গুগল এবং মাইক্রোসফটের মধ্যে সম্প্রতি যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, তা প্রযুক্তি দুনিয়ায় বড় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বিতর্কের মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা এবং তথ্য নিয়ন্ত্রণ। গুগল ঘোষণা করেছে যে তারা তাদের বিজ্ঞাপন ব্যবস্থায় একটি নতুন আপডেট আনতে যাচ্ছে, যা ব্যবহারকারীদের ডিভাইসকে ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে ট্র্যাক করবে। এই আপডেট কার্যকর হতে আর মাত্র কিছু দিন বাকি। এই পদক্ষেপ ব্যবহারকারীদের জন্য গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।
ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্টিং কীভাবে কাজ করে, তা বুঝতে হলে জানতে হবে যে এটি একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে একটি ডিভাইসের সফটওয়্যার বা হার্ডওয়্যার সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এই তথ্যগুলি একত্রিত করে একটি ডিভাইস এবং ব্যবহারকারীকে আলাদা করে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। যুক্তরাজ্যের তথ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা (ICO) ইতিমধ্যেই জানিয়েছে যে এটি ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তৃতীয় পক্ষের কুকিজের বিকল্প হিসেবে ফিঙ্গারপ্রিন্টিং কার্যকর হতে পারে, যা গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
আরও পড়ুনঃ গুগল ক্রোম এবং মাইক্রোসফট উইন্ডোজের মধ্যে চলছে আধিপত্যের লড়াই
অন্যদিকে, গুগলের এই পদক্ষেপ এমন একটি সময়ে আসছে যখন তারা নিজেই মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে ব্যবহারকারীদের বিভ্রান্ত করার অভিযোগ তুলেছে। মাইক্রোসফটের বিং সার্চ ইঞ্জিনে গুগল সার্চ ফলাফলকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যাতে এটি গুগল সার্চের মতো দেখায়। এতে ব্যবহারকারীদের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গুগল এবং মাইক্রোসফটের এই প্রতিযোগিতা মূলত ব্যবহারকারীদের নিজেদের প্ল্যাটফর্মে ধরে রাখার কৌশল। তবে গুগলের ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্টিং পদ্ধতি নিয়ে উদ্বেগ আরও বেড়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদ্ধতি ব্যবহারকারীদের পছন্দ এবং নিয়ন্ত্রণ কমিয়ে দেবে। ব্যবহারকারীরা প্রায়শই জানতেই পারবেন না যে তাদের ডিভাইস এবং কার্যক্রম কীভাবে ট্র্যাক করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক কিছু রিপোর্টে আরও বড় উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে। গ্রেভি অ্যানালিটিকস নামের একটি প্রতিষ্ঠান ব্যবহারকারীদের অবস্থান সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ ও ফাঁস করেছে। এই তথ্য ফাঁসের মধ্যে দেখা গেছে জনপ্রিয় কিছু অ্যাপ, যেমন ক্যান্ডি ক্রাশ, টিন্ডার, মাইফিটনেসপাল, এবং বিভিন্ন ধর্মীয় অ্যাপ গোপনে ব্যবহারকারীদের অবস্থান তথ্য সংগ্রহ করছে। এটি ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তার জন্য বড় হুমকি। গ্রেভি অ্যানালিটিকসের লিক সম্পর্কে ৪০৪মিডিয়া জানিয়েছে যে, এই ঘটনা লোকেশন ডেটা ইন্ডাস্ট্রির বাস্তবতা স্পষ্ট করে তুলেছে।
এই ঘটনার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, ব্যবহারকারীরা নিজেদের তথ্য নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলেও তা সবসময় সম্ভব হয় না। এমনকি গোপনীয়তা রক্ষার জন্য যারা ভিপিএন ব্যবহার করেন, তারাও পুরোপুরি সুরক্ষিত নন। অনেক ভিপিএন অ্যাপও ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করে।
গুগল এবং মাইক্রোসফটের এই বিতর্কের মাঝে ব্যবহারকারীদের সচেতন হওয়া জরুরি। তারা যে প্ল্যাটফর্মই ব্যবহার করুক না কেন, তাদের তথ্য কীভাবে সংগ্রহ এবং ব্যবহার করা হচ্ছে, সে সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত। গুগল এবং অন্যান্য প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে তাদের নীতিমালা আরো স্বচ্ছ করতে হবে।
ব্যবহারকারীদের জন্য একটি বড় প্রশ্ন হলো, কীভাবে তারা তাদের গোপনীয়তা রক্ষা করতে পারেন। কিছু সহজ পদ্ধতি রয়েছে, যেমন অ্যাপ পারমিশন নিয়মিত চেক করা, প্রয়োজনীয়তা ছাড়া লোকেশন ট্র্যাকিং বন্ধ রাখা, এবং ব্রাউজারে প্রাইভেসি সেটিংস পরিবর্তন করা। তবে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ব্যবহারকারীদের সচেতনতা বাড়ানোই এই সমস্যার দীর্ঘমেয়াদী সমাধান।
গুগল, মাইক্রোসফট এবং অন্যান্য বড় প্রযুক্তি কোম্পানির দায়িত্ব হলো ব্যবহারকারীদের তথ্য সুরক্ষিত রাখা। তবে বর্তমান পরিস্থিতি বলছে, প্রযুক্তি দুনিয়ায় এই চ্যালেঞ্জ দিনে দিনে বাড়ছে। এটি সমাধান করার জন্য দরকার কার্যকর নীতিমালা এবং ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তার প্রতি শ্রদ্ধা।
যাক্তরাষ্ট্রে মেটা’র নতুন একটি আপডেট নিয়ে প্রচুর সমালোচনার ঝড়