স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এক ধরনের নতুন সফটওয়্যার তৈরি করেছেন, যা একক পরমাণু প্রভাবকের (সিঙ্গল অ্যাটম ক্যাটালিস্ট) বিশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে দ্রুত এবং উন্নততর করে তুলেছে। এই সফটওয়্যার উন্নয়ন আধুনিক রসায়ন এবং প্রভাবক বিজ্ঞানের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
প্রভাবক বা ক্যাটালিস্ট এমন একটি পদার্থ যা রাসায়নিক বিক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং এ জন্য অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োজন হয় না। এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়, যেমন জ্বালানি তৈরি, খাদ্য উৎপাদন এবং টেকসই রাসায়নিক বিক্রিয়া। উদাহরণস্বরূপ, যেমন যেভাবে খামির ময়দার ভেতরে গ্যাস উৎপাদন করে ময়দাকে ফুলিয়ে তোলে এবং এর আকার বাড়ায়, ঠিক তেমনি প্রভাবক বা ক্যাটালিস্ট রাসায়নিক বিক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। এটি অতিরিক্ত শক্তি ছাড়াই একটি বিক্রিয়াকে কার্যকর এবং দ্রুততর করতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঃ নতুন ধরণের প্লাস্টিক উপাদান যা একইসঙ্গে প্রসারণযোগ্য, নমনীয়, পুনর্ব্যবহারযোগ্য এবং খরচ-সাশ্রয়ী
সাম্প্রতিককালে, একক পরমাণু প্রভাবক নামে একটি বিশেষ প্রভাবক প্রক্রিয়া বিজ্ঞানীদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এই প্রভাবকের কার্যক্ষমতা উন্নয়নে এর সক্রিয় স্থানের (অ্যাকটিভ সাইট) গঠন সম্পর্কে গভীর ধারণা থাকা জরুরি। কারণ, এই স্থানগুলোতেই রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। স্ট্যানফোর্ড সিঙ্ক্রোট্রন রেডিয়েশন লাইটসোর্স (এসএসআরএল) এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, ডেভিস (ইউসি ডেভিস)-এর গবেষকরা একত্রিত হয়ে একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছেন যা একক পরমাণু প্রভাবকের সক্রিয় স্থানের গঠন দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে বিশ্লেষণ করতে সক্ষম। এই গবেষণার ফলাফল “কেমিস্ট্রি-মেথডস” নামক একটি বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রভাবকগুলি সাধারণত একটি নীরব সহায়কের (ইনার্ট সাপোর্ট) উপর ধাতুর ন্যানোক্লাস্টার বা ন্যানোপার্টিকলের আকারে স্থিত থাকে। তবে, ন্যানোপার্টিকলের অভ্যন্তরীণ পরমাণুগুলি সাধারণত অকেজো থাকে। এই সমস্যার সমাধানে, একক পরমাণু প্রভাবক তৈরির ধারণা এসেছে, যেখানে পৃথক ধাতু পরমাণুগুলি সমর্থকের উপর স্থাপন করা হয়। এর ফলে প্রতিটি পরমাণুর সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়।
গঠন বিশ্লেষণের নতুন পদ্ধতি গবেষণার সময় একক প্লাটিনাম পরমাণু এবং ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইড সমর্থক ব্যবহৃত হয়েছিল। নেতৃত্বদানকারী গবেষক রাচিতা রানার দল একটি বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করেন, যার নাম এক্সটেন্ডেড এক্স-রে অ্যাবসোর্পশন ফাইন স্ট্রাকচার (এক্সাফস) স্পেকট্রোস্কপি। এটি সক্রিয় স্থানের আশপাশের গড় পরিবেশ যেমন প্রতিবেশী পরমাণুর সংখ্যা এবং দূরত্ব নির্ধারণে সহায়তা করে।
এক্সাফস বিশ্লেষণের প্রচলিত পদ্ধতিতে শত শত কাঠামো পরীক্ষা করতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ। কিন্তু রানার প্রস্তাবিত নতুন পদ্ধতিতে, থিওরেটিকাল ক্যালকুলেশন যেমন ডেনসিটি ফাংশনাল থিওরি এবং এক্সাফস-এর সমন্বয়ে এই বিশ্লেষণ স্বয়ংক্রিয় করা হয়েছে। নতুন সফটওয়্যারের প্রথম সংস্করণ, কোয়ান্টএক্সএএফএস, একক ধরনের পরমাণুর জন্য গঠন নির্ধারণ করতে সক্ষম।
বেশিরভাগ প্রভাবকই একক পরমাণু এবং ন্যানোপার্টিকলের মিশ্রণে গঠিত হয়। রানার দল কোয়ান্টএক্সএএফএস সফটওয়্যারের উন্নত সংস্করণ তৈরি করেছেন, যার নাম এমএস-কোয়ান্টএক্সএএফএস। এটি সক্রিয় স্থানের প্রকার এবং শতাংশ পরিমাপ করতে সক্ষম এবং সম্পূর্ণ ডেটা বিশ্লেষণ প্রক্রিয়াটি স্বয়ংক্রিয় করে।
রানা জানান, “যদি এটি ম্যানুয়ালি করতে হয়, তবে কয়েক দিন থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তবে এমএস-কোয়ান্টএক্সএএফএস ব্যবহার করলে, একটি সাধারণ কম্পিউটারে রাতারাতি এই বিশ্লেষণ সম্পন্ন করা সম্ভব।”
গবেষক দল এমএস-কোয়ান্টএক্সএএফএস সফটওয়্যারটি বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের জন্য উন্মুক্ত করতে চান। এ ছাড়া, এটি ছাত্রদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করার পরিকল্পনাও রয়েছে। সহ-গবেষক সাইমন আর. ব্যার বলেন, “এই টুলটি প্রভাবক গবেষণার জন্য অনেক সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।” গবেষকরা আশা করছেন, এটি প্রভাবক বিজ্ঞানের পরবর্তী প্রজন্মের গবেষণায় এক বড় ভূমিকা রাখবে।