ডোনাল্ড ট্রাম্পের চিপ আমদানির ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি তাইওয়ানের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চিপ আমদানির ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি তাইওয়ানের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি তাইওয়ানকে তার বৈশ্বিক আধিপত্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে সমস্যায় ফেলতে পারে এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নতুন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমেরিকার বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদারদের বিরুদ্ধে কঠোর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে আসছেন। তার যুক্তি হলো, এর মাধ্যমে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে দেশে উৎপাদন বাড়াতে উৎসাহিত করা হবে এবং বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি কমানো সম্ভব হবে। সর্বশেষ ঘোষিত শুল্কের মধ্যে চিপ আমদানির ওপর ২৫% বা তার বেশি কর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা স্মার্টফোন থেকে শুরু করে সামরিক প্রযুক্তিতেও ব্যবহৃত হয়।

বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি চিপ তাইওয়ানে উৎপাদিত হয় এবং সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তির চিপগুলোর প্রায় সবই এখান থেকে আসে। ফলে এই দ্বীপটি বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিশেষজ্ঞরা তাইওয়ানের এই প্রযুক্তিগত শক্তিকে “সিলিকন শিল্ড” বলে অভিহিত করেছেন, যা চীনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একধরনের প্রতিরক্ষা হিসেবে কাজ করছে। চীন দীর্ঘদিন ধরে তাইওয়ানকে তার ভূখণ্ডের অংশ দাবি করে আসছে এবং প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে এটি দখল করার হুমকি দিয়েছে।

সিটি ইউনিভার্সিটি অব হংকং-এর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ জুলিয়েন চেইস বলেন, “তাইওয়ানের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা তার আধুনিক সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন ক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল, যা বৈশ্বিক বাজারে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে। কিন্তু ট্রাম্পের শুল্ক নীতি এই কৌশলকে কঠিন করে তুলতে পারে এবং তাইওয়ানকে কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিতে বাধ্য করতে পারে।”

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে তাইওয়ানের ব্যাপক সমর্থন থাকলেও বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ট্রাম্প তাইওয়ানকে প্রতিরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করবেন কি না, তা অনিশ্চিত। তিনি অতীতে অভিযোগ করেছেন যে, তাইওয়ান মার্কিন চিপ শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার বিনিময়ে অর্থ প্রদান করা উচিত।

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে ইতোমধ্যেই মার্কিন বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যাতে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো যায়। একই সঙ্গে তিনি প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধির পরিকল্পনাও করেছেন। এছাড়া তার সরকার যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির বিষয়টিও বিবেচনা করছে।

বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের চাপের ফলে তাইওয়ানের চিপ উৎপাদন ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হতে পারে। তবে এটি তাৎক্ষণিকভাবে সম্ভব নয়, কারণ নতুন চিপ কারখানা নির্মাণে কয়েক বছর সময় লাগে।

বিশ্বের বৃহত্তম চিপ নির্মাতা তাইওয়ানের টি.এস.এম.সি (TSMC) দীর্ঘদিন ধরেই তাইওয়ানের বাইরে উৎপাদন বাড়ানোর চাপের মুখে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে অ্যারিজোনায় তিনটি নতুন কারখানায় ৬৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে, যার মধ্যে একটি ২০২৪ সালের শেষের দিকে উৎপাদন শুরু করেছে। এছাড়া, তারা জাপানে দ্বিতীয় কারখানা নির্মাণের পরিকল্পনা করছে এবং গত বছর ইউরোপে প্রথম কারখানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছে।

তবে এই কারখানাগুলোর সংখ্যা যদি খুব বেশি হয়ে যায়, তাহলে তাইওয়ান তার “সিলিকন শিল্ড” হারাতে পারে বলে উদ্বেগ রয়েছে। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ড্যান হাচেসন বলেন, “তাইওয়ানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে কিছু উৎপাদন সরানো গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সব সরিয়ে ফেললে তারা তাদের কৌশলগত গুরুত্ব হারাতে পারে।”

তাইওয়ান সরকার এখনো ট্রাম্পের শুল্ক নীতির সম্ভাব্য প্রভাব বিশ্লেষণ করছে। এই শুল্ক শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে সরাসরি রপ্তানি হওয়া চিপগুলোর ওপর প্রযোজ্য হবে, নাকি শেষ পণ্যে ব্যবহৃত চিপগুলোর ওপরও তা কার্যকর হবে, সেটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

২০২৩ সালে তাইওয়ানের চিপ রপ্তানি ছিল ১৬৫ বিলিয়ন ডলার, যার মাত্র একটি ক্ষুদ্র অংশ সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। বেশিরভাগ চিপ অন্য দেশে পাঠানো হয়, যেখানে সেগুলোকে ইলেকট্রনিক পণ্যে ব্যবহার করা হয় এবং পরে সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য বাজারে রপ্তানি করা হয়।

কিংস কলেজ লন্ডনের উদ্ভাবন নীতি বিশেষজ্ঞ রবিন ক্লিংলার-ভিডরা বলেন, “২৫% শুল্ক গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এটি স্বল্পমেয়াদে তাইওয়ানের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জন্য বড় ধাক্কা হবে না। তবে এটি বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।”

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, শুল্কের কারণে স্মার্টফোন ও ল্যাপটপের দাম বেড়ে যেতে পারে, যা চিপের চাহিদা কমিয়ে দেবে এবং সম্ভাব্যভাবে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে মন্দা সৃষ্টি করতে পারে।

তাইওয়ানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান জোসেফ উ গত সপ্তাহে বলেছেন, এই শুল্কের ব্যয় শেষ পর্যন্ত মার্কিন ভোক্তাদেরই বহন করতে হবে। তিনি আত্মবিশ্বাসী যে, “অবশেষে যুক্তরাষ্ট্র এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে।”

ইলন মাস্কের ৯৭.৪ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ওপেনএআই

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো