বাংলাদেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য অনেকেই বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হন। সঠিক তথ্য কোথাও পাওয়া যায়না যার কারণে অনেকেই দালাল এর মাধ্যমে অনেক টাকার বিনিময়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স করিয়ে থাকেন । কিন্তু একটু সতর্ক এবং সঠিক তথ্য জানা থাকলে আমরা সহজেই ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে পারি। আজ আমরা এই ড্রাইভিং লাইসেন্স করার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানবো।
ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম সমূহ
১. প্রয়োজনীয় নথি এবং যোগ্যতা
প্রাথমিক যোগ্যতা:
- নাগরিকত্ব: আবেদনকারীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
- বয়স: আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে এবং পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য বয়স ন্যূনতম ২১ বছর হতে হবে।
- শিক্ষাগত যোগ্যতা: কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণী পাস থাকতে হবে।
- স্বাস্থ্য পরীক্ষা: একজন নিবন্ধিত চিকিৎসকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রমাণ করতে হবে যে আবেদনকারী শারীরিকভাবে সুস্থ।
নথির তালিকা:
- আবেদনকারীর সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি [ছবির সাইজ সর্বোচ্চ ১৫০ কেবি (৩০০ x ৩০০ পিক্সেল)]
- রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট (সর্বোচ্চ ৬০০কে.বি)।
- জাতীয় পরিচয়পত্রের স্ক্যান কপি (সর্বোচ্চ ৬০০কে.বি)
- ইউটিলিটি বিলের স্ক্যান কপি (সর্বোচ্চ ৬০০কে.বি), [ আবেদনকারীর বর্তমান ঠিকানা এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা যদি ভিন্ন হয় তবে বর্তমান ঠিকানার ইউটিলিটি বিল সংযুক্ত করতে হবে ]
- নবায়ন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য: বিদ্যমান ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্ক্যান কপি [ ড্রাইভিং লাইসেন্সের নবায়ন/শ্রেণী পরিবর্তন/শ্রেণী সংযোজন/ লাইসেন্সের ধরণ পরিবর্তণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ] (সর্বোচ্চ ৬০০কে.বি)
২. লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন
ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রথম পদক্ষেপ হলো লার্নার বা শিক্ষানবিশ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা। এটি সঠিকভাবে করতে হলে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করতে হবে:
অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া:
- বিআরটিএ সার্ভিস পোর্টাল ভিজিট করুন: BRTA Service Portal এ যান।
- অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন: ‘রেজিস্টার’ বোতামে ক্লিক করে আপনার মোবাইল নম্বর এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিন। একটি পাসওয়ার্ড সেট করুন।
- প্রযোজ্য তথ্য পূরণ করুন: আবেদন ফর্ম পূরণ করুন এবং প্রয়োজনীয় নথি আপলোড করুন।
- অ্যাপ্লিকেশন ফি পরিশোধ করুন: লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য সাধারণত ১ ক্যাটাগরি-৫১৮/-টাকা ও ২ ক্যাটাগরি-৭৪৮/-টাকা ফি লাগে। এটি বিকাশ বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেওয়া যাবে।
- পরীক্ষা ও লাইসেন্স প্রদান: আবেদন জমা দেওয়ার পর, আবেদনকারীদের লিখিত এবং প্রাক্টিক্যাল পরীক্ষা দিতে হবে। পরীক্ষায় সফল হলে, লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হবে। এই লাইসেন্সের মেয়াদ সাধারণত তিন মাস।
স্মার্টফোনের যত্ন নেওয়ার ১০ টি সেরা টিপস এন্ড ট্রিকস: আপনার ফোন নতুন থাকবে সবসময়
৩. ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ
লার্নার লাইসেন্স পাওয়ার পর, আপনাকে ২-৩ মাস ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নিতে হবে। এই সময়কালে আপনাকে ড্রাইভিং দক্ষতা ও ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জানতে হবে। ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের জন্য কোনও ড্রাইভিং স্কুলে ভর্তি হওয়া যেতে পারে, যা আপনার প্রস্তুতিকে আরও উন্নত করবে।
৪. পূর্ণাঙ্গ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন
লার্নার লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে, আপনাকে পূর্ণাঙ্গ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় নথির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত:
- আবেদন ফর্ম: অনলাইনে অথবা বিআরটিএ অফিস থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
- মেডিকেল সার্টিফিকেট: নিবন্ধিত ডাক্তার দ্বারা প্রদান করা।
- জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি।
- ফি পেমেন্ট রসিদ।
- পুলিশ রিপোর্ট: পেশাদার লাইসেন্সের জন্য প্রযোজ্য।
- ছবি: সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
বায়োমেট্রিক ডেটা ক্যাপচার: বিআরটিএ অফিসে গিয়েও আপনাকে বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান করতে হবে, যেখানে ডিজিটাল ছবি, স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া হবে।
৫. ড্রাইভিং পরীক্ষা
ফলস্বরূপ, আপনাকে বিভিন্ন পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে:
- লিখিত পরীক্ষা: ট্রাফিক আইন, সড়ক চিহ্ন ও নিরাপত্তা বিধিমালার উপর পরীক্ষা।
- মৌখিক পরীক্ষা: ড্রাইভিং নিয়মাবলী সম্পর্কিত মৌখিক পরীক্ষা।
- মাঠ পরীক্ষার: বাস্তব পরিবেশে ড্রাইভিং দক্ষতা প্রদর্শন করতে হবে।
৬. ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি
ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ফি বিভিন্ন ধরণের লাইসেন্সের উপর নির্ভর করে:
- লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স: এক ক্যাটাগরির জন্য 518 টাকা, দুই ক্যাটাগরির জন্য 748 টাকা।
- স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স: পেশাদার লাইসেন্স এর জন্য- ২৪২৭/-টাকা ও অপেশাদার লাইসেন্স এর জন্য- ৪১৫২/-টাকা
ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন প্রক্রিয়া
অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন
গ্রাহককে প্রথমে নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে। মেয়াদ উত্তীর্ণের ১৫ দিনের মধ্যে নবায়নের জন্য ফি ৪,২১২ টাকা, এবং ১৫ দিন পর থেকে প্রতি বছর ৫১৮ টাকা জরিমানা আরোপিত হয়। আবেদনপত্রের সাথে প্রয়োজনীয় নথিপত্র (যেমন, মেডিকেল সার্টিফিকেট এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি) যুক্ত করে BRTA অফিসে জমা দিতে হয়। আবেদনপত্র সঠিক থাকলে, একই দিনে গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) নেওয়া হয়। স্মার্ট কার্ড প্রস্তুত হলে গ্রাহককে এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হয়।
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন
পেশাদার লাইসেন্স নবায়নের জন্য প্রার্থীকে পুনরায় একটি ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর নির্ধারিত ফি (১৫ দিনের মধ্যে হলে ২,৪৮৭ টাকা এবং ১৫ দিন পর থেকে প্রতি বছর ৫১৮ টাকা জরিমানা সহ) প্রদান করতে হয়। প্রয়োজনীয় নথিপত্রসহ আবেদন BRTA-এর নির্দিষ্ট অফিসে জমা দিতে হয়। গ্রাহককে বায়োমেট্রিক্স তথ্য (ছবি, স্বাক্ষর, আঙ্গুলের ছাপ) দিতে হয়, এবং স্মার্ট কার্ড প্রস্তুত হলে তাকে এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হয়।
নবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র
- আবেদন ফর্ম
- রেজিস্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট (পেশাদার লাইসেন্সের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য)
- জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি
- ফি জমাদানের রশিদ
- ২ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি
ডুপ্লিকেট লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র
- আবেদন ফর্ম
- জিডির কপি ও ট্রাফিক ক্লিয়ারেন্স
- ফি জমাদানের রশিদ
- সদ্য তোলা ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি
এই প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র সরবরাহ করে ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন বা ডুপ্লিকেট লাইসেন্স প্রাপ্তি সম্ভব।
বাংলাদেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়া সঠিকভাবে অনুসরণ করা হলে এটি অনেক সহজ হয়ে যায়। বিভিন্ন ধাপ, প্রয়োজনীয় নথি, এবং ফি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আপনার জন্য প্রয়োজনীয় হবে। সকল তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করে এবং বিআরটিএ’র নিয়মাবলী অনুসরণ করলে আপনি আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স সহজেই অর্জন করতে পারবেন।