বর্তমান সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এআই প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির সাথে সাথে এটি অপরাধমূলক কাজে ব্যবহারের ঝুঁকিও বেড়েছে। এই প্রযুক্তি আজকাল সাইবার অপরাধ, শিশু নির্যাতন, এবং বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। AI-এর মাধ্যমে এই ধরনের অপরাধ করা এখন আগের চেয়ে অনেক সহজ এবং পুলিশ বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কাছে এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।
ব্রিটিশ পুলিশের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা, অ্যালেক্স মারে, সম্প্রতি এ বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, AI এখন অপরাধের বিভিন্ন ধরণে ব্যবহৃত হচ্ছে, এবং পুলিশের এই প্রযুক্তির ব্যবহারের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। এর ফলে শিশু নির্যাতন, জালিয়াতি এবং হ্যাকিংয়ের মতো অপরাধগুলো নতুন মাত্রা পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সম্প্রতি একটি কেসে একটি আন্তর্জাতিক কোম্পানির অর্থ কর্মীকে প্রতারণামূলক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রায় ২০.৫ মিলিয়ন পাউন্ড প্রদান করতে বাধ্য করা হয়েছিল।
AI প্রযুক্তির আরেকটি ভয়ানক ব্যবহার হচ্ছে ‘ডিপফেক’ প্রযুক্তি, যা গভীর প্রতারণামূলক ছবি এবং ভিডিও তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। এর মাধ্যমে অপরাধীরা ভুক্তভোগীদের নকল ছবি বা ভিডিও তৈরি করে তাদের ব্ল্যাকমেইল করে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু অপরাধী সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সংগ্রহ করা ছবি AI-এর মাধ্যমে ‘নিউডিফাই’ করে, যা ভুক্তভোগীর জীবনকে হুমকির মধ্যে ফেলে দেয়। এটি মূলত সেক্সটর্শনের একটি রূপ, যেখানে ভুক্তভোগীদের নগ্ন ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করার হুমকি দিয়ে অর্থ বা অন্যান্য সুবিধা আদায় করা হয়।
আরও পড়ুনঃ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করবে? এর বিস্তারিত তথ্য
ইন্টারনেট ওয়াচ ফাউন্ডেশন (IWF) এর মতে, গত বছরের তুলনায় AI-এর মাধ্যমে শিশু নির্যাতনের বিষয়ক ছবি তৈরির রিপোর্ট ৬ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়াও, তাদের এক মাসের পর্যবেক্ষণে ২০,২৫৪টি AI তৈরি শিশু নির্যাতনের ছবি পাওয়া গেছে, যা ডার্ক ওয়েব ফোরামে শেয়ার করা হয়েছিল। অধিকাংশ ছবি সোশ্যাল মিডিয়া বা পাবলিক ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল।
এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত অপরাধীদের মধ্যে একজন ছিলেন হিউ নেলসন, যিনি AI-এর মাধ্যমে শিশুদের অশ্লীল ছবি তৈরি করার জন্য ১৮ বছরের কারাদণ্ড পেয়েছেন। নেলসন এই কাজটি “মূল্যবান সেবা” হিসেবে দেখতেন এবং শিশুদের আত্মীয় বা পরিবার বন্ধুদের কাছ থেকে ছবি নিয়ে সেগুলোকে কাস্টমাইজ করে ভয়ানক এবং অশ্লীল দৃশ্যে পরিণত করতেন। এসব কাজের মাধ্যমে তিনি প্রায় ৫,০০০ পাউন্ড আয় করেছিলেন এবং অনেকগুলো ছবি বিনামূল্যেও শেয়ার করেছিলেন।
এই সমস্ত ভয়ানক কাজের জন্য বিভিন্ন দেশে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে AI-এর ব্যবহারের কারণে অপরাধীরা অনেক বেশি সুযোগ পাচ্ছে এবং তাদের অপরাধমূলক কার্যকলাপের পরিসরও বেড়ে যাচ্ছে। AI-এর সহজলভ্যতা এবং উন্নত সফটওয়্যারের কারণে এটি প্রায় সবার হাতের নাগালে চলে আসছে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের অপরাধের আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে।
এখনও পর্যন্ত, শিশু নির্যাতন এবং জালিয়াতির কাজে AI-এর সবচেয়ে বেশি ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে। তবে সাইবার আক্রমণ ও অন্যান্য অপরাধমূলক কার্যক্রমেও AI-এর সম্ভাব্য ব্যবহার বাড়ছে। AI এখন এমনকি হ্যাকিংয়ের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হচ্ছে, যেখানে এর মাধ্যমে কোড বা সফটওয়্যারের দুর্বলতা খুঁজে বের করা হয় এবং সেগুলোকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়।
আরও পড়ুনঃ এআই (AI) ব্যবহার করে সহজে অনলাইন ইনকাম এর দক্ষতা অর্জন করুন
এছাড়াও, বিভিন্ন চ্যাটবটও অপরাধমূলক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন ২০২১ সালে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথকে ক্রসবো দিয়ে আক্রমণ করার চেষ্টা করেছিলেন এক ব্যক্তি, যিনি একটি AI বন্ধুর থেকে উৎসাহ পেয়েছিলেন। এমনকি গবেষণা করে দেখা গেছে, একজন জনপ্রিয় বাণিজ্যিক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সহজেই ওসামা বিন লাদেনের মতো চ্যাটবট তৈরি করা সম্ভব। এরকম পরিস্থিতি এড়াতে জরুরি প্রয়োজন এ প্রযুক্তির বিষয়ে সঠিক জ্ঞান থাকা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে এই প্রযুক্তির অপব্যবহারের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে এবং এই ধরনের অপরাধের বিস্তার রোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। AI প্রযুক্তির মাধ্যমে অপরাধের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ার যে আশঙ্কা রয়েছে, তার মোকাবিলায় আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের জন্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
এডোবি নিয়ে এসেছে তাদের নতুন এআই টুল: টেক্স এর মাধ্যমে ভিডিও তৈরি