গুগল সম্প্রতি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এর সাথে একটি চুক্তি করেছে, যা তাদের জেমিনি নামে পরিচিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাটবটের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের আপডেটেড সংবাদ সরবরাহ করবে। এই চুক্তি গুগলের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ, কারণ এটি প্রথমবার কোনো সংবাদ প্রকাশকের সাথে এ ধরনের সহযোগিতা গড়ে তুলেছে। গুগল বুধবার একটি ব্লগ পোস্টে এই চুক্তির কথা জানিয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, এপি এখন থেকে জেমিনি এআই চ্যাটবট অ্যাপ্লিকেশনে রিয়াল টাইম তথ্য সরবরাহ করবে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য উপস্থাপিত ফলাফলগুলোর কার্যকারিতা আরও উন্নত করবে।
এপি-এর প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা, ক্রিস্টিন হাইটম্যান, এই অংশীদারিত্বকে গুগলের সাথে তাদের দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের একটি অংশ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “গুগল এপি-এর সাংবাদিকতার মান এবং নিরপেক্ষ রিপোর্টিং-এর প্রতিশ্রুতি উপলব্ধি করেছে, যা তাদের জেনারেটিভ এআই পণ্যের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ।” তবে, গুগল বা এপি কেউই এই চুক্তির আর্থিক শর্তাবলী প্রকাশ করেনি।
আরও পড়ুনঃ গুগলের নতুন নিরাপত্তা নীতিমালায় কি কি থাকছে জেনে নিন
গুগলের জেমিনি, যা আগে বার্ড নামে পরিচিত ছিল, মূলত একটি জেনারেটিভ এআই টুল যা নথি তৈরি, ছবি তৈরি, প্রোগ্রামিং কোড সহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। এ ধরনের প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। একই সময়ে, এআই কোম্পানিগুলো সংবাদমাধ্যমের সামগ্রী ব্যবহার করে তাদের মডেল উন্নত করছে। ২০২৩ সালে এপি ওপেনএআই-এর সাথেও একটি চুক্তি করে, যেখানে ওপেনএআই তাদের আর্কাইভে থাকা সংবাদগুলি লাইসেন্স করতে পারে। তবে সেই চুক্তির আর্থিক দিকটিও অপ্রকাশিত থেকে যায়।
সংবাদমাধ্যমগুলো এআই কোম্পানিগুলোর সাথে কাজ করার সময় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। অনেক সংবাদ সংস্থা এআই-এর মাধ্যমে তাদের সামগ্রী বিনা অনুমতিতে ব্যবহার হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। তারা মনে করে, এআই মডেল তাদের সংবাদ উপাদান ব্যবহার করে মুনাফা অর্জন করছে, অথচ সেই মুনাফার অংশ তারা পাচ্ছে না। এ কারণে, নিউইয়র্ক টাইমস এবং অন্যান্য সংবাদ সংস্থাগুলো এআই কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কপিরাইট লঙ্ঘনের মামলা করেছে।
এ ধরনের চুক্তি সংবাদমাধ্যমগুলোর জন্য আর্থিকভাবে সহায়ক হলেও এর কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক পলিসি ইনস্টিটিউটের পরিচালক সারা ক্রেপস বলেন, “যদিও এ ধরনের চুক্তি সংবাদমাধ্যমগুলোর রাজস্ব বাড়াতে সাহায্য করতে পারে, তবে এটি তাদের স্বাধীনতা কমিয়ে দিতে পারে। তারা তাদের মূল্যবান সামগ্রী প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর কাছে ছেড়ে দিয়ে নিজেদের উপর নিয়ন্ত্রণ হারানোর ঝুঁকিতে পড়ে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, এ ধরনের অংশীদারিত্ব সংবাদমাধ্যমগুলোকে সরাসরি পাঠকদের সাথে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ার পরিবর্তে তাদের সামগ্রীকে পণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
আরও পড়ুনঃ এক্সএআই এর গ্রোক চ্যাটবটটি এখন ফ্রি ভার্সনে পাওয়া যাচ্ছে
প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো যুক্তি দিয়েছে যে, ইন্টারনেটে উপলব্ধ টেক্সট এআই মডেল শিখতে ব্যবহৃত হলে সেটি মার্কিন কপিরাইট আইনের অধীনে “ফেয়ার ইউজ” হিসেবে গণ্য হওয়া উচিত। তবে, বিভিন্ন আইনি চ্যালেঞ্জ এবং এআই মডেলগুলোর ভুল তথ্য সরবরাহ করার প্রবণতা (যাকে “হ্যালুসিনেশন” বলা হয়) তাদেরকে উচ্চ-মানের তথ্য উৎস লাইসেন্স করতে উৎসাহিত করেছে।
গুগল এবং এপি-এর মধ্যে এই অংশীদারিত্ব এ ধরনের চুক্তির একটি উদাহরণ, যা ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে। এপি এরই মধ্যে তাদের সংবাদ সামগ্রী সরবরাহ করে আয় বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তারা সরাসরি গ্রাহকদের জন্য এপিনিউজ ডটকমের মাধ্যমে খবর, ছবি, ভিডিও এবং অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করে। তবে তাদের আয়ের একটি বড় অংশ আসে সংবাদমাধ্যম সংস্থাগুলোর কাছে তাদের সাংবাদিকতা বিক্রির মাধ্যমে।
এপি সম্প্রতি রাজস্ব ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, কারণ তারা গ্যানেট এবং ম্যাকক্ল্যাচি, দুটি বড় মার্কিন সংবাদপত্র প্রকাশক প্রতিষ্ঠান, হারিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, এ ধরনের প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্ব তাদের আয়ের ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
এপি এবং গুগলের মধ্যে এই অংশীদারিত্ব কেবল একটি আর্থিক চুক্তি নয়; এটি এআই এবং সংবাদমাধ্যমের মধ্যে সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। এটি যেমন সংবাদমাধ্যমগুলোর জন্য আর্থিক সহায়তা এনে দিতে পারে, তেমনি তাদের স্বাধীনতা এবং স্বকীয়তার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। পাঠকদের জন্য এটি একটি ইতিবাচক দিক হতে পারে, কারণ এটি আরও নির্ভুল এবং উচ্চ-মানের তথ্য সরবরাহ করবে। তবে, দীর্ঘমেয়াদে এই অংশীদারিত্ব কীভাবে সংবাদ জগতে পরিবর্তন আনবে, তা সময়ই বলে দেবে।