চীনের বিজ্ঞানীরা আধুনিক প্রযুক্তিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে, যেখানে তারা সফলভাবে একটি ১৯৩ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের গভীরে অতিবেগুনি (ডিপ ইউভি) লেজার তৈরি করেছে। চীনের বিজ্ঞান একাডেমির (সিএএস) গবেষকরা এই প্রযুক্তিটি তৈরি করেছেন। বর্তমানে আধুনিক ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস, যেমন মোবাইল ফোন, কম্পিউটার এবং অন্যান্য উন্নত যন্ত্রপাতির ক্ষুদ্রায়ন ও কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ফটোলিথোগ্রাফি ব্যবহৃত হয়। ফটোলিথোগ্রাফি প্রক্রিয়ায় সিলিকন ওয়েফারে নির্দিষ্ট নকশা খোদাই করার জন্য বিশেষ ধরনের অতিবেগুনি (ইউভি) লেজার ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে ১৯৩ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ইউভি আলো ব্যবহার করে লিথোগ্রাফি করা হয়, যা গ্যাস-ভিত্তিক এক্সাইমার লেজারের মাধ্যমে উৎপন্ন হয়।
সিএএস-এর গবেষকরা এমন একটি নতুন ধরনের লেজার তৈরি করেছেন যা সম্পূর্ণভাবে কঠিন পদার্থ নির্ভর এবং কোনো গ্যাসের প্রয়োজন নেই। প্রচলিত এক্সাইমার লেজারগুলোতে আর্গন (Ar), ফ্লোরিন (F) এবং নিওন (Ne) গ্যাসের সংমিশ্রণ ব্যবহার করা হয়, যা উচ্চ-ভোল্টেজের সাহায্যে উত্তেজিত হয়ে ইউভি আলো উৎপন্ন করে। তবে এই পদ্ধতিতে বিষাক্ত গ্যাস ব্যবহারের কারণে এটি জটিল এবং ব্যয়বহুল। অন্যদিকে, নতুন কঠিন-অবস্থা লেজার শুধুমাত্র ক্রিস্টাল ও অপটিক্স ব্যবহার করে কাজ করে, যা নিরাপদ ও সহজ পরিচালনাযোগ্য।
নতুন লেজার সিস্টেমে Yb:YAG ক্রিস্টাল অ্যাম্প্লিফায়ার ব্যবহার করা হয়, যা ১০৩০ ন্যানোমিটার ইনফ্রারেড লেজার তৈরি করে। এরপর এটি বিভিন্ন অপটিক্যাল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২৫৮ ন্যানোমিটার আলোতে রূপান্তরিত হয়, যা পরবর্তীতে আরও একটি বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে ১৯৩ ন্যানোমিটার ইউভি আলোতে রূপান্তরিত হয়।
এই প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত অপটিক্যাল উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- অপটিক্যাল প্যারামেট্রিক অ্যাম্প্লিফায়ার (ওপিএ), যা ভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো উৎপন্ন করে।
- লিথিয়াম ট্রাইবোরেট (এলবিও) স্ফটিক, যা দুটি আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য মিলিয়ে ১৯৩ ন্যানোমিটার আলো তৈরি করে।
এই নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে চিপ নির্মাণের খরচ কমতে পারে, কারণ এতে ক্ষতিকারক গ্যাস ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। কঠিন-অবস্থা লেজার সাধারণত আরও দীর্ঘস্থায়ী এবং কম রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়।
তবে, বর্তমানে এই লেজারের শক্তি মাত্র ৭০ মিলিওয়াট, যা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত এক্সাইমার লেজারের তুলনায় কয়েক শতগুণ কম। বর্তমানে ব্যবহার হওয়া এক্সাইমার লেজার ১০০-১২০ ওয়াট শক্তি উৎপন্ন করতে পারে, যা শিল্পোন্নত উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য।
যদিও এখনই এই লেজার বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব নয়, তবে গবেষকরা যদি শক্তি বৃদ্ধির উপায় খুঁজে পান, তাহলে এটি আধুনিক চিপ নির্মাণ শিল্পে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তির আরও উন্নতি হলে এটি গ্যাস-ভিত্তিক লেজারের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে, যা সেমিকন্ডাক্টর শিল্পকে আরও দক্ষ, নিরাপদ এবং পরিবেশবান্ধব করে তুলবে।
চীন এক অত্যাধুনিক চিপ তৈরি করেছে যা ভবিষ্যৎ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বদলে দিতে পারে