বিশ্বের সবচেয়ে ছোট কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করেছে চীন

কোয়ান্টাম কম্পিউটিং জগতে চীনা বিজ্ঞানীরা একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, যেখানে একটি একক ফোটনের সাহায্যে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে চীন। এই কোয়ান্টাম কম্পিউটারটি কাজ করতে পারে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এবং এটি একটি সাধারণ ডেস্কটপ কম্পিউটারের আকারের মতই। এর ফলে, কোয়ান্টাম কম্পিউটারের জন্য প্রয়োজনীয় কুলিং সিস্টেম এবং জটিল অবকাঠামোর প্রয়োজনীয়তা কমে গেছে, যা সাধারণত বিশাল স্থান দখল করে। নতুন এই মেশিনটি সম্প্রতি “Physical Review Applied” নামক জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, যা প্রমাণ করেছে যে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের ভবিষ্যৎ কতটা সম্ভাবনাময়।

এই নতুন কোয়ান্টাম কম্পিউটারটি বিশেষভাবে কার্যকর কারণ এটি একটি মাত্র ফোটন, বা আলোর কণার মাধ্যমে কাজ করে। ফোটন কোয়ান্টাম তথ্য বহন করে এবং এটি ৩২টি টাইম-বিন বা ডাইমেনশনে তথ্য সঞ্চয় করতে সক্ষম। এই প্রযুক্তি অন্য কোনো কোয়ান্টাম কম্পিউটার থেকে ভিন্ন, যেখানে প্রচলিত সুপারকুলড কোয়ান্টাম কিবিটের প্রয়োজন হয়। সাধারণত, সুপারকন্ডাক্টিং কিবিটগুলো কোয়ান্টাম সুপারপজিশন বা বহুসংখ্যক অবস্থায় থাকতে সক্ষম হতে প্রচণ্ড ঠান্ডা পরিবেশ প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই নতুন প্রযুক্তি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় কাজ করতে সক্ষম হওয়ায় তা চালানোর জন্য জটিল ও ব্যয়বহুল কুলিং সিস্টেম প্রয়োজন হয় না।

আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার স্পিড বাড়বে ১০০% এই ১০টি টিপস এন্ড ট্রিকস ফলো করলে

ফোটন ব্যবহার করে কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করার ধারণাটি নতুন কিছু নয়। অপটিক্যাল কোয়ান্টাম কম্পিউটিং নামে পরিচিত এই ক্ষেত্রে, ফোটনকে কোয়ান্টাম সুপারপজিশনের মাধ্যমে ব্যবহৃত হয় যা একটি কণাকে একাধিক অবস্থায় থাকতে দেয়। তবে, অন্যান্য কোয়ান্টাম প্রযুক্তির তুলনায় ফোটনভিত্তিক কোয়ান্টাম কম্পিউটারের কার্যকারিতা এবং স্থিতিশীলতা বেশি। প্রথাগত কোয়ান্টাম কম্পিউটারে তথ্য হারানোর প্রবণতা বেশি থাকে, কিন্তু ফোটনভিত্তিক কোয়ান্টাম কম্পিউটারে এই সমস্যা কম।

কোয়ান্টাম কম্পিউটার
ছবিঃ National Tsing Hua University

ফোটনের সাহায্যে কাজ করা এই কোয়ান্টাম কম্পিউটারটি জটিল ম্যাথমেটিক্যাল প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে। গবেষকরা প্রমাণ করেছেন যে এটি ১৫-এর মত সংখ্যাকে প্রাইম ফ্যাক্টরাইজ করতে সক্ষম, যা আসলে শরের অ্যালগরিদমের তিনটি ধাপ অনুসরণ করে করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন জটিল সমস্যার সমাধান করার ক্ষমতা রয়েছে। এই ফোটনভিত্তিক কম্পিউটারটি ভবিষ্যতে কোয়ান্টাম নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তথ্য প্রেরণ এবং অন্যান্য অপটিক্যাল ক্লাসিক্যাল কম্পিউটার সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে।

সাধারণত কোয়ান্টাম কম্পিউটারগুলো বিশাল শক্তি প্রয়োজন করে, কারণ সেগুলোকে কুলড করতে প্রচুর শক্তি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এই নতুন প্রযুক্তি কোন অতিরিক্ত কুলিং সিস্টেম ছাড়াই স্বাভাবিক তাপমাত্রায় কাজ করতে পারে, যা শক্তি সাশ্রয়ী এবং কার্যকরী। এই কম্পিউটারটি অন্যান্য কোয়ান্টাম প্রযুক্তির তুলনায় কম শক্তি ব্যবহার করে এবং সাশ্রয়ী মূল্যের হতে পারে। ফলে, এটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন ড্রাগ ডেভেলপমেন্ট, লজিস্টিক অপটিমাইজেশন, ডেটা সিকিউরিটি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।

কোয়ান্টাম কম্পিউটারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এর অপারেশনাল পরিবেশে তাপমাত্রা স্থিতিশীল রাখা। প্রচলিত কোয়ান্টাম সিস্টেমগুলোতে বাহ্যিক প্রভাব যেমন ভাইব্রেশন বা চুম্বকীয় ক্ষেত্রের কারণে তথ্য হারানোর ঝুঁকি থাকে। কিন্তু এই নতুন ফোটনভিত্তিক কোয়ান্টাম কম্পিউটারটি তাপমাত্রার প্রতি কম সংবেদনশীল, এবং তাই স্বাভাবিক পরিবেশেও এটি কাজ করতে পারে। এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে আরো কার্যকরী হতে পারে কারণ এতে অতিরিক্ত জটিল কুলিং সিস্টেমের প্রয়োজন হবে না এবং এটি বড় আকারের কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ব্যবস্থায় রূপান্তর করা সহজ হবে।

এই কোয়ান্টাম কম্পিউটারটি এখনো গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে, কিন্তু এর বাণিজ্যিকীকরণের সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। তাপমাত্রার প্রতি সংবেদনশীল না হওয়ায় এটি ভবিষ্যতে দৈনন্দিন ব্যবহারে সহজেই প্রবেশ করতে পারে। এছাড়া, অন্যান্য কোয়ান্টাম প্রযুক্তির তুলনায় এটি অনেক সাশ্রয়ী হওয়ায়, গবেষকরা আশা করছেন এটি ভবিষ্যতে বড় পরিসরে ব্যবহৃত হবে। গবেষক দলের প্রধান চু চি-সুং উল্লেখ করেছেন যে, এই প্রযুক্তি এখনো অনেকটাই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, এবং ভবিষ্যতে একক ফোটনে আরও বেশি তথ্য সংরক্ষণ করার চেষ্টা চালানো হবে। এর মাধ্যমে আরো জটিল প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব হবে এবং কোয়ান্টাম নেটওয়ার্কের সঙ্গে এটি সহজেই একত্রিত করা যাবে।

আরও পড়ুনঃ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করবে? এর বিস্তারিত তথ্য

প্রথমে গবেষণার এই পর্যায়ে এটি শুধু একটি প্রমাণিক মডেল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, কিন্তু ভবিষ্যতে এটি বিভিন্ন ক্ষেত্র যেমন ওষুধ উন্নয়ন, নিরাপদ যোগাযোগ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে ব্যবহার করা হতে পারে। তাই, এই নতুন উদ্ভাবন শুধু প্রযুক্তিগত উন্নয়নের দিকেই নয়, বরং এর বাণিজ্যিকীকরণের সম্ভাবনাও বহুদূর প্রসারিত করতে পারে।

তথ্য সূত্রঃ লাইভসাইন্স

Comment

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো