আমাদের কম্পিউটারের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটো অংশ হলো সিপিইউ (CPU) এবং জিপিইউ (GPU)। এই দুটোর কাজ সম্পূর্ণ আলাদা আলাদা। দুটির যেকোনো একটি যদি না থাকে তাহলে আমাদের কম্পিউটার চলবেনা। কিন্তু আমরা প্রায় সময় দেখি অনেক কম্পিউটার শুধু সিপিইউ ব্যবহার করেই চলে, তাহলে সেটা কিভাবে হয়? আসলে আমরা যে সকল সিপিইও ব্যবহার করি যেগুলোতে ইন্টিগ্রেটেড জিপিইউ বিদ্যমান থাকে যার কারণে কম্পিউটার চলতে সাধারণভাবে কোনো সমস্যা হয় না। তবে সে ক্ষেত্রে কম্পিউটারে হেভি কোনো গ্রাফিক্স এর কাজ করা যায়না যেমন- বড় কোনো গেমিং খেলা, গ্রাফিক্স এর কাজ করা, ভিডিউ এডিটিং ইত্যাদি। এই সকল কাজ করতে হলে এক্সটার্নাল জিপিইউ অর্থাৎ যেটাকে আমরা গ্রাফিক্স কার্ড নামে চিনি সেটা লাগবে। আজ আমরা সিপিইউ এবং জিপিইউ এর মধ্যে পার্থক্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
প্রথমে সংক্ষেপে সিপিইউ এবং জিপিইউ কি এটা সম্পর্কে জেনে নেওয়াযাক।
সিপিইউ (CPU) কি?
সিপিইউ-এর পূর্ণ রূপ হচ্ছে সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট। এটিকে কম্পিউটারের “মস্তিষ্ক” বলা হয় কারণ এটি প্রায় সব ধরনের হিসাব-নিকাশ, সিদ্ধান্ত নেওয়া, এবং প্রোগ্রাম চালানোরমত কাজ করে। যেমন: গান বাজানো, ওয়েব ব্রাউজিং, টাইপ করা, গেমের মধ্যে যদি কোনো চরিত্র দৌড়ায় বা গান গায়, সেটার নিয়ন্ত্রণ করা, ফাইল সেভ করা এবং সফটওয়্যার ওপেন করা ইত্যাদি কাজ করে।
সিপিইউ-এর বিশেষত্ব:
- এটিতে ২-১৬টি কোর (Core) থাকে, যেগুলো একইসাথে অনেক কাজ করতে পারে।
- প্রতিটি কোর খুব জটিল হিসাব দ্রুত করতে পারে।
- এটা কোনো কাজ করতে গেলে সেটাকে ধাপে ধাপে সম্পন্ন করে।
জিপিইউ (GPU) কি?
জিপিইউ-এর পূর্ণ নাম গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট। এটির মূল কাজ হলো স্ক্রিনে আমরা যা দেখি সেগুলো সুন্দর এবং দ্রুত দেখানো। যেমন: গেমের মধ্যে রঙিন আকাশ, বিস্ফোরণের ইফেক্ট। ভিডিও এডিটিং-তে ফিল্টার বা ট্রানজিশন যোগ করা। থ্রিডি মডেল বানানো বা সিনেমার ভিজুয়াল ইফেক্ট তৈরি করা। এসকল কাজ সম্পন্ন হয় জিপিইউ এর মাধ্যমে।
জিপিইউ-এর বিশেষত্ব:
- এটিতে হাজার হাজার ছোট কোর থাকে, যা একসাথে অনেকগুলো গ্রাফিক্স রিলেটেড কাজ করতে পারে।
- এটি প্যারালাল প্রসেসিং করে, মানে একই সময়ে হাজারো পিক্সেল বা ইফেক্ট ক্যালকুলেট করে।
- জিপিইউ-এর কাজ হলো সিপিইউ-কে সাহায্য করা। যেমন- যখন সিপিইউ অনেক জটিল কোনো গ্রাফিক্স এর কাজ করতে যায় তখন সে সেটা সম্পূর্ণ নিজে না করে জিপিইউ এর সাথে শেয়ার করে কাজটা সম্পন্ন করে।
উদাহরণ: মনে করেন, আপনি একটি ক্যানভাসে হাজারো তারা আঁকছেন। যদি এই কাজটি সিপিইউ প্রতিটি তারা আলাদা করে আঁকতে যায় তাহলে তার অনেক সময় লাগবে। কিন্তু জিপিইউ একসাথে সব তারা আঁকতে পারবে। আর এর কারণ হচ্ছে সিপিইউতে কোর কম থাকে জিপিইউতে কোর বেশি থাকে।
সিপিইউ এবং জিপিইউ এর মধ্যে পার্থক্য
কাজের ধরন:
- সিপিইউ সরল ও জটিল কাজ করে (যেমন: সফটওয়্যার চালানো, হিসাব করা)।
- জিপিইউ একই রকম সহজ কাজ বারবার করে (যেমন: স্ক্রিনের প্রতিটি পিক্সেলের রঙ বদলানো)।
কোরের সংখ্যা:
- সিপিইউ-এর কোর কম (২-১৬টি), কিন্তু প্রতিটি শক্তিশালী।
- জিপিইউ-এর কোর অনেক বেশি (হাজারো), কিন্তু প্রতিটি কোর সহজ কাজের জন্য।
গতি:
- সিপিইউ একটি কাজ দ্রুত শেষ করে (যেমন: এক্সেল শীট ক্যালকুলেশন)।
- জিপিইউ একসাথে হাজারো কাজ দ্রুত করে (যেমন: ভিডিও রেন্ডারিং)।
উদাহরণ:
- সিপিইউ = একজন মেধাবী ছাত্র যে গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস সব পরীক্ষায় ভালো নম্বর পায়।
- জিপিইউ = ১০০ জন সাধারণ ছাত্র যারা প্রত্যেকে শুধু একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে, তবে তারা এক সময়ে ১০০টি প্রশ্নেন উত্তর দিতে পারে।
তাহলে কে বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
সিপিইউ এবং জিপিইউ আলাদা কাজে বিশেষজ্ঞ। গেম খেলার সময় সিপিইউ গেমের লজিক, সাউন্ড, নিয়ন্ত্রণ করে, আর জিপিইউ গ্রাফিক্স দেখায়। দুজনের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে কম্পিউটার ঠিক মতো চলবে না। তাই বলা যায় দুজনই গুরুত্বপূর্ণ।
আজকাল জিপিইউ শুধু গ্রাফিক্স না, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI), ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং-এর মতো জটিল কাজেও ব্যবহার হয়। কারণ এরা অনেক ডাটা একসাথে প্রসেস করতে পারে!
সংক্ষেপে বলতে গেলে
- সিপিইউ = বহুমুখী প্রতিভা, যেকোনো কাজ করে।
- জিপিইউ = বিশেষজ্ঞ শিল্পী, একসাথে অনেক কাজ করে।