্সিনোজেনিক (কার্সিনোজেনিক-প্রবন্ধের শেষে এই শব্দের মানে ব্যাখ্যা করা হয়েছে) বলে ঘোষণা করেছে, যদিও অন্যান্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রকেরা এটিকে নিরাপদ মনে করেন। গুগল সার্চের মাধ্যমে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা আমাদের জন্য যতটা সহজ হবে, ততটাকি এমন বিতর্কিত বিষয়ে এআই সার্চ রেজাল্টের উপর নির্ভর করাটা সঠিক হবে?
আরও পড়ুনঃ ওপেনএআই এর নতুন সার্চ ফিচার : গুগল এবং মাইক্রোসফট বিং-এর সাথে হবে প্রতিযোগিতা
এআই চ্যাটবট এবং এআই সার্চ ইঞ্জিন সম্প্রতি উন্নয়নশীল প্রযুক্তির অংশ হিসেবে গড়ে উঠেছে, এবং প্রযুক্তি সংস্থাগুলি এই ধরনের সার্চকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি অংশ হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। গুগল এবং মাইক্রোসফট ইতিমধ্যে গুগল সার্চ এবং বিং-এ এআই সার্চ রেজাল্ট যুক্ত করেছে।কিন্তু এই সার্চ রেজাল্টে যে তথ্যগুলো তুলে ধরা হচ্ছে, তা কতটা নির্ভরযোগ্য, সেটা কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যায়।ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় তিনজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী গবেষণা করে দেখেছেন যে এআই চ্যাটবটগুলো মূলত প্রাসঙ্গিক শব্দের উপর নির্ভর করে তথ্য খোঁজে, কিন্তু বৈজ্ঞানিক তথ্যসূত্রের ভিত্তিতে সে নিজে কোনো তথ্য যাচাই করে না।
সহজ এবং সরল প্রশ্নের জন্য এ ধরনের সার্চ পদ্ধতি ভালো কাজ করতে পারে, কিন্তু জটিল বিষয়ে, যেমন এসপার্টেম সম্পর্কিত বিতর্কের ক্ষেত্রে, এ ধরনের সার্চ রেজাল্টের উপর নির্ভর করা কঠিন। গবেষক আলেকজান্ডার ওয়ান বলেন, আমারা কি এআই শুধু সার্চ রেজাল্টের সারাংশ দিবে সেটা চাই, নাকি আমরা চাই যে এআই সমস্ত প্রমাণ বিশ্লেষণ করে আমাদের জন্য একটি চূড়ান্ত উত্তর প্রদান করুক? দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, চ্যাটবটের তথ্য নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঠিকতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি কেউ এই প্রক্রিয়াকে কোনোভাবে ম্যানিপুলেট করতে সক্ষম হয়, তবে সে চ্যাটবটের মাধ্যমে লাখো মানুষের সামনে ভুল তথ্য উপস্থাপন করতে পারবে।
জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) নামে একটি নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে চ্যাটবটের রেজাল্টে প্রভাব ফেলা সম্ভব। এটি অনেকটা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের (এসইও) এর মতো কাজ করে। এসইও’র মাধ্যমে ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের জন্য অপটিমাইজ করা হয়, যাতে গুগল কিংবা বিং-এর সার্চ রেজালটে উপরের দিকে থাকবে। জিইও এবং এসইও-র মধ্যে কিছুটা মিল থাকলেও, জিইও আরো অনেক বেশি বিস্তৃত এবং বিশেষায়িত। চ্যাটবটের রেজাল্টে প্রভাব ফেলার জন্য ওয়েবসাইটদের কনটেন্টকে তৃতীয় পক্ষের ওয়েবসাইটে মেনশন করতে হবে, তৃতীয় পক্ষের সংগ্রহ মাধ্যমে উল্লেখ করতে হবে এর মানে হচ্ছে, যে চ্যাটবটের রেজাল্টে প্রভাব ফেলতে হবে সেই ওয়েবসাইটের কনটেন্টকে অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইটে উল্লেখ বা মেনশন করতে হবে। এটি তৃতীয় পক্ষের ওয়েবসাইট হতে পারে, যেমন সংবাদমাধ্যম, ফোরাম, বা অন্যান্য প্রভাবশালী সোর্স। এর ফলে চ্যাটবট সেই তথ্যকে সহজে খুঁজে পাবে এবং তা আরও বেশি গুরুত্ব সহকারে উপস্থাপন করবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি কফি মেশিনের প্রোডাক্ট একটি ইনফরমেশন পেজে মেশিনটি সম্পর্কে বিশেষভাবে তৈরি করা আর্টিকেল যুক্ত করা হয়, তাহলে চ্যাটবট সেই পেজটি সহজেই খুঁজে পাবে এবং ফলাফল হিসেবে সেই তথ্যটি দেখাবে।
চ্যাটবটের মাধ্যমে তথ্য ম্যানিপুলেট করা সম্ভব হলে ব্যবহারকারীদের জন্য কিছু ঝুঁকি তৈরি হয়। কারণ অনেকেই চ্যাটবটের দেওয়া উত্তরকে চূড়ান্তভাবে সঠিক বলে মনে করে এবং তার বিপরীতে অন্য কোনো তথ্য খোঁজার চেষ্টা করে না। এই পরিস্থিতিকে ‘ডাইরেক্ট আন্সার ডিলেমা’ বলা হয়। লাইপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মার্টিন পোটথাস্ট এবং তার সহকর্মীরা এই টার্মটি ব্যবহার করেছেন। এর মানে হলো, যখন এআই শুধু একটি সরাসরি উত্তর দেয়, তখন ব্যবহারকারীরা সেই উত্তরকে চূড়ান্ত বলে ধরে নেয় এবং অন্য কোনো বিকল্প বা বিতর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনা করার সুযোগ পায় না। এটি জেনারেটিভ সার্চের একটি বড় সমস্যা।
জটিল শব্দের ব্যাখ্যা-
১। “কার্সিনোজেনিক” শব্দের অর্থ হলো ক্যান্সার সৃষ্টি করার বা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ানোর সম্ভাবনা আছে এমন কোনো পদার্থ বা উপাদান। এটি সাধারণত এমন কোনো রাসায়নিক বা উপাদানকে নির্দেশ করে যা ক্যান্সার উৎপাদনে ভূমিকা রাখতে পারে।
২। “এসপার্টেম” একটি কৃত্রিম মিষ্টি যা খাদ্য ও পানীয়তে ব্যবহার করা হয়। এটি সাধারণত সুগার-ফ্রি বা ডায়েট পণ্যে ব্যবহৃত হয়। সম্প্রতি এটি নিয়ে বিতর্ক হয়েছে, কারণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে সম্ভবত ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে এমন পদার্থ (কার্সিনোজেনিক) বলে ঘোষণা করেছে।