নাসা সম্প্রতি তাদের অন্যতম প্রধান মিশন ‘Europa Clipper‘ কে মহাকাশে প্রেরণ করেছে, যার মূল লক্ষ্য হলো বৃহস্পতি গ্রহের বরফে আবৃত উপগ্রহ ইউরোপা সম্পর্কে আরও গভীরভাবে অনুসন্ধান করা। এই মিশনের প্রধান উদ্দেশ্য হলো ইউরোপার বরফাচ্ছাদিত পৃষ্ঠের নীচে যে তরল পানির মহাসাগর আছে বলে ধারণা করা হয়, সেটির সম্ভাব্য বাসযোগ্যতা নির্ণয় করা। ইউরোপার এই মহাসাগরটি জীবনের উপাদান ধারণ করতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা, এবং এই মিশনের মাধ্যমে সেটি যাচাই করা হবে।
Europa Clipper নামের এই মহাকাশযানটি স্পেসএক্সের ফ্যালকন হেভি রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা হয়। এই রকেটটি ১২:০৬ PM EDT-তে (১৬:০৬ UTC) কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে যাত্রা শুরু করে। মহাকাশযানটি উৎক্ষেপণের সময় পৃথিবী থেকে ২৮,৩৬৪ mph গতিতে অগ্রসর হয়। এই যাত্রার শেষে, ২০৩০ সালে ইউরোপার কক্ষপথে প্রবেশ করবে, যেখানে সেটি ৪৯ বার কাছাকাছি দিয়ে ইউরোপার উপগ্রহের বিভিন্ন অংশ অনুসন্ধান করবে। তবে মহাকাশযানটি ইউরোপার উপর অবতরণ করবে না, বরং সেটি ইউরোপার পৃষ্ঠের প্রায় ২৫ কিলোমিটার উপরে উড়ে যাবে, যা প্রায় ১৬ মাইল।
আরও পড়ুনঃ আবারো স্পেসএক্স-এর নতুন সাফল্য: ফিরে আসা রকেটকে শূণ্যেই ধরে ফেলল
ইউরোপা ক্লিপার মিশনটি ৫.২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে পরিচালিত হচ্ছে, যা নাসার ইতিহাসে অন্যতম ব্যয়বহুল গ্রহীয় বিজ্ঞান মিশন। মহাকাশযানটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর দুটি বৃহৎ সৌর প্যানেল, যেগুলো সূর্যের আলোকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করবে, কারণ বৃহস্পতির আশেপাশে সূর্যের আলো পৃথিবীর তুলনায় পাঁচগুণ কম শক্তিশালী।
ইউরোপা ক্লিপার বহন করছে অত্যাধুনিক ৯টি বৈজ্ঞানিক যন্ত্র, যার মধ্যে রয়েছে এক্স-রে এবং ম্যাস স্পেকট্রোমিটার, যা ইউরোপার পৃষ্ঠের রাসায়নিক উপাদান বিশ্লেষণ করবে এবং বরফের নীচে লুকানো মহাসাগরের গঠন এবং গভীরতা নির্ধারণ করবে। এছাড়াও, এই মহাকাশযানটি ইউরোপার পৃষ্ঠে কোনো উষ্ণ স্থান বা পানির প্লুম থাকলে সেটিও সনাক্ত করতে পারবে।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন যে ইউরোপার মহাসাগরের গভীরতা প্রায় ৬০ থেকে ৮০ মাইল হতে পারে এবং এর বরফের স্তর প্রায় ১০ থেকে ২০ মাইল পুরু। এই গঠন পৃথিবীর গভীর মহাসাগরগুলোর সঙ্গে তুলনীয়, যেখানে জল এবং শিলা স্তরের সংযোগস্থলে হাইড্রোথার্মাল ভেন্ট পাওয়া যায়। এমনই সম্ভাবনা আছে যে ইউরোপার মহাসাগরের নীচেও এমন হাইড্রোথার্মাল ভেন্ট থাকতে পারে, যা জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপন্ন করে।
যদিও ইউরোপা ক্লিপার সরাসরি জীবনের সন্ধান করবে না, তবে এর বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ইউরোপার পৃষ্ঠের উপাদান বিশ্লেষণ করে সেখানকার পরিবেশ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করবে। ইউরোপার পৃষ্ঠে তেজস্ক্রিয়তার কারণে কোনো জীবনধারণ সম্ভব নয় বলে ধারণা করা হয়, তাই জীবনের সন্ধান করা হলে সেটি পৃষ্ঠের নিচে পানির গভীরে হতে পারে।
এই মিশনটির আরেকটি লক্ষ হলো ভবিষ্যতের একটি ল্যান্ডার মিশনের জন্য সম্ভাব্য অবতরণের স্থান নির্ধারণ করা। ইউরোপার পৃষ্ঠে কোথায় একটি ল্যান্ডার নিরাপদভাবে অবতরণ করতে পারবে এবং সেখানে কোন ধরনের বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান চালানো সম্ভব তা নির্ধারণ করাও এই মিশনের একটি লক্ষ্য।
বিশ্বের প্রথম বিলাসবহুল মহাকাশ স্টেশন, দেখতে প্রায় একটি ফাইভ স্টার হোটেলের মতো