আজকের যুগে কম্পিউটার আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু প্রায় সময় আমরা দেখি যে, আমাদের কম্পিউটারটি খুবি ধীর গতির হয়ে যায়, যা আমাদের কাজের দক্ষতাকে প্রভাবিত করে এবং প্রচন্ড বিরক্তের কারণ হয় । কম্পিউটার ধীরে চললে কাজের গতি অনেক কমে যায়। কিন্তু চিন্তার কিছু নেই, আজ আপনাদের সাথে এমন ১০টি টিপস এন্ড ট্রিকস শেয়ার করব যেগুলো ব্যবহার করে আপনি আপনার কম্পিউটার স্পিড কে দ্বিগুন বাড়িয়ে ফেলতে পারবেন। আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো করে পড়ুন, কথা দিচ্ছি আজকের পর থেকে আপনার পিসি আর কোনোদিন স্লো হবেনা। এই নিয়মগুলো ফলোকরার পর।
১। ডিস্ক ক্লিন আপ করা
- Start অথবা উইন্ডোজ বাটনে ক্লিক করে সর্চ বক্সে “Disk Cleanup” টাইপ করুন।
- ডিস্ক ক্লিনআপ টুলটি ওপেন করুন।
- ড্রাইভ নির্বাচন করুন (সাধারণত C ড্রাইভ) এবং “OK” ক্লিক করুন।
- টুল স্ক্যান করার পর, মুছে ফেলা যেতে পারে এমন ফাইলগুলির তালিকা দেখাবে।
- অপ্রয়োজনীয় ফাইল নির্বাচন করুন যে ফাইলগুলো ডিলিট করলে আপনার সমস্যা হবেনা, যেমন “Temporary files”, “System cache files”, “Recycle Bin”, ইত্যাদি।
- “OK” ক্লিক করুন এবং “Delete Files” নির্বাচন করুন।
২। টেম্পোরারি ফাইল মুছে ফেলা
- Run ডায়ালগ ওপেন করুন (Windows Key + R চাপুন)।
- “%temp%” টাইপ করুন এবং “Enter” চাপুন।
- একটি ফোল্ডার খুলবে যা টেম্পোরারি ফাইল ধারণ করে। সমস্ত ফাইল নির্বাচন করুন (Clrl + A) এবং “Delete” ক্লিক করুন।
- একইভাবে “temp” এবং “prefetch” লিখে করুন।
৩। রিসাইকেল বিন/ট্র্যাশ খালি করা
- Recycle Bin আইকন এর উপরে মাউস কার্সর নিয়ে রাইট বাটন ক্লিক করুন।
- “Empty Recycle Bin” ক্লিক করুন।
- নিশ্চিতকরণের জন্য “Yes” ক্লিক করুন।
৪। অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম আনইনস্টল করা
- Control Panel ওপেন করুন।
- “Programs” বা “Programs and Features” নির্বাচন করুন।
- ইনস্টল করা প্রোগ্রামগুলির তালিকা দেখুন এবং অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রামগুলো সিলেক্ট করুন।
- “Uninstall” বাটনে ক্লিক করুন ।
৫। স্টার্টআপ প্রোগ্রামগুলো বন্ধ করা
System Configuration (msconfig) ব্যবহার করে স্টার্টআপ প্রোগ্রাম বন্ধ করা
Windows 7/8/10
- Run ডায়ালগ বক্স ওপেন করতে Windows Key + R চাপুন।
- বক্সে “msconfig” টাইপ করুন এবং Enter চাপুন।
- System Configuration উইন্ডোতে “Startup” ট্যাব নির্বাচন করুন।
- Windows 7-এ, এখানে আপনি স্টার্টআপ প্রোগ্রামগুলো সরাসরি দেখতে পাবেন এবং চেকবক্সের মাধ্যমে স্টার্টআপে কোন প্রোগ্রামগুলো চালু হবে তা নির্বাচন করতে পারবেন। অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রামগুলোর টিক চিহ্ন সরিয়ে দিন এবং OK চাপুন।
৬।ফ্রী এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার আনইন্সটল করা
- মাঝে মাঝে কিছু অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টি–ভাইরাস সফটওয়্যার বিশেষ করে ফ্রী অ্যান্টি–ভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করার ফলে কম্পিউটার প্রচুর স্লো হয়ে যায়। এই জন্য অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টি–ভাইরাস সফটওয়্যার আনইন্সটল করে দিতে হবে।
৭। অটো উইন্ডোজ আপডেট বন্ধ করা
- Windows Update Service বন্ধ করলে Windows স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপডেট ডাউনলোড এবং ইনস্টল করা বন্ধ করবে। এটি সহজতম পদ্ধতিগুলোর মধ্যে একটি।
- Run ডায়ালগ বক্স ওপেন করুন (Windows Key + R চাপুন)।
- বক্সে services.msc টাইপ করুন এবং Enter চাপুন।
- Services উইন্ডোটি ওপেন হবে। স্ক্রল করে নিচে যান এবং Windows Update সার্ভিসটি খুঁজে বের করুন।
- সার্ভিসটির উপর ডাবল ক্লিক করুন।
- Startup type অপশনে গিয়ে Disabled নির্বাচন করুন।
- এরপর Stop বাটনে ক্লিক করুন এবং Apply ও OK চাপুন।
- এখন থেকে Windows স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপডেট ডাউনলোড করবে না।
৮। ডিফ্র্যাগমেন্টেশন
ডিফ্র্যাগমেন্টেশন হল হার্ডড্রাইভে থাকা ফাইলগুলিকে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানোর প্রক্রিয়া, যা আপনার কম্পিউটারের গতি এবং পারফরম্যান্স বাড়াতে সহায়তা করে। নিচে Windows-এ কিভাবে ডিফ্র্যাগমেন্টেশন করবেন তা ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করা হলো:
- Start মেনুতে ক্লিক করুন অথবা Windows Key চাপুন, তারপার সার্চ করুন “Defragment” লিখে।
- “Defragment and Optimize Drives” অপশনটি সিলেক্ট করুন।
- ড্রাইভ অপ্টিমাইজার উইন্ডোতে, আপনার সমস্ত ড্রাইভের তালিকা দেখাবে।
- যে ড্রাইভটি ডিফ্র্যাগমেন্ট করতে চান তা নির্বাচন করুন (সাধারণত এটি আপনার C: ড্রাইভ)।
- নির্বাচিত ড্রাইভের অবস্থা যাচাই করতে, “Analyze” বাটনে ক্লিক করুন।
- এটি ড্রাইভে ফাইল ফ্র্যাগমেন্টেশন কী পরিমাণে হয়েছে তা দেখাবে। যদি ফ্র্যাগমেন্টেশন বেশি হয় (সাধারণত ১০% বা তার বেশি), তাহলে ডিফ্র্যাগমেন্ট করা প্রয়োজন।
- “Optimize” বাটনে ক্লিক করুন। এটি ডিফ্র্যাগমেন্টেশন প্রক্রিয়া শুরু করবে।
- পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কিছু সময় লাগতে পারে, এটি নির্ভর করবে আপনার ড্রাইভের আকার এবং ফাইল ফ্র্যাগমেন্টেশন স্তরের উপর।
- প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ড্রাইভের অবস্থা আপডেট হবে এবং ফ্র্যাগমেন্টেশন রেট কমে যাবে।
- প্রক্রিয়া শেষ হলে আপনার ড্রাইভ আরও কার্যকরীভাবে কাজ করবে।
- আপনি চাইলে সাপ্তাহিক বা মাসিক ভিত্তিতে স্বয়ংক্রিয় ডিফ্র্যাগমেন্টেশনও সেট করতে পারেন।
- ডিফ্র্যাগমেন্টেশন উইন্ডোতে, “Change settings” বাটনে ক্লিক করুন।
- একটি নির্দিষ্ট সময় নির্বাচন করুন এবং “Run on a schedule” অপশনটি অন করুন।
৯। ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ্লিকেশন বন্ধ করা
Task Manager ব্যবহার করে ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ বন্ধ করা
- Ctrl + Shift + Esc চাপুন অথবা Start মেনুতে ডান ক্লিক করে Task Manager নির্বাচন করুন।
- Processes ট্যাবে যান, এবং এখানে সমস্ত চলমান প্রোগ্রামের তালিকা দেখতে পাবেন।
- ব্যাকগ্রাউন্ডে চলা অ্যাপ্লিকেশনগুলির মধ্যে যেগুলো বন্ধ করতে চান, সেগুলো নির্বাচন করুন এবং “End Process” বাটনে ক্লিক করুন।
১০। কুলিং ফ্যান এবং থার্মাল পেস্ট ব্যবহার করা
যারা ল্যাপটপ ব্যবহার করেন তারা অবশ্যই একটি ভালো মানের কুলিং ফ্যান লাগিয়ে নিবেন। এতে করে আপনার ল্যাপটপটি ঠান্ডা থাকবে আর কাজের গতিও অনেক বাড়বে। আর যাদের ডেস্কটপ পিসি আছে তাদের প্রসেসরের নিচে নতুন থার্মাল পেস্ট দেওয়া। মাঝে মধ্যে পুরোনো পেস্ট শুকিয়ে যায় যার ফলে প্রসেসর অনেক গরম হয় এবং কম্পিউটার স্পিড হ্রাস পায় এর জন্য। তাই পেস্ট যদি শুকিয়ে যায় নতুন পেস্ট ব্যবহার করা অবশ্যই উচিত। আপনি যদি না জানেন কিভাবে প্রসেসর খোলতে হয় তাহলে অবশ্যই প্রফেশনাল কাউকে দিয়ে এটা করিয়ে নিবেন।
পেনড্রাইভ বুটেবল এর মাধ্যমে কিভাবে উইন্ডোজ দেওয়া যায় সেটা জানার জন্য এই নিবন্ধটি পড়ুন- পেনড্রাইভ বুটেবল করার সহজ পদ্ধতি
অতিরিক্ত টিপস:
- কম্পিউটার পরিষ্কার রাখুন: ধুলোবালি কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
- কম্পিউটারকে ওভারহিট হতে দিবেন না: কম্পিউটার যদি খুব গরম হয়, তাহলে তার পারফরম্যান্স কমে যাবে।সেই জন্য একটি ভালোমানের কুলিং ফ্যান ব্যবহার করুন।
- নিয়মিত কম্পিউটার রিস্টার্ট করুন: রিস্টার্ট করলে কম্পিউটারের মেমোরি ফ্রেশ হয়।