রোবটিক্সের জগতে প্রতিনিয়ত নতুন উদ্ভাবন দেখা যাচ্ছে, আর এরই ধারাবাহিকতায় ক্লোন রোবোটিক্স নামে একটি স্টার্টআপ তৈরি করেছে এক ভয়ঙ্কর দেখতে রোবট, যার নাম “প্রোটোক্লোন”। এটি একটি দ্বিপদী (দুই পায়ে চলতে সক্ষম) এবং পেশিভিত্তিক রোবট, যা সাধারণ রোবট থেকে অনেকটাই আলাদা। কিন্তু এই রোবটের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর চেহারা ও গতিবিধি, যা অনেকের কাছেই অস্বাভাবিক ও আতঙ্কজনক মনে হয়।
সম্প্রতি প্রোটোক্লোন-এর একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে দেখা যায়, এটি কৃত্রিম মাংসপেশি দিয়ে তৈরি একটি কাঠামোর মতো, যার গতিবিধি একদিকে খুবই জৈবিক মনে হলেও অন্যদিকে কিছুটা অস্বাভাবিক ও অপ্রাকৃতিক। রোবটটি মুখবিহীন এবং শরীরের গঠন অনেকটা মানুষের মতো হলেও সেটির নড়াচড়া যেন একটি মৃতদেহ জীবিত হওয়ার চেষ্টা করছে—এমন অনুভূতি সৃষ্টি করে।
এই রোবট তৈরি করা হয়েছে ক্লোন রোবোটিক্স-এর বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এটি ১০০০টিরও বেশি কৃত্রিম মাংসপেশির সমন্বয়ে তৈরি, যা মায়োফাইবার নামে পরিচিত। এই পেশিগুলো সাধারণ রোবটের মোটর ও কঠিন জয়েন্টের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়েছে, যাতে এটি মানুষের মতো স্বাভাবিকভাবে নড়াচড়া করতে পারে। এছাড়াও এতে রয়েছে একটি হাইড্রোলিক ব্যবস্থা, যা মানুষের রক্তনালীর মতো কাজ করে এবং শক্তি প্রবাহিত করে কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোর দিকে।
কিন্তু বড় প্রশ্ন হলো, এই প্রযুক্তি কতটা কার্যকরী? এখন পর্যন্ত প্রোটোক্লোন শুধুমাত্র হাত-পা নাড়ানোর কাজই করতে পেরেছে, সেটিকে দিয়ে কোনো বাস্তব কাজ করানো সম্ভব হয়নি। যদিও ক্লোন রোবোটিক্স দাবি করছে, এটি কেবল তাদের গবেষণার প্রাথমিক ধাপ, এবং ভবিষ্যতে আরও উন্নত সংস্করণ তৈরি করা হবে, যা বাস্তব জীবনে ব্যবহার করা যাবে।
অনেকে মনে করছেন, রোবটটি মূলত মানুষের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এর অস্বাভাবিক চেহারা ও গতিবিধির কারণে এটি ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কেউ কেউ বলছেন, এটি একটি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা যা ভুল পথে চলে গেছে, আবার কেউ মনে করছেন এটি প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ।
ক্লোন রোবোটিক্স ঘোষণা করেছে যে, তারা প্রোটোক্লোন-এর একটি উন্নত সংস্করণ বাজারে আনার পরিকল্পনা করছে, যার নাম হবে “ক্লোন আলফা”। এটি এমনভাবে ডিজাইন করা হবে যাতে এটি বাড়ির বিভিন্ন কাজ করতে পারে। তবে অনেকেই কল্পনা করছেন, যদি মুখবিহীন এই অস্বাভাবিক রোবটটি রাতে বাসায় হাঁটতে শুরু করে, তাহলে সেটা সত্যিই ভীতিকর হবে।
এই রোবট সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামতও মিশ্র। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, কৃত্রিম মাংসপেশি ব্যবহার করে রোবট তৈরি করা একটি বড় প্রযুক্তিগত অর্জন, তবে সেটি কতটা কার্যকরী হবে, তা এখনো প্রমাণিত হয়নি। পেশিভিত্তিক রোবটের ধারণা নতুন নয়, কিন্তু ক্লোন রোবোটিক্স এটিকে কিছুটা ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছে।
বর্তমানে প্রোটোক্লোন শুধু একটি পরীক্ষামূলক মডেল, তাই এটি মানুষের কাজে লাগবে কি না, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে ক্লোন রোবোটিক্স যদি তাদের দাবি অনুযায়ী উন্নত সংস্করণ তৈরি করতে পারে, তাহলে ভবিষ্যতে এটি বিভিন্ন কাজের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, মানুষ কি সত্যিই এমন একটি রোবট চায়, যা দেখতে প্রায় মানুষের মতো কিন্তু আচরণে সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক? প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে রোবটিক্সের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে, তা সময়ই বলে দেবে।
জাপানের গবেষকরা রোবটের মুখের অভিব্যক্তি প্রকাশের নুতন পদ্ধতি খুঁজে পেয়েছেন