গুগল ডিপমাইন্ডের নতুন উদ্ভাবন “জেমিনি রোবোটিক্স” এবং “জেমিনি রোবোটিক্স-ইআর” রোবটিক্স প্রযুক্তির উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেলগুলো রোবটকে আরও স্মার্ট, দক্ষ ও বাস্তব পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করবে।
জেমিনি রোবোটিক্স মূলত একটি “ভিশন-ল্যাঙ্গুয়েজ-অ্যাকশন” মডেল, যা রোবটকে নতুন পরিস্থিতি বুঝতে এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম করে। এটি রোবটের গতিশীলতা, সূক্ষ্ম কাজের দক্ষতা এবং মানুষের সাথে যোগাযোগের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। আগে যেখানে রোবটকে নির্দিষ্ট কাজের জন্য প্রশিক্ষিত করা হতো, সেখানে এই মডেল রোবটকে অপ্রত্যাশিত পরিবেশেও কার্যকরভাবে কাজ করতে সাহায্য করবে। ক্যারোলিনা পারাডা, গুগল ডিপমাইন্ডের রোবোটিক্স বিভাগের প্রধান, বলেন, “আমরা একটি একক মডেলের মাধ্যমে সাধারণতা, ইন্টারঅ্যাক্টিভিটি এবং দক্ষতার উন্নতি করছি, যা রোবটের কার্যক্ষমতা বহুগুণে বাড়িয়ে তুলবে।”
জেমিনি রোবোটিক্সের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি নতুন পরিবেশকে দ্রুত বুঝতে পারে, মানুষের সাথে স্বাভাবিকভাবে যোগাযোগ করতে পারে এবং সূক্ষ্ম কাজ দক্ষতার সঙ্গে সম্পাদন করতে পারে, যেমন কাগজ ভাঁজ করা বা বোতলের ঢাকনা খোলা। এতদিন পর্যন্ত সূক্ষ্ম ও নির্ভুল কাজের ক্ষেত্রে রোবটের সীমাবদ্ধতা ছিল, যা এই মডেল দূর করতে পারবে।
এর পাশাপাশি গুগল ডিপমাইন্ড “জেমিনি রোবোটিক্স-ইআর” ও লঞ্চ করেছে, যা যুক্তিসঙ্গত চিন্তাভাবনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। এটি রোবটকে বাস্তব জীবনের জটিল কাজগুলো সম্পাদনে সাহায্য করবে। যেমন, একটি লাঞ্চবক্স প্যাক করার সময় জানতে হবে কোন আইটেম কোথায় রাখা আছে, লাঞ্চবক্স কীভাবে খুলতে হয়, আইটেম কীভাবে ধরা উচিত এবং কোথায় রাখতে হবে। এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা রোবটের বাস্তব ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
রোবটের স্বায়ত্তশাসন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। গুগল ডিপমাইন্ড একটি স্তরভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করছে, যাতে রোবট কোনো অনিরাপদ কাজ না করে। বিকাশ সিন্ধওয়ানি, গুগল ডিপমাইন্ডের এক গবেষক, বলেন, “আমরা এমন একটি মডেল তৈরি করছি, যা রোবটকে নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে যে, কোনো কাজ নিরাপদ কি না।” এছাড়া, “রোবট কনস্টিটিউশন” নামে একটি নীতিমালা চালু করা হয়েছে, যা রোবোটিক্স প্রযুক্তির নিরাপদ ব্যবহারে সহায়তা করবে।
গুগল ডিপমাইন্ড বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছে, যাতে এই উন্নত মডেলগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যায়। এর মধ্যে রয়েছে অ্যাপট্রোনিক, অ্যাজাইল রোবটস, অ্যাজিলিটি রোবটিক্স, বোস্টন ডায়নামিক্স এবং এনচ্যান্টেড টুলস। এই অংশীদারিত্বের লক্ষ্য হলো রোবটগুলোর বাস্তব জীবনের কার্যক্ষমতা বাড়ানো এবং তাদের দৈনন্দিন কাজে আরও কার্যকরী করে তোলা।
এই নতুন উদ্ভাবন রোবটিক্স প্রযুক্তির একটি বড় অগ্রগতি। এগুলোর মাধ্যমে রোবট আরও স্মার্ট, দক্ষ এবং স্বায়ত্তশাসিত হয়ে উঠবে। প্রযুক্তির এই উন্নয়ন ভবিষ্যতে রোবোটিক্স ব্যবহারের ক্ষেত্রকে আরও বিস্তৃত করবে, যা মানুষের জীবনকে আরও সহজ ও কার্যকর করে তুলবে।