ইলন মাস্ক ও বিবেক রামাস্বামী সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে গঠিত ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সি’ (DOGE) নিয়ে বেশ আলোচনা শুরু হয়েছে। এই নতুন বিভাগটির লক্ষ্য হলো সরকারি ব্যুরোক্রেসি কমানো, বেতনহীন ও প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে আগ্রহী বুদ্ধিমান লোকদের নিয়োগ দেয়া এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে খরচ কাটছাঁট করা। ইলন মাস্ক এবং বিবেক রামাস্বামী উভয়ই এই কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং তাঁরা এমন ‘উচ্চ আইকিউ’ কর্মচারীদের খুঁজছেন যারা সপ্তাহে ৮০ ঘণ্টারও বেশি সময় ব্যয় করতে প্রস্তুত। কিন্তু এই পদে কোনও পারিশ্রমিক থাকবে না, যা অনেককে হতাশ করেছে।
DOGE-এর অফিসিয়াল পেজ থেকে পোস্ট করা একটি বার্তায় বলা হয়েছে, হাজার হাজার আমেরিকান এরই মধ্যে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এই কর্মসূচিতে যুক্ত হতে। এই নামের সংক্ষিপ্ত রূপটি স্মরণ করিয়ে দেয় জনপ্রিয় শিবা ইনু কুকুরের মিম এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি ডোজকয়েনের কথা। নতুন এই বিভাগের প্রধানদের পছন্দসই প্রার্থীদের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, তাঁরা খণ্ডকালীন আইডিয়া জেনারেটর নয়, বরং এমন লোকদের চান যারা সপ্তাহে ৮০ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে ইচ্ছুক এবং ‘অনাকর্ষণীয় খরচ কমানো’ কাজে নিজেরা সম্পূর্ণভাবে জড়িত থাকতে পারেন। এই বিভাগ এমন লোকদের চায় যারা সরকারের অতিরিক্ত খরচ কমিয়ে দিতে এবং প্রশাসনের বেতন কমানোর লক্ষ্যে কাজ করতে আগ্রহী।
আরও পড়ুনঃ সাতোশি নাকামোতো রহস্য: পিটার টডের নাম উঠে এলো এইচবিও ডকুমেন্টারিতে
We are very grateful to the thousands of Americans who have expressed interest in helping us at DOGE. We don’t need more part-time idea generators. We need super high-IQ small-government revolutionaries willing to work 80+ hours per week on unglamorous cost-cutting. If that’s…
— Department of Government Efficiency (@DOGE) November 14, 2024
DOGE-এর পোস্টে আরও বলা হয়েছে যে, ইলন মাস্ক এবং বিবেক রামাস্বামী আগ্রহীদের মধ্য থেকে শীর্ষ ১ শতাংশ প্রার্থীকে বাছাই করবেন। আগ্রহী প্রার্থীদের তাঁদের জীবনবৃত্তান্ত পাঠাতে বলা হয়েছে এবং তাঁরা আবেদনপত্রগুলি পর্যালোচনা করবেন। ইলন মাস্ক নিজের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের পোস্টে উল্লেখ করেছেন যে, এই কাজটি অত্যন্ত ক্লান্তিকর, এতে অনেক শত্রু তৈরি হবে এবং কোনও অর্থপ্রদান থাকবে না। তাঁর মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে প্রশাসন সরকারী ব্যুরোক্রেসি এক-তৃতীয়াংশ কমাতে এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ব্যয় থেকে দুই ট্রিলিয়ন ডলার কমাতে চাইছে। এই উদ্যোগটি সাময়িক কষ্টের কারণ হতে পারে বলে মনে করেন ইলন মাস্ক।
এই উদ্যোগের লক্ষ্য হচ্ছে সরকারী প্রশাসনের কার্যকারিতা বাড়ানো এবং অপচয় কমিয়ে সরকারের পরিচালন খরচ কাটছাঁট করা। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করার পর, কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো DOGE নামক এই নতুন বিভাগটির গঠন। তিনি এই বিভাগটিকে ‘আমাদের সময়ের ম্যানহাটন প্রকল্প’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। ম্যানহাটন প্রকল্পটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিখ্যাত গবেষণা প্রকল্প ছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ইলন মাস্ক ও বিবেক রামাস্বামী তাঁর আসন্ন প্রশাসনের জন্য সরকারি ব্যুরোক্রেসি অপসারণ, অতিরিক্ত নিয়মাবলী কমানো, অপচয়ী ব্যয় ছাঁটাই, এবং ফেডারেল এজেন্সিগুলিকে পুনর্গঠন করার পথ সুগম করবেন।
আরও পড়ুনঃ ক্রিপ্টো ভক্তদের উল্লাস : বিটকয়েনের নতুন রেকর্ড এবং ব্লকচেইন উদ্যোক্তার বিজয়
DOGE-এর লক্ষ্য হচ্ছে এমন লোকদের নিয়োগ করা যারা সরকারি ব্যুরোক্রেসি কমাতে এবং জনগণের কষ্টার্জিত অর্থের অপচয় কমাতে ভূমিকা রাখতে পারেন। ইলন মাস্ক এই কাজের প্রচলিত চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে বেশ সচেতন এবং তাঁরা এই প্রকল্পে যে কোনও ধরনের ঝুঁকি নেওয়ার জন্য প্রস্তুত। ট্রাম্পের ভাষায়, এই উদ্যোগটি ‘আমেরিকা রক্ষা’ আন্দোলনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রশাসনের কর্মচারীদের অপচয় এবং অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জনগণের মধ্যে যে ক্ষোভ রয়েছে, তা প্রশমিত করার লক্ষ্যে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে যখন তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কাজের ঘন্টা নিয়ে নানা বিতর্ক চলছে, তখন ইলন মাস্ক ও বিবেক রামাস্বামী তাঁদের প্রচেষ্টায় আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছেন। তাঁরা শুধুমাত্র দক্ষ কর্মী চান না, বরং তাঁরা চান এমন কর্মচারী যারা ‘ছোট সরকারের বিপ্লব’ ঘটাতে সক্ষম এবং অতিরিক্ত পরিশ্রম করতেও পিছপা হবেন না। তাঁদের মতে, সরকারি ব্যুরোক্রেসি কমাতে এবং প্রয়োজনীয় ব্যয় ছাঁটাই করতে এই ধরনের কর্মচারী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এখন পর্যন্ত অনেকেই এই প্রকল্পে অংশগ্রহণের জন্য তাঁদের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে কাজটি অত্যন্ত কঠিন এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য অব্যাহত রাখতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খরচ কমানোর এই উদ্যোগে ইলন মাস্ক ও বিবেক রামাস্বামীর ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং তাঁদের লক্ষ্য হচ্ছে সরকারের অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের বিরুদ্ধে কাজ করা। এই উদ্যোগটি স্বেচ্ছাসেবী এবং এর জন্য কোনও পারিশ্রমিক নেই, যা অনেকের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।