সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা মঙ্গলে প্রাচীন মহাসাগরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা সম্পর্কে নতুন প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। চীনের গবেষকরা তাদের আন্তর্জাতিক সহকর্মীদের সাথে মিলে মঙ্গলের পৃষ্ঠের নিচে কিছু নির্দিষ্ট প্রতিফলন স্তর চিহ্নিত করেছেন, যা অতীতে সেখানে একটি মহাসাগর থাকার সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। এই গবেষণাটি “প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস (PNAS)” সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
মঙ্গলের উত্তর নিম্নভূমির বিশাল অঞ্চল একসময় জলমগ্ন ছিল বলে বহু গবেষণায় ধারণা করা হয়েছিল। তবে, এই তত্ত্বের বৈধতা নিয়ে বিতর্ক ছিল, কারণ উপগ্রহ চিত্র থেকে প্রাপ্ত উপকূলরেখার উচ্চতা সব জায়গায় সমান নয়। উপরন্তু, গত চার বিলিয়ন বছরে মঙ্গল গ্রহ বিভিন্ন আবহাওয়া পরিবর্তন, ভূতাত্ত্বিক কার্যকলাপ এবং গ্রহাণু সংঘর্ষের ফলে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের শিকার হয়েছে, যা এই মহাসাগরের চিহ্নগুলো ধ্বংস বা বিকৃত করে থাকতে পারে।
২০২১ সালের মে মাসে, চীনের ঝুরং (Zhurong) রোভার সফলভাবে মঙ্গলের দক্ষিণ ইউটোপিয়া প্লানিশিয়ায় অবতরণ করে। এরপর এক বছর ধরে এটি ১,৯২১ মিটার পথ অতিক্রম করে এবং প্রচুর বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ করে। ঝুরং রোভার একটি দ্বৈত-ফ্রিকোয়েন্সি সাবসারফেস-পেনিট্রেটিং রাডার ব্যবহার করে মাটির নিচের স্তর পর্যবেক্ষণ করে এবং সম্ভাব্য জল বা বরফের উপস্থিতি চিহ্নিত করার চেষ্টা করে।
গুয়াংঝো বিশ্ববিদ্যালয়, চাইনিজ একাডেমি অফ সায়েন্সেস, টংজি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে এবং পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে ঝুরং রোভারের রাডার ডেটাতে কিছু বিশেষ প্রতিফলন স্তর বিদ্যমান। এরা একদিকে ঝুঁকে আছে, এবং তাদের ঢাল ছয় থেকে বিশ ডিগ্রির মধ্যে। এই স্তরগুলোর গঠন পৃথিবীর উপকূলবর্তী এলাকার তলদেশের সঞ্চিত স্তরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে যে এই স্তরগুলো বায়ুচলাচল দ্বারা সৃষ্ট বালির স্তূপ বা নদীর প্লাবনভূমির গঠিত স্তর নয়। তাদের পুরুত্ব ১০ থেকে ৩৫ মিটার পর্যন্ত, এবং ১.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত। এই তথ্যগুলো নির্দেশ করে যে, এখানে একসময় বড় পরিমাণে উপকূলীয় অবক্ষেপন ঘটেছে, যা কেবল স্বল্পমেয়াদী বরফ গলার ফলে তৈরি হয়নি। বরং এটি একসময় মঙ্গলের এই অঞ্চলে বিশাল জলভাগের উপস্থিতি নির্দেশ করে।
এই আবিষ্কার প্রমাণ করে যে মঙ্গলের উত্তর সমতলভূমিতে একসময় একটি প্রাচীন মহাসাগর ছিল। এটি মঙ্গলের অতীত পরিবেশ এবং জলবায়ুর বিবর্তন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা দেয়। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই গবেষণা মঙ্গলের অতীত জলবায়ুর আরও বিশদ বিশ্লেষণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই গবেষণা মঙ্গলের অতীতে প্রাণের সম্ভাব্য অস্তিত্ব এবং তার আবহাওয়া পরিবর্তনের ইতিহাস সম্পর্কে আরও গবেষণার পথ উন্মুক্ত করবে। ভবিষ্যতে আরও রাডার বিশ্লেষণ এবং নতুন মিশনের মাধ্যমে এই বিষয়ে আরও সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
মঙ্গলের দক্ষিণ মেরুর শীতকালীন বরফাবৃত দৃশ্য : মঙ্গল এক্সপ্রেস মিশনের তোলা ছবি