যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ক্রিপ্টোকারেন্সি জগতে তাঁর নিজের নামেই ট্রাম্প কয়েন চালু করেছেন। শুক্রবার এই মুদ্রাটি চালু হওয়ার পর থেকেই এটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। রবিবার ট্রাম্প কয়েন কয়েনের বাজারমূল্য সর্বচ্চ $১৫ বিলিয়ন ছাড়িয়ে গিয়েছিল। যদিও দিন শেষে এটি কিছুটা কমে $৯ বিলিয়ন বাজারমূল্যে স্থিত হয়। ট্রাম্পের এই নতুন উদ্যোগ ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।
শুক্রবার ট্রুথ সোশ্যাল-এ একটি পোস্টের মাধ্যমে ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রাম্প কয়েন মুদ্রাটি তাঁর নির্বাচনী বিজয় এবং আসন্ন শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান উদযাপনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। মুদ্রাটি চালু হওয়ার পর প্রথম দিনেই এর মূল্য ৩০০% বৃদ্ধি পায় এবং শনিবার রাতেও এর বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকে। তবে রবিবারের শেষে এটি কিছুটা কমে $৪৬ এর কাছাকাছি স্থিতি পায়।
আরও পড়ুনঃ ক্রিপ্টো ভক্তদের উল্লাস : বিটকয়েনের নতুন রেকর্ড এবং ব্লকচেইন উদ্যোক্তার বিজয়
ট্রাম্প কয়েন মুদ্রাটি সোলানা ব্লকচেইনে হোস্ট করা হয়েছে এবং এর প্রাথমিক সরবরাহ সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে ২০০ মিলিয়ন কয়েনে। তবে আগামী তিন বছরে এর সংখ্যা ১ বিলিয়নে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। মুদ্রার ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ট্রাম্প কয়েন এর প্রাথমিক ৮০% টোকেন এখনো মুক্তি পায়নি। এই মুদ্রাগুলি সিআইসি ডিজিটাল এলএলসি এবং ফাইট ফাইট ফাইট এলএলসি নামে দুটি সংস্থার কাছে সংরক্ষিত। এই সংস্থাগুলি মুদ্রার লেনদেন থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আয় পাবে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ট্রাম্প কয়েন মুদ্রার ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটি কোনো বিনিয়োগের সুযোগ বা নিরাপত্তার জন্য নয় এবং এটি কোনো রাজনৈতিক প্রচারণা বা সরকারি সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। এটি মূলত একটি ডিজিটাল কালেক্টিবল।
রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ট্রাম্প কয়েন-এর ২৪ ঘণ্টার লেনদেনের পরিমাণ ছিল $৩৬.১৫ বিলিয়ন। ট্রাম্পের এই উদ্যোগ মার্কিন ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এদিকে, নবনির্বাচিত ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পও তাঁর নিজস্ব মিম কয়েন মেলানিয়া কয়েন চালু করেছেন। এটি সোলানা ব্লকচেইনেও ভিত্তিক এবং ট্রাম্প কয়েন-এর মতোই এটি ডিজিটাল মুদ্রার বাজারে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।
ট্রাম্প এর আগে বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে “বিশ্বের ক্রিপ্টো রাজধানী” হিসেবে গড়ে তুলতে চান। তাঁর বিজয়ের পর থেকেই বিটকয়েনসহ অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। নির্বাচনের এক মাসের মধ্যে বিটকয়েন $১০০,০০০-এর মাইলফলক অতিক্রম করে। কয়েনগেকো-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে প্রায় $১.৮ ট্রিলিয়ন যুক্ত হয়েছে।
ট্রাম্প পরিকল্পনা করছেন ক্রিপ্টোকারেন্সি সংস্থাগুলোর উপর থেকে নিয়ন্ত্রনমূলক চাপ কমানোর জন্য একটি নতুন নির্বাহী আদেশ জারি করতে। তিনি একটি ক্রিপ্টো উপদেষ্টা পরিষদ গঠনেরও প্রস্তাব দিয়েছেন, যা সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে এই শিল্পের সমন্বয় সাধন করবে। এই পরিকল্পনার মধ্যে একটি বিটকয়েন রিজার্ভ প্রতিষ্ঠার কথাও রয়েছে, যা সরকারের ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই নতুন উদ্যোগ শুধুমাত্র ক্রিপ্টোকারেন্সি নয়, তাঁর পণ্যের বিক্রিকেও একটি নতুন দিক দিয়েছে। তিনি এর আগে $১০০ মূল্যের রুপার কয়েন, বিশেষ সংস্করণের ঘড়ি, এবং এনএফটি কার্ড চালু করেছিলেন, যা থেকে তিনি প্রায় $৭.২ মিলিয়ন আয় করেছেন। সর্বশেষ, তিনি স্বাক্ষরিত এবং অসাক্ষরিত গিটার বিক্রি করেছেন, যার মূল্য ছিল $১১,৫০০ এবং $১,৫০০। এর মাধ্যমে তিনি $৪.৬ মিলিয়ন আয় করেছেন।
ট্রাম্পের এই নতুন ক্রিপ্টোকারেন্সি উদ্যোগ তাঁর সমর্থকদের জন্য এক নতুন আকর্ষণ তৈরি করেছে। তবে এটি ক্রিপ্টোকারেন্সির পরিবর্তনশীল বাজারে একটি সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।