ইউরোপীয় ইউনিয়নের বড় পদক্ষেপ অ্যাপল এর বিরুদ্ধে : আইওএস সিস্টেমকে অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের সাথে সংযুক্ত করার নির্দেশ

ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন পদক্ষেপে অ্যাপলকে বাধ্য করা হচ্ছে তাদের আইওএস সিস্টেমকে অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের সাথে সংযুক্ত করতে। এই পরিবর্তনগুলি ইউরোপীয় ইউনিয়নের লক্ষ্য “কার্যকর আন্তঃসংযোগ” নিশ্চিত করার একটি প্রচেষ্টা। এর মধ্যে রয়েছে অ্যাপলের বিভিন্ন ফিচার যেমন এয়ারড্রপ এবং এয়ারপ্লে, যা বর্তমানে শুধুমাত্র অ্যাপল ডিভাইসের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ইউরোপীয় কমিশনের প্রকাশিত নতুন এক নথি থেকে জানা যায়, অ্যাপলকে তাদের আইওএস এবং সংশ্লিষ্ট সিস্টেমে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে বলা হয়েছে। এই পরিবর্তনগুলোর মধ্যে রয়েছে তৃতীয় পক্ষের স্মার্টওয়াচের সাথে বিজ্ঞপ্তি কাজ করার সুবিধা, যেভাবে অ্যাপল ওয়াচের সাথে কাজ করে। এছাড়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন চায় অ্যাপল তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে তাদের নিজস্ব অ্যাপের মতো ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করার সুযোগ প্রদান করুক। এই ফিচারটি বর্তমানে অ্যাপলের একচেটিয়া সুবিধা এবং অন্যান্য ডিভাইসের সাথে এটি কার্যকরভাবে কাজ করে না।

আরও পড়ুনঃ আইফোনের ইতিহাসে সবচাইতে বড় আপডেট হতে যাচ্ছে আইওএস ১৮.২

অ্যাপলের এয়ারড্রপ ফিচারটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিশেষ নজরে রয়েছে। এয়ারড্রপ বর্তমানে শুধুমাত্র আইওএস এবং ম্যাকওএস ডিভাইসের মধ্যে ফাইল স্থানান্তরের জন্য ব্যবহার করা যায়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রস্তাব অনুযায়ী, অ্যাপলকে এমন একটি প্রোটোকল স্পেসিফিকেশন প্রদান করতে হবে যা তৃতীয় পক্ষের ডিভাইসগুলোকে এয়ারড্রপের মাধ্যমে ফাইল আদান-প্রদানের সক্ষমতা দেবে। এই পরিবর্তনের ফলে আইওএস ডিভাইস এবং অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের মধ্যে সরাসরি ফাইল শেয়ার করা যাবে।

এয়ারপ্লে বর্তমানে কিছু টিভি এবং তৃতীয় পক্ষের পণ্যে কাজ করে, তবে এটি শুধুমাত্র আইওএস ডিভাইসের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন অ্যাপলকে নির্দেশ দিয়েছে, তৃতীয় পক্ষের ডিভাইসকে এয়ারপ্লে সেবাদাতা হিসেবে কাজ করার সুযোগ দিতে। এর ফলে, অ্যান্ড্রয়েড বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের ডিভাইসগুলো এয়ারপ্লের মাধ্যমে মিডিয়া স্ট্রিমিং করতে পারবে। উদাহরণস্বরূপ, গুগলের কাস্ট প্রযুক্তি বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে সমানভাবে কাজ করে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন চায় অ্যাপলও এমন সমান সুবিধা প্রদান করুক।

অ্যাপল অবশ্য এই পরিবর্তনগুলো নিয়ে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই নির্দেশনাকে সমালোচনা করে অ্যাপল বলেছে, এটি ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। অ্যাপলের দাবি, বিশেষ করে মেটার মতো কোম্পানিগুলো যদি এই সুযোগ পায়, তবে এটি ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের নতুন ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। অ্যাপলের মতে, এয়ারপ্লে খুলে দিলে ব্যবহারকারীদের বাড়ির তথ্য মেটার মতো কোম্পানিগুলোর কাছে যেতে পারে, যা নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। এই বিষয়টি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনো পরামর্শ গ্রহণ করছে এবং এই প্রক্রিয়া ২০২৫ সালের জানুয়ারি ৯ তারিখ পর্যন্ত চলবে। যদি অ্যাপল নির্দেশিত পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের জরিমানার সম্ভাবনা রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই উদ্যোগটি প্রযুক্তি শিল্পে আরও প্রতিযোগিতা এবং উদ্ভাবন বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।

এই প্রবন্ধ থেকে আমরা বুঝতে পারি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন অ্যাপলের সিস্টেমকে আরও উন্মুক্ত এবং আন্তঃসংযোগযোগ্য করার জন্য একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলে, শুধুমাত্র অ্যাপলের ব্যবহারকারীরা নয়, অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের ব্যবহারকারীরাও অ্যাপলের সেবাগুলোর সুবিধা নিতে পারবে। তবে অ্যাপল এই পরিবর্তনগুলো নিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, বিশেষ করে নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তার ক্ষেত্রে। ব্যবহারকারীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টিও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যাপল এয়ারট্যাগ ২ তে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো