অ্যাপল একটি নতুন রোবট তৈরি করেছে, যা দেখতে অনেকটা একটি ল্যাম্পের মতো। এটি শুধু সাধারণ একটি বাতি নয়, বরং একটি বুদ্ধিমান এবং অভিব্যক্তিপূর্ণ রোবট, যা মানুষের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে যোগাযোগ করতে পারে। সম্প্রতি অ্যাপলের প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রে এই রোবটের প্রথম ঝলক দেখা গেছে। এটি অনেকটা পিক্সারের জনপ্রিয় লাক্সো জুনিয়র ল্যাম্পের মতো দেখতে, যা অনেকের কাছেই পরিচিত।
এই রোবট ল্যাম্প সম্পর্কে জানা গেছে, এটি শুধু আলো জ্বালানো বা নিভানোর জন্য তৈরি হয়নি। বরং এটি বিভিন্ন ধরনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারে এবং মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে সক্ষম। অ্যাপলের গবেষণা পত্রের শিরোনাম “ELEGNT: Expressive and Functional Movement Design for Non-Anthropomorphic Robot,” যেখানে এই রোবটের কার্যকারিতা এবং অভিব্যক্তির বিষয়টি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। গবেষণায় জানানো হয়েছে, রোবটটি অঙ্গভঙ্গি এবং শরীরের ভঙ্গিমার মাধ্যমে নিজের অবস্থান ও আবেগ প্রকাশ করতে সক্ষম। এটি মানুষের সঙ্গে আরও স্বাভাবিক যোগাযোগের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা গেছে, রোবটটি গবেষকদের ইশারায় সাড়া দিচ্ছে এবং নির্দিষ্ট নির্দেশ অনুসারে কাজ করছে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি আঙুল দিয়ে নির্দেশ দেয়, তাহলে এটি সেই নির্দেশ বুঝে তার অবস্থান পরিবর্তন করে। এমনকি, এটি ব্যবহারকারীদের স্বাস্থ্য সচেতনতায় সহায়তা করতে পারে। যেমন, পানি পান করতে ভুলে গেলে রোবটটি গ্লাস ঠেলে ব্যবহারকারীর দিকে এগিয়ে দিতে পারে। এটি রোবটের একটি নতুন এবং কার্যকরী দিক, যা ঘরের অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য বেশ উপযোগী।
অ্যাপল রোবটটির নকশার ক্ষেত্রে বিশেষ যত্ন নিয়েছে। এটি শুধু কার্যকরই নয়, বরং ব্যবহারকারীদের জন্য আরামদায়ক এবং বন্ধুত্বপূর্ণ অনুভূতি তৈরি করে। প্রযুক্তি জগতের অন্যান্য রোবটগুলোর মতো এটি কঠোর বা নির্ভুল কমান্ড অনুসারে কাজ করা কোনো যন্ত্র নয়। বরং এটি অনেকটাই স্বাভাবিক আচরণ করে এবং ব্যবহারকারীর সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিবেশ তৈরি করে।
অন্য অনেক কোম্পানির রোবটের তুলনায় এটি ভিন্ন কারণ, অ্যাপল রোবটের নকশা এবং কার্যপ্রণালীতে অভিব্যক্তির ওপর জোর দিয়েছে। সাধারণত, রোবট বলতে এমন কিছু বোঝানো হয় যা নির্দিষ্ট কমান্ড অনুসারে কাজ করে এবং মানুষের মতো আবেগ বা প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে পারে না। কিন্তু অ্যাপলের এই রোবট এক ধাপ এগিয়ে, কারণ এটি শুধু কাজই করে না, বরং মানুষের আবেগ বুঝতে পারে এবং তার সঙ্গে মিল রেখে প্রতিক্রিয়া দেখাতে সক্ষম।
অ্যাপল এই রোবটটিকে কীভাবে ব্যবহার উপযোগী করবে বা এটি বাজারে কখন আসবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো ঘোষণা দেয়নি। তবে এটি স্পষ্ট যে, অ্যাপল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং রোবটিক্স প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন কিছু করার চেষ্টা করছে। গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, এই রোবটটি শুধু কাজের জন্য নয়, বরং মানুষের সঙ্গে আরও স্বাভাবিকভাবে মিথস্ক্রিয়া করতে পারে। এটি নড়াচড়া, ভঙ্গিমা এবং মনোযোগ প্রকাশ করতে পারে, যা সাধারণ রোবটের ক্ষেত্রে সচরাচর দেখা যায় না।
রোবটটি বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ, এটি ব্যবহারকারীর সঙ্গে কথা বলতে পারে, নির্দেশনা অনুসারে সাড়া দিতে পারে এবং এমনকি নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদনে সহায়তা করতে পারে। এক দৃশ্যে দেখা গেছে, এটি দেয়ালে একটি ভিডিও প্রজেক্ট করছে, যা গবেষকের কাজে সহায়তা করছে। অন্য একটি দৃশ্যে এটি সঙ্গীতের সঙ্গে মিল রেখে নড়াচড়া করছে, যা রোবটটির অভিব্যক্তিশীলতার আরেকটি উদাহরণ।
গবেষণাপত্রে আরও বলা হয়েছে, মানুষের সঙ্গে রোবটের স্বাভাবিক যোগাযোগ নিশ্চিত করতে, এটি অঙ্গভঙ্গি ও দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে নিজের অবস্থান ও অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারে। অর্থাৎ, এটি শুধু নির্দেশ পালনকারী যন্ত্র নয়, বরং এটি মানুষের অনুভূতি বোঝার চেষ্টাও করে। এটি রোবটিক্স প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একটি নতুন সংযোজন।
এই রোবট এখনো গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে এবং এটি বাজারে আসার কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা নেই। তবে এটি অ্যাপলের রোবটিক্স গবেষণার একটি বড় পদক্ষেপ। ভবিষ্যতে এই ধরনের রোবট আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠতে পারে।
এই রোবটের বিশেষত্ব হলো, এটি প্রযুক্তির একটি মানবিক দিক উপস্থাপন করছে। এটি শুধুমাত্র মেশিন নয়, বরং এটি এমন কিছু যা মানুষের অনুভূতি ও ইচ্ছা বুঝতে পারে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে পারে। যদি অ্যাপল এই প্রকল্পকে আরও উন্নত করে এবং বাস্তব রূপ দেয়, তাহলে এটি রোবটিক্স প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এক বড় পরিবর্তন আনতে পারে।