ইলন মাস্ক এবং ওপেনএআই এর মধ্যে দ্বন্দ্ব

ইলন মাস্ক এবং ওপেনএআই-এর মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব প্রযুক্তি দুনিয়ায় বড় আলোচনার বিষয়। মাস্কের নেতৃত্বাধীন টিম সম্প্রতি ওপেনএআই এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে একটি প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা দায়ের করেছে। এই মামলাটি তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম এবং ওপেনএআই-এর নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, যেখানে মাস্ক এবং তার আইনজীবীরা ওপেনএআই-এর করপোরেট রূপান্তর এবং বিভিন্ন কার্যক্রমকে অবৈধ বলে দাবি করেছেন।

ইলন মাস্কের দাবির মধ্যে প্রধান যে বিষয়টি উঠে এসেছে তা হলো ওপেনএআই-এর মুনাফাভিত্তিক রূপান্তর এবং এর কার্যক্রমগুলোতে প্রতিযোগিতামূলকভাবে অগ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়ার অভিযোগ। মাস্কের আইনজীবীরা দাবি করছেন যে, ওপেনএআই এবং এর প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান, প্রেসিডেন্ট গ্রেগ ব্রকম্যান এবং মাইক্রোসফট ও অন্যান্য সহযোগীরা প্রতিযোগিতা কমাতে এবং নিজের স্বার্থে কাজ করছে। এদের বিরুদ্ধে মামলার মূল অভিযোগগুলো মধ্যে রয়েছে বিনিয়োগকারীদের ওপেনএআই-এর প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থাগুলোতে বিনিয়োগ করতে নিরুৎসাহিত করা এবং ব্যবসায়িক সুবিধা পেতে অন্যদের সাথে অবৈধ লেনদেন।

আরও পড়ুনঃ ইলন মাস্ক ও বিবেক রামাস্বামীর নেতৃত্বে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন DOGE নিয়ে উদ্যোগ

এই মামলার পেছনে থাকা মূল কারণ হলো, ওপেনএআই তার প্রতিষ্ঠার সময় একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে শুরু করেছিল, যেখানে ইলন মাস্ক ও অন্যান্য সহ-প্রতিষ্ঠাতারা এটিকে মানবকল্যাণে নিয়োজিত একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্যে কাজ করছিলেন। তবে, ২০১৯ সালে ওপেনএআই তাদের কাঠামো পরিবর্তন করে মুনাফার ভিত্তিতে পরিচালিত একটি শাখা প্রতিষ্ঠা করে। এই পরিবর্তন নিয়ে মাস্ক এবং তার দলের আইনজীবীরা মনে করছেন যে ওপেনএআই তাদের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসেছে এবং মানবকল্যাণের উদ্দেশ্যকে ভুলে গেছে।

মাস্কের অভিযোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, ওপেনএআই এবং মাইক্রোসফটের মধ্যে অগোচরে কিছু সংবেদনশীল তথ্য ভাগাভাগি করার বিষয়টি। মাইক্রোসফটের সঙ্গে ওপেনএআই-এর গভীর সম্পর্ক রয়েছে এবং এটি ওপেনএআই-এর গবেষণাকে সমর্থন করতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। মাইক্রোসফট ওপেনএআই-কে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে এবং তাদের ক্লাউড প্রযুক্তি ব্যবহার করতে দিয়েছে, যা ওপেনএআই-কে শক্তিশালী এআই মডেল তৈরি করতে সাহায্য করেছে। মাস্কের আইনজীবীরা এই বিষয়ে অভিযোগ তুলেছেন যে, মাইক্রোসফটের সাথে ওপেনএআই-এর এই সম্পর্কের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা নেওয়া হচ্ছে।

অন্য একটি উল্লেখযোগ্য অভিযোগ হলো, ওপেনএআই এর কিছু বিনিয়োগকারীদের প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থাগুলোর, যেমন মাস্কের xAI-এর মতো সংস্থায় বিনিয়োগ না করার জন্য বাধ্য করা হয়েছে। এর ফলে প্রতিযোগিতামূলক বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং xAI-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যাপ্ত তহবিল পেতে ব্যর্থ হচ্ছে। যদিও সম্প্রতি xAI একটি বড় তহবিল সংগ্রহ করেছে, তবুও মাস্কের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে ওপেনএআই-এর কারণে তাদের তহবিল সংগ্রহের প্রক্রিয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

ইলন মাস্ক এর আগে ওপেনএআই-এ প্রায় ৪৪ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছিলেন। তিনি দাবি করছেন যে এই অনুদানের উদ্দেশ্য ছিল একটি ন্যায়পরায়ণ এবং সবার জন্য উপলব্ধ এআই তৈরি করা, তবে বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে ওপেনএআই সেই উদ্দেশ্য থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। মাস্কের দাবি, ওপেনএআই এখন একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে যা শুধুমাত্র নিজেদের লাভের জন্য কাজ করছে এবং মানবকল্যাণের কোন গুরুত্ব নেই।

মাস্কের দলের আইনজীবীরা আরও দাবি করেছেন যে, ওপেনএআই তার ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে নিজের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং কিছু লেনদেনে স্ব-সুবিধা অর্জনের প্রচেষ্টা করেছে। উদাহরণস্বরূপ, স্যাম অল্টম্যানের স্ট্রাইপের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে এবং তিনি সেই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ওপেনএআই-এর লেনদেন পরিচালনা করেছেন, যা স্ব-স্বার্থের সাথে সংশ্লিষ্ট। এই ধরনের স্বার্থের সংঘাতের কারণে ওপেনএআই-এর কার্যক্রমকে স্বচ্ছ বলা কঠিন।

মাস্কের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলা দাবি করছে যে ওপেনএআই তার মূল অলাভজনক কাঠামো পুনরুদ্ধার করতে হবে এবং নতুন কোন মুনাফাভিত্তিক পরিবর্তন আনার আগেই সেটি থামিয়ে দিতে হবে। মাস্কের আইনজীবীরা মনে করছেন যে, যদি আদালত এই নিষেধাজ্ঞা না দেন, তবে ওপেনএআই-এর বর্তমান কাঠামো নিয়ে ভবিষ্যতে আর কোন পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে না এবং প্রতিষ্ঠানটির প্রতিযোগিতামূলক ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ওপেনএআই-এর এক মুখপাত্র এই মামলাকে মাস্কের ‘চতুর্থ প্রচেষ্টা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন যে এটি পুনরায় একই ভিত্তিহীন অভিযোগ নিয়ে এসেছে। তারা এই মামলাকে ‘অসার’ এবং ‘বিনোদনমূলক’ বলে দাবি করেছেন এবং আদালতে এটি বাতিল করার জন্য আগেও আবেদন করেছিলেন।

এই পরিস্থিতি প্রযুক্তি দুনিয়ার জন্য একটি বড় প্রশ্ন হিসেবে দাঁড়িয়েছে। ওপেনএআই এবং ইলন মাস্ক, উভয়েই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু এই ধরনের বিবাদ এবং মামলা-মোকদ্দমা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎ উন্নয়নে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। যেখানে মাস্ক দাবি করছেন যে ওপেনএআই তার মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে এসেছে, সেখানে ওপেনএআই দাবি করছে যে তারা এখনও তাদের মিশনের প্রতি অনুগত। এই পরিস্থিতিতে আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে এবং এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎ গঠন করতে পারে।

এই মামলার চূড়ান্ত ফলাফল কেমন হবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, এই ধরনের ঘটনা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ এবং এর ব্যবহার নিয়ে মানুষের মধ্যে আরো বেশি সচেতনতা সৃষ্টি করছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি যা মানবজাতির উপকারে ব্যবহার করা যেতে পারে, কিন্তু সঠিক নিয়ন্ত্রণ এবং স্বচ্ছতার অভাবে এটি বিপর্যয়ও আনতে পারে। মাস্কের উদ্যোগ এবং ওপেনএআই-এর বর্তমান কর্মকাণ্ড এই বিষয়গুলোকে নিয়ে গভীরভাবে ভাবার সময় এনে দিয়েছে।

ওপেনএআই এর নতুন সার্চ ফিচার : গুগল এবং মাইক্রোসফট বিং-এর সাথে হবে প্রতিযোগিতা

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
instagram Group Join Now

সাম্প্রতিক খবর

.আরো