চীন সম্প্রতি তাদের এএস৭০০ডি বৈদ্যুতিক এয়ারশিপের প্রথম সফল পরীক্ষামূলক উড়ান সম্পন্ন করেছে। এই নতুন প্রযুক্তির এয়ারশিপটি শুক্রবার হুবেই প্রদেশের জিংমেন শহরে উড্ডয়ন করে। এটি চীনের নিম্ন-উচ্চতার অর্থনীতি ও সবুজ বিমান পরিবহন খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে মনে করা হচ্ছে। চীনের অ্যাভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন (এভিআইসি) এই এয়ারশিপটি তৈরি করেছে।
এই সফল পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন এয়ারশিপটির প্রযুক্তিগত পরিপক্বতা এবং কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে আরও উন্নত বৈদ্যুতিক এয়ারশিপ তৈরির জন্য এটি একটি ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। উড্ডয়নের সময় এএস৭০০ডি প্রথমে উল্লম্বভাবে উপরে ওঠে এবং দ্রুত ৫০ মিটার উচ্চতায় পৌঁছে যায়। এরপর এটি কিছুক্ষণ ভাসমান অবস্থায় থাকে এবং ধীরে ধীরে নিচে নেমে স্থিরভাবে অবতরণ করে।
পরীক্ষামূলক ফ্লাইটের পাইলট লিন হং বলেন, “বৈদ্যুতিক এয়ারশিপ চালানোর অভিজ্ঞতা নতুন জ্বালানিচালিত গাড়ি চালানোর মতোই মসৃণ এবং হালকা অনুভূত হয়। এটি খুবই শান্তভাবে কাজ করে, ফলে চালানো এবং যাত্রা করা বেশ আরামদায়ক।”
এভিআইসির বিশেষ যানবাহন গবেষণা প্রতিষ্ঠান এই এয়ারশিপটি তৈরি করেছে। এটি আগের এএস৭০০ মডেলের একটি উন্নত সংস্করণ, যেখানে ঐতিহ্যবাহী এভিয়েশন গ্যাসোলিনের পরিবর্তে পুরোপুরি বৈদ্যুতিক শক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এয়ারশিপটিতে উন্নত লিথিয়াম-ব্যাটারি চালিত মোটর, উন্নত প্রপেলার সিস্টেম, থ্রাস্ট-ভেক্টর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং নতুন কুলিং সিস্টেম সংযোজন করা হয়েছে। ফলে এটি আগের মডেলের তুলনায় আরও উন্নত কর্মক্ষমতা প্রদর্শন করতে সক্ষম।
প্রধান ডিজাইনার ঝো লেই জানান, “এএস৭০০ডি পুরোপুরি লিথিয়াম-ব্যাটারি শক্তি দ্বারা চালিত, যার ফলে এটি কার্যত শূন্য নির্গমন নিশ্চিত করে এবং এর শব্দ কম উৎপন্ন হয়। এটি পরিবেশবান্ধব বিমান ব্যবস্থার একটি নতুন ধাপ।”
এই এয়ারশিপটি বিশেষত এমন এলাকায় ব্যবহার করা যাবে যেখানে শব্দ ও দূষণের মাত্রা কম রাখা জরুরি, যেমন প্রকৃতি সংরক্ষণ এলাকা, কনসার্ট, ম্যারাথন এবং অন্যান্য বৃহৎ জনসমাবেশ। এয়ারশিপটির সর্বোচ্চ উড্ডয়ন উচ্চতা ৩১০০ মিটার এবং সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। এটি মোট ১০ জন যাত্রী বহন করতে সক্ষম, যার মধ্যে একজন পাইলট অন্তর্ভুক্ত।
এএস৭০০ডি এয়ারশিপ বিভিন্ন কার্যক্রমে ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন:
- আকাশ থেকে ছবি তোলা
- নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ
- যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও ট্রাফিক পরিচালনা
- যোগাযোগ রিলে কার্যক্রম
এর উচ্চ নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার কারণে এটি পর্যটন, বিজ্ঞাপন, নগর নিরাপত্তা, জরুরি উদ্ধার কার্যক্রম এবং অন্যান্য নিম্ন-উচ্চতা সংক্রান্ত অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য আদর্শ। এভিআইসির বিশেষ যানবাহন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ঝাং লিক্সিয়ান বলেন, “পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে বর্তমান বিশ্বে সচেতনতা বাড়ছে, তাই বিমান শিল্পেরও একটি সবুজ রূপান্তর প্রয়োজন। আমরা এএস৭০০ সিরিজের ম্যান্ড এয়ারশিপসহ অন্যান্য প্রধান প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে সবুজ প্রযুক্তির ব্যবহার আরও এগিয়ে নিতে কাজ করছি।”
এই নতুন এয়ারশিপটি ভবিষ্যতে আরও উন্নত বৈশিষ্ট্য যুক্ত করে বাজারে আসতে পারে। বিশেষত, দীর্ঘ সময় বাতাসে থাকার ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আরও শক্তিশালী ব্যাটারি প্রযুক্তি যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। চীনের এই প্রযুক্তিগত উন্নতি শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের জন্য নয়, বরং বৈশ্বিক সবুজ বিমান শিল্পের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
চীন এক অত্যাধুনিক চিপ তৈরি করেছে যা ভবিষ্যৎ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বদলে দিতে পারে