গ্যাস শনাক্তকরণের জন্য একটি নতুন সহজ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা, যার নাম দেওয়া হয়েছে (CCQEPS) সুসংগতভাবে নিয়ন্ত্রিত কোয়ার্টজ-বর্ধিত ফটোঅ্যাকোস্টিক। এই পদ্ধতিটি অত্যন্ত কম ঘনত্বের গ্যাস দ্রুত শনাক্ত করতে সক্ষম। এটি পরিবেশ পর্যবেক্ষণ, প্রাথমিক স্তরে ক্যান্সার শনাক্তকরণ এবং রাসায়নিক প্রক্রিয়ার সুরক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অনেক সম্ভাবনাময়। আগে যেখানে গ্যাস বিশ্লেষণে অনেক সময় লাগত, সেখানে এই প্রযুক্তি মাত্র কয়েক সেকেন্ডে সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ করতে পারে।
আরও পড়ুনঃ উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন জিঙ্ক আয়োডিন ব্যাটারি তৈরি করেছে বিজ্ঞানীরা
সূক্ষ্ম গ্যাস সনাক্তকরণে উন্নত সংবেদনশীলতা
জার্মানির স্টুটগার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সাইমন অ্যাংস্টেনবার্গারের নেতৃত্বে একটি দল এই নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। এই প্রযুক্তি অন্য যে কোনো পদ্ধতির তুলনায় দ্রুত এবং আরও নির্ভুল। গবেষণাপত্রটি ৯ জানুয়ারি অপটিকা জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকরা দেখিয়েছেন, এই পদ্ধতি ব্যবহার করে মাত্র তিন সেকেন্ডে একটি সম্পূর্ণ মিথেন স্পেকট্রাম (৩০৫০ থেকে ৩৪৫০ ন্যানোমিটার) ধরা সম্ভব হয়েছে, যা সাধারণত ৩০ মিনিট সময় নেয়।
অ্যাংস্টেনবার্গার বলেছেন, “পরিবেশ পর্যবেক্ষণে গ্রিনহাউস গ্যাস যেমন মিথেন শনাক্ত করা এবং রাসায়নিক কারখানায় বিপজ্জনক গ্যাসের উপস্থিতি শনাক্ত করাই আমাদের লক্ষ্য। এটি শ্বাসের মাধ্যমে প্রাথমিক স্তরে ক্যান্সার শনাক্ত করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।”
স্পেকট্রোস্কপির প্রযুক্তিগত অগ্রগতি
স্পেকট্রোস্কপি হল একটি পদ্ধতি, যা গ্যাসের আলোর শোষণ বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করে। গ্যাস সনাক্ত করতে হলে একটি দ্রুত টিউনযোগ্য লেজার এবং একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ডিটেকশন সিস্টেমের প্রয়োজন। এই গবেষণায় গবেষকরা স্টুটগার্ট ইন্সট্রুমেন্টস জিএমবিএইচ নামক একটি সংস্থার তৈরি করা দ্রুত টিউনযোগ্য লেজার ব্যবহার করেছেন। তারা কোয়ার্টজ-এনহান্সড ফটোঅ্যাকউস্টিক স্পেকট্রোস্কপি (QEPAS) পদ্ধতির সাহায্যে গ্যাস শনাক্ত করেছেন।
এই পদ্ধতিতে কোয়ার্টজ টিউনিং ফর্ক ব্যবহার করা হয়, যা লেজারের স্পন্দনে সৃষ্ট গ্যাসের কম্পন শনাক্ত করে। লেজারের দ্রুত স্পন্দনের কারণে গ্যাস গরম হয়ে প্রসারিত হয়, এবং এই প্রসারণের ফলে টিউনিং ফর্কে একটি পাইজোইলেকট্রিক ভোল্টেজ তৈরি হয়। এই ভোল্টেজটি গ্যাসের উপস্থিতি এবং তার ঘনত্বের সুনির্দিষ্ট তথ্য দেয়।
নতুন পদ্ধতির বিশেষ সুবিধা
এই পদ্ধতির একটি বড় সুবিধা হলো এর গতি। সাধারণ QEPAS পদ্ধতিতে টিউনিং ফর্কের দীর্ঘস্থায়ী কম্পন মাপার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু নতুন পদ্ধতিতে ‘কোহেরেন্ট কন্ট্রোল’ নামক একটি কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে। এতে লেজারের স্পন্দনের সময় এমনভাবে সামঞ্জস্য করা হয়, যাতে টিউনিং ফর্ক দ্রুত কম্পন থামিয়ে পরবর্তী মাপ নেওয়া যায়।
অ্যাংস্টেনবার্গার বলেছেন, “আমরা এই পদ্ধতির মাধ্যমে গ্যাসের কম্পন এবং ঘূর্ণনের ফিঙ্গারপ্রিন্ট শনাক্ত করতে পারি। এটি যেকোনো গ্যাস দ্রুত সনাক্ত করতে সক্ষম।”
গবেষণার ফলাফ
গবেষকরা একটি প্রি-ক্যালিব্রেটেড মিথেন মিশ্রণ ব্যবহার করে তাদের পদ্ধতির কার্যকারিতা পরীক্ষা করেছেন। পরীক্ষায় দেখা গেছে, সাধারণ QEPAS পদ্ধতিতে গ্যাসের স্পেকট্রাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট অস্পষ্ট হয়, কিন্তু নতুন পদ্ধতিতে এটি স্পষ্ট থাকে।
গবেষকরা এখন এই প্রযুক্তির সীমা পরীক্ষা করবেন এবং এটি কত দ্রুত এবং কম ঘনত্বে গ্যাস শনাক্ত করতে পারে, তা নির্ধারণ করবেন। পাশাপাশি তারা একই সাথে একাধিক গ্যাস সনাক্ত করার বিষয়েও গবেষণা করবেন।
এই নতুন প্রযুক্তি পরিবেশ রক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিল্প ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। এটি শুধু গ্যাস শনাক্তকরণের সময় কমায় না, বরং এটি আরও নির্ভুল এবং বহুমুখী। ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও অনেক নতুন উদ্ভাবনের সম্ভাবনা রয়েছে।