মাস্কের ডিজিটাল পদক্ষেপের ফলে মার্কিন সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থায় নতুন পরিবর্তনের সূচনা তৈরি হয়েছে। এর ফলে, সরকারী কাজকর্মে প্রযুক্তির ভূমিকা ও নির্ভরশীলতা আরও বেড়ে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে জানা গেছে, মাস্ক ও তার সহযোগীরা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আইটি কাঠামোর মধ্যে ঢুকে পড়েছেন। তারা ট্রেজারি বিভাগের পেমেন্ট সিস্টেমে প্রবেশাধিকার অর্জন করেছে এবং কর্মচারীদের জন্য বিশেষ প্রস্তাব তৈরি করতে অফিস অফ পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট (OPM) এর নিয়ন্ত্রণে কিছুটা প্রভাব বিস্তার করেছে। এমনকি, কিছু ফেডারেল কর্মকর্তার মতে, DOGE-এর কাছে ছাত্র ঋণ সম্পর্কিত তথ্যও পড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
মাস্কের এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো, দীর্ঘদিন যাবত জমে থাকা ও অনাবশ্যক সরকারের ব্যুরোক্রেসিকে কাটছাঁট করে আরো কার্যকর ও আধুনিক সরকার গঠন করা। যাইহোক, এই প্রক্রিয়া চলাকালে দেখা যাচ্ছে যে, প্রযুক্তির ওপর অতি নির্ভরশীলতা নতুন নতুন ঝুঁকি ও প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।
প্রাক্তন টেকনোলজি ট্রান্সফরমেশন সার্ভিসেস (TTS) এর পরিচালক অ্যন লুইস বলেছিলেন, “তারা আগে থেকেই ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে।” অর্থাৎ, ফেডারেল লেনদেনের ডেটা যেখানে বেশি, সেইখানে তাদের কার্যক্রম কেন্দ্রীভূত করা এক কৌশলগত সিদ্ধান্ত ছিল। মাস্কের এই ডিজিটাল অভিযানটি মূলত ওয়াশিংটনের ঐতিহ্যবাহী প্রক্রিয়া বদলে দিয়ে প্রযুক্তির সাহায্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের নতুন সিস্টেম যোগ করার প্রচেষ্টা।
মাস্কের উদ্যোগের একটি প্রধান অংশ হল DOGE। এটি মূলত ইউএসডিএস (US Digital Service) এর নতুন রূপান্তরিত ভার্সন। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন এই ডিপার্টমেন্ট প্রতিষ্ঠা করেন, তখন তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতির DOGE এজেন্ডা অনুযায়ী ফেডারেল প্রযুক্তি আধুনিকীকরণ করা হবে।” এর অর্থ হচ্ছে, প্রযুক্তি ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকারী কার্যক্রমকে আরও দক্ষ ও উৎপাদনশীল করা হবে। তবে, বাস্তবে DOGE এর কার্যক্রম অনেকের মতে, মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে গিয়ে রাজনৈতিক ও আদর্শগত দিকনির্দেশনার দিকে মোড় নেয়।
She comes to me on this day of my DOGE’s wedding and makes these demands.
But does she call me The DOGEfather? Is she even a friend?
Buona sera, buono sera … https://t.co/fTW3SaN9mL
— Elon Musk (@elonmusk) February 5, 2025
DOGE এর বিজ্ঞাপনে দেখা যায় যে, এটির লক্ষ্য হল বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি (DEI) সম্পর্কিত প্রোগ্রামগুলিকে বাদ দেওয়া। কিছু অভিজ্ঞ সরকারী কর্মকর্তা এ কথাটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, প্রযুক্তিগত নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সরাসরি সরকারী কোডে হস্তক্ষেপ করা ও পেমেন্ট সিস্টেমে পরিবর্তন আনা স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে অনেকটাই আলাদা এবং বিপজ্জনক।
তাদের মধ্যে একজন, রবার্ট গর্ডন, যিনি প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রশাসনে কাজ করেছিলেন, বলেন, “সাধারণভাবে রাজনৈতিক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমন কার্যক্রম থেকে নিজেদের দূরে রাখেন।” গর্ডনের মতে, এমন ক্ষমতা হাতে থাকলে শুধুমাত্র বিশেষ পরিস্থিতিতে দেখা যেতে পারে, কিন্তু সরাসরি কোড এডিট করে পেমেন্ট সিস্টেমে হস্তক্ষেপ করা একেবারে অস্বাভাবিক।
আন লুইস আরও জানান, DOGE যখন USDS এবং TTS এর সাথে মিলিত হচ্ছে, তখন এতে ফেডারেল সরকারের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের দক্ষতা ও জ্ঞানের সদ্ব্যবহার করে আরও বড় ধরনের ডিজিটাল পরিবর্তন আনা সম্ভব। তিনি বলেন, “এই দুইটি সংস্থা ফেডারেল সরকারের মধ্যে অনেক পুরানো ব্যক্তিগত খাতের টেক ট্যালেন্টকে ধারণ করে।” এর ফলে, DOGE পরবর্তীতে GSA (General Services Administration) এর সহায়তায় আরও বিস্তৃত প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনতে পারে।
কয়েকটি মামলা ও অভিযোগও উঠেছে, যেখানে অভিযোগ করা হয়েছে যে, মাস্কের সহযোগীরা OPM-এ একটি ব্যক্তিগত ইমেইল সার্ভার ইনস্টল করে ফেডারেল কর্মচারীদের সরাসরি ইমেইল প্রেরণ করেছেন। DOGE এর মুখপাত্র কেটি মিলার এই অভিযোগ অস্বীকার করে এবং বলেন, “এমন কোনো অবৈধ কাজ হয়নি।” তবে, এই ধরনের অভিযোগ ফেডারেল আইটি নিরাপত্তা ও সাইবারসিকিউরিটির প্রশ্নে আরও আলোড়ন তৈরি করছে।
মাস্কের এই নতুন ডিজিটাল অভিযানে, তিনি দেখিয়েছেন যে, আধুনিক প্রযুক্তি ও সফটওয়্যারের সাহায্যে সরকারকে কত দ্রুত এবং কার্যকরভাবে পরিচালনা করা যেতে পারে। তবে, অন্যদিকে, কিছু অভিজ্ঞ প্রশাসনিক কর্মকর্তা এই ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা মনে করেন, সরাসরি প্রযুক্তিগত নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব সম্ভাব্য ঝুঁকি ও আইনি দিকগুলি সুক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করা উচিত।
সর্বোপরি, এই ডিজিটাল পদক্ষেপের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সরকারী কার্যক্রমে নতুন ধরনের ক্ষমতা সঞ্চার হচ্ছে। কিন্তু, এর সাথে যুক্ত হচ্ছে নিরাপত্তা, আইনী ও নৈতিক প্রশ্নও। যদি এসব বিষয়ে স্পষ্ট ও নির্ভুল ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের পদক্ষেপের ফলাফল বিপজ্জনক হতে পারে।